২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ৯:৩৪

চট্টগ্রামে সড়কজুড়ে জলাবদ্ধতার ক্ষত

টানা বৃষ্টি আর জোয়ারে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ কমলেও চট্টগ্রাম নগরবাসীর নতুন সমস্যা ক্ষতবিক্ষত সড়ক। নগরীর এক হাজার ১৭৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩৫২ কিলোমিটার সড়কই এখন বেহাল। কিছুদিন পানি জমে থাকায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে এসব সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। আর ওই গর্তের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। সৃষ্টি হচ্ছে নগরজুড়ে যানজট। সিটি করপোরেশনের (চসিক) নিজস্ব তহবিল থেকে এ জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত হলেও প্রকৌশলীরা বলছেন, এবার বর্ষার শুরুতেই যেভাবে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে অনেক বেশি টাকা খরচ হবে। এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, মানসম্পন্ন বিটুমিন ব্যবহার না করা ও নিম্নমানের কাজের কারণেই অল্পতেই ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে সড়ক।

চসিক সূত্র জানায়, করপোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডে রাস্তা রয়েছে এক হাজার ১৭৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক, প্রায় ২০০ কিলোমিটার সিমেন্ট ঢালাই দেওয়া। কিছু সড়ক ইট কার্পেটিং, বাকি সব কাঁচা সড়ক। বর্ষা শুরুর পর মাত্র কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার পিচঢালা সড়কের অধিকাংশ নষ্ট হয়েছে।


এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নগরীর উত্তর-পূর্ব প্রান্তের শিল্প এলাকা সংলগ্ন বহদ্দারহাট-কালুরঘাট এলাকার আরাকান সড়কের প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ, দক্ষিণ প্রান্তের বিমানবন্দর ও বন্দর সংলগ্ন প্রধান সড়ক, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সড়ক, বহদ্দারহাট থেকে টাইগারপাস মোড় পর্যন্ত সিডি এভিনিউ, মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়ক, বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু সড়কের অংশ, জিইসি মোড় থেকে অলংকার হয়ে একে খান সড়ক, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বড়পুল, ছোটপুল, একসেস রোড, সরাইপাড়া, ওয়াপদা ও নয়াবাজার সড়ক। এর মধ্যে কোনো কোনো স্থানে রাস্তা দেবে গেছে, ধসে পড়েছে। নিউমার্কেট থেকে কদমতলী এবং জামালখান থেকে বিআরটিসি পর্যন্ত সড়কও বেহাল। এসব সড়কে বাস থেকে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন অনেকে। ইট-সুরকি উঠে গেছে বহদ্দারহাট সংলগ্ন এক কিলোমিটার সড়কে। আবার গর্ত দেখা গেছে কালুরঘাট সিঅ্যান্ডবি এলাকার সড়কেও।

কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'বর্ষার শুরুতেই রাস্তাঘাটের এই ভয়ঙ্কর অবস্থা, না জানি ভর মৌসুমে কপালে কী লেখা আছে।' বিআরটিসি এলাকার পরিবহন কর্মকর্তা মাসুদুল আলম বলেন, এই এলাকার রাস্তা সারা বছরই থাকে চলার অযোগ্য। শুষ্ক মৌসুমেও এ রাস্তায় চলা কঠিন। তার বাসা আগ্রাবাদ এলাকায়। কদমতলী দিয়ে হেঁটে যাওয়ারও অবস্থা নেই। তাকে প্রায় সময়ই বাধ্য হয়ে অনেক পথ ঘুরে মাদারবাড়ি-দেওয়াহাট হয়ে বাসায় পেঁৗছাতে হয়।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা সমকালকে জানান, মেয়র এক জরুরি বৈঠকে করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও করপোরেশনের পাঁচ ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তারা গত এক মাসে ৩০ শতাংশ (৩৫২ কিলোমিটার) সড়ক বেহাল হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। আনুমানিক ব্যয় নির্ধারণ করে ৫০০ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দের আবেদন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। মেয়র আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর খানাখন্দ ভরাট করার জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেন। তা সরাসরি

চসিকের তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম।

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ূয়া সমকালকে বলেন, এত অল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটের যে অবস্থা হয়েছে তা দেখলে নির্মাণ সামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই হয়। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা পানিতে ডুবে যাওয়া সড়ক দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভারী কাভার্ডভ্যান, স্টিল মিলের বিলেটবাহী যান ও বন্দরের অসংখ্য যানের বেপরোয়া চলাচলের কথা বলে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করছেন।

 

http://bangla.samakal.net/2017/08/02/313140