৩০ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৮:৪৫

চলতে ফিরতে দেখা

ক্রান্তিকালে ধুঁকছে বাংলাদেশ

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

ধারাবাহিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সমাজের ভেতরে প্রায় সব ইস্যুতে তীব্র মতবিরোধ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার, সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি আর টিকে থাকার লড়াইকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলেছে। এ রকম এক অনিশ্চিত পরিবেশে এক অনিশ্চিত নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার রোডম্যাপ ও ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজে। এ দিকে দেশে ও দেশের বাইরে যা ঘটছে, তা আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা বা তার চেয়েও খারাপ কিছুর কথা মনে করিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের কাছে সব কিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
পর্দার অন্তরালে আরো অনেক কিছুই ঘটছে। এ সপ্তাহে আমাদের রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান আলোচ্য ব্যক্তি ছিলেন না। শেখ হাসিনা তার দল ও পুলিশবাহিনী ব্যবহার করে তার সরকারের জন্য কেবল ধিক্কারই ডেকে এনেছেন। এমনকি প্রধান আলোচ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন না বেগম খালেদা জিয়াও। তার সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অবিরাম বলে যাচ্ছেন যে, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। প্রধান আলোচ্য ব্যক্তি ছিলেন সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সফর শেষে ঢাকায় ফিরলে তার দলের সমর্থকেরা তাকে বিমানবন্দরের রাস্তা আটকে ‘বিপুল’ সংবর্ধনা দেয়। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের নিশ্চয়তা দিয়েছে দিল্লি’। তারা এরশাদ ও জাতীয় পার্টির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছে। তিনি গর্ব করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে এবং এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’
এরশাদ আর যাই হোন, খুব একটা অল্পবুদ্ধির লোক নন। তা ছাড়া দিল্লি তার এই মন্তব্য সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তিনি এমন এক সময় এই গুপ্ত তথ্য ফাঁস করলেন, যার মাত্র চার মাস আগে গত এপ্রিলে দিল্লি ঢাকার সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্বাক্ষর করেছে। আর ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব করেছে। আরো ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চেয়েছে ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য। এটি দুই সশস্ত্রবাহিনীর একসঙ্গে কাজ করার উদ্যোগ।
আওয়ামী লীগের দিক থেকে দিল্লির এই মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনা এমন এক সময় ঘটল, যখন ভারতের আওয়ামী-বন্ধু রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ক্ষমতা থেকে একেবারে বিদায় নিলেন। এ থেকেও একটা হিসাব নিকাশ করা যায়। তা ছাড়া এটা তো দেখাই যাচ্ছে যে, বাংলাদেশকে নিয়ে দিল্লি, বেইজিং ও ওয়াশিংটনে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। সেই মেরুকরণের দিকে নজর রেখে, আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনগুলোর দিকে নজর দিতে পারি। আবার এটাও তো অস্বীকার করা যাবে না যে, শেখ হাসিনা সরকার এক বিশাল গর্তের সামনে বসে আছেন। তার সরকার বারবার ঘোষণা করেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে গেছে এবং খাদ্য রফতানির এ ক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু বন্যা আর ভূমিধসের বিপর্যয়ের পর সে গোমর ফাঁস হয়ে গেছে। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশে খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর খাদ্য আমদানির জন্য সরকার ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে। বাজারে মোটা চাল কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাঁড়িয়েছে, যা সারা দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর জাহাজে করে প্রধানত ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। সরকার চালের জন্য থাইল্যান্ডের কাছেও ধরনা দিয়েছে, কিন্তু এবার সরকার ভারত থেকে কোনো চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়নি।
শুধু চালই নয়, এর সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের দামও হু হু করে বাড়ছে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। শহর বন্দর গ্রাম গঞ্জে এখন লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বহু পরিবার বসবাস করছে নৌকায়। অনেক শহরে সড়কের ওপর দিয়ে চলছে নৌকা। এ ছাড়া দুর্গত এলাকায় ত্রাণও নেই। কোথাও কোথাও দুর্গত মানুষকে চালের বদলে দেয়া হচ্ছে গম, যা ভাঙিয়ে খাওয়ার কোনো উপায় নেই। এটা যেন দুর্গত জনগণের সঙ্গে এক পরিহাস। উপরন্তু হাজার হাজার মানুষ যেখানে গলাপানিতে দাঁড়িয়ে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছে, সেখানে এক-আধ শ’ প্যাকেট ত্রাণ দিয়ে গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে সব কিছু। একজন বন্যাদুর্গত মানুষ দাবি করেছিলেন যে, তিনি ত্রাণ পাননিÑ তাতে ুব্ধ হয়ে আওয়ামী নেতারা তাকে মারধর করেছে এবং কান ধরে উঠসব করিয়েছে। সংবাদপত্রে সেই বিপন্ন মানুষটির কানধরা ছবি প্রকাশিত হয়েছে। তার মুখের দিকে তাকানো যায় না, চোখ ফেটে পানি আসে। শ্রমজীবী মানুষের টিকে থাকার কোনো উপায় নেই। হাওরবাসীর কান্না শোনার কেউ নেই। এমনই দাঁড়িয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি। বিদেশী রেমিট্যান্স কমে গেছে। রফতানি আয় কমে গেছে। বিদেশী বিনিয়োগ ক্ষয়িষ্ণু। ফলে একদল চাইনিজ বিনিয়োগ কোম্পানি এই প্রথমবারের মতো সতর্কতা অবলম্বন করেছে। সরকার স্বীকার করুক আর না করুক, প্রবৃদ্ধি কেবল থেমেই যায়নিÑ তা পেছনের দিকে ছুটছে।
