৩০ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৯:০৩

সাউথ বাংলা ব্যাংকে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

নতুন প্রজন্মের ব্যাংক সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের অন্ত নেই। একক ঋণগ্রহীতার সীমা লঙ্ঘন করে গ্রাহককে অতিরিক্ত ঋণ দেয়া, ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত না রাখা, বিভিন্ন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে অতিরিক্ত কর্তন করা, নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ব্যয় করা, খেলাপি ঋণের বিপরীতে স্থগিত সুদ আয় খাতে দেখানো ইত্যাদি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিদবেদনে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ৪৭টি শাখা পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে ব্যাংকটির বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা হয় এবং ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ১৬টি সুপারিশ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের মূলধনের ১৫ শতাংশ বেশি নগদে ঋণ দিতে পারবে না। গত বছর জুনে ব্যাংকটির মূলধন ছিল ৫১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী ব্যাংকটির একক ঋণগ্রহীতার সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৭৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কিন্তু ওই সময়ে ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক মেসার্স সিয়ার্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ছিল ৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অর্থাৎ একক ঋণগ্রহীতার সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা গুরুতর অনিয়ম হিসেবে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ২০১২ সালের ১৪ ও ১৫ নং সার্কুলারের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে পুনঃতফসিলকৃত ঋণে কোনো আদায় ছাড়াই ৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আয় খাতে নেয়া হয়েছে। এ কারণে আলোচ্য নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায়ে ব্যাংকটিকে ব্যাখ্যা দেয়ার সুপারিশ করা হয়। একই সাথে আলোচ্য আয় স্থগিত সুদ হিসেবে স্থানান্তরপূর্বক দালিলিক প্রমাণসহ বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
ব্যাংকটি গত বছরে ১৫৩টি ঋণ টেক ওভার করা হয়েছে। কিন্তু কিছু ঋণের মঞ্জুরিকৃত সীমা জামানত দ্বারা আচ্ছাদিত নেই। এ ছাড়া টেকওভারকৃত ঋণ হিসাবগুলোতে অতিরিক্ত সীমা মঞ্জুর করার ফলে ঋণ হিসাবগুলো অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে পরিদর্শন দলের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৮(২) ধারা মোতাবেক সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী, তার নিম্নতর দুই স্তর পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তাকে নিজ নিজ বাণিজ্যিক, আর্থিক, কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য ব্যবসার নাম ঠিকানা ও অন্যান্য বিবরণ এবং পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবরণ লিখিতভাবে পরিচালনা পর্ষদের নিকট দাখিল করার কথা। কিন্তু তা না করা ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৮(৬) ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৮(২) ধারা লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাংকটিকে তলবের সুপারিশ করা হয়েছে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক গত বছর বিভিন্ন প্রকার ঋণ হিসাব থেকে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ফি হিসেবে মোট ২৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা কেটে নিয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার লঙ্ঘন। বিআরপিডি সার্কুলারের নির্দেশনা লঙ্ঘনের জন্য ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা তলবের সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রে ব্যয়ের সীমা দেয়া আছে। কিন্তু সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে নতুন শাখা স্থাপনে প্রতি বর্গফুটে দেড় হাজার টাকার অতিরিক্ত খরচ এবং অন্যান্য কেনাকাটায় অতিরিক্ত ব্যয় করেছে। পরিদর্শন প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্যের দায়ে ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা তলবের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ দিকে পরিদর্শন প্রতিবেদনে বর্ণিত অনিয়মগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধসহ সম্পদের গুণগত মান বজায় রাখা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলারের নির্দেশনা যথাযথভাবে পরিপালনের বিষয়ে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার তৎপরতা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/239915