বানভাসি মানুষের আর্তনাদ এবং ভূমিধসে নিহত পরিবারগুলোর শোকের মধ্যেও সরকারের গণনির্যাতন বন্ধ হয়নি। পুলিশ এবং দলীয় কর্মীরা সাধারণ মানুষের ওপর অসহনীয় নির্যাতন চালিয়েই যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেই এক আওয়ামী লীগ নেতার মানহানি মামলায় বরগুনার ইউএনও তারিক সালমনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার ‘অপরাধ’, তিনি পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রের কাঁচা হাতের আঁকা শেখ মুজিবের ছবি একটি দাওয়াত কার্ডের পেছনে ছাপিয়েছিলেন। তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা। নিয়মানুযায়ী তাকে গ্রেফতার করতে সরকারের অনুমোদন দরকার। কিন্তু বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসেন সে নিয়ম লঙ্ঘন করে তারিক সালমনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে অবশ্য ওই বিচারক বলেছেন, তিনি ইউএনওকে রিমান্ডে নেয়ার কোনো আদেশ দেননি। কিন্তু পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কেন তারিককে গ্রেফতার করতে গেল? এ থেকেই প্রমাণিত হয়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা কিভাবে পুলিশ, নি¤œ আদালত এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করছেন।
গত সপ্তাহে পুলিশ আরেক কাণ্ড করেছে। নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। তারই অংশ হিসেবে তারা ঢাকার শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভের আয়োজন করে। সে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু পুলিশ আকস্মিকভাবে তাদের ওপর চড়াও হয় এবং সরাসরি তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুরের চোখে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। তাতে তার এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, অপর চোখটি বাঁচানো যাবে কি না সংশয় আছে। টিয়ার শেল সরাসরি কারো গায়ের ওপর নিক্ষেপ করার কথা নয়। কিন্তু সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও স্টিল ফটোগ্রাফি থেকে দেখা গেল, পুুলিশ সরাসরি সিদ্দিকুরের মুখে টিয়ার শেল ছুড়েছে। পুলিশ সম্ভবত তাকে টার্গেট করেছিল এই কারণে যে, তার মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি ছিল। ব্যাপারটা যেন এমন যে, পুলিশ একজন ‘ঘৃণিত ইসলামি মৌলবাদী’র ওপর হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অমানবিক। তাদের একজন বলেছেন, টিয়ার শেল না ফুলের টবের আঘাতে সিদ্দিকুরের চোখ নষ্ট হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, এটা স্যাবোটাজও হতে পারে। অর্থাৎ ছাত্রদের মধ্যে কেউ সিদ্দিকুরের চোখে আঘাত করে তাকে অন্ধ করে দিতে পারে। যা হোক্, পুলিশের এতটা নিষ্ঠুরতা কেউ কল্পনাও করেনি। অপর দিকে, খুলনার খালিশপুর থানায় এক সবজি ব্যবসায়ীর চোখ উপড়ে নিয়েছে পুলিশ। অতি দরিদ্র শাহজালালের মা আর্তনাদ করে বলেছিলেন, ‘আমি চোখের বদলে চোখ চাই।’
আমাদের রাজনীতিতে এই অবস্থাই চলছে। একজনের চোখ আরেকজন নিতে চায়, আরেকজনের চোখ অপর কেউ। এভাবে তারা যেন জাতিকে অন্ধ করে দিতে চায়। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই অবস্থা সীমান্ত পেরিয়ে বাইরেও চলে গেছে। ভারত-চীন সম্পর্ক যখন তিক্ততাপূর্ণ হয়ে ওঠেনি, তখন বাংলাদেশ দিল্লি ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। সময়ের পরিবর্তনে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ ভারত ও চীন ভুটানের সীমান্তে রণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দিল্লি অভিযোগ করছে, বেইজিং ভারতে হামলার জন্য পাকিস্তানি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে।
ফলে ঢাকার ভূ-কৌশলগত ভারসাম্য কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে। ঢাকাকে এখন বেছে নিতে হবে, সে কোন দিকে যাবেÑ বেইজিং না দিল্লি? আর এমন সময় এইচ এম এরশাদ দাবি করেছেন, দিল্লি তাকে এবং তার দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। সাধারণত এরশাদ যে ধরনের বাগাড়ম্বর করেন, এটি তা না-ও হতে পারে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধু, চীনও তাই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীন ৩৪টি প্রকল্প ও কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ১৩টি যৌথ উদ্যোগের জন্য তারা দেবে আরো ১৩৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের জন্য কোনো একক দেশের এই তিন হাজার ৭৫১ কোটি ডলার সহায়তা এটাই প্রথম।
ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইরান জোটবদ্ধ হয়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে একটি জোট বাঁধার উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের সঙ্গে আছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। এক সময় রাশিয়ার মিত্র ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। ভারতের আশঙ্কা চীন ও পাকিস্তান মিলে যৌথভাবে ভারতের ওপর হামলা চালাতে পারে। ভারত আরো উদ্বিগ্ন হয়েছে, এই কারণে যে, গত ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে ৯০ সদস্যের একটি চীনা সামরিক দল কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রও ভারতকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, যদিও দক্ষিণ চীন সাগর ভারতের সীমানা থেকে দূরে, কিন্তু চীন যেন সেখান থেকে ভারতের কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলছে। ২০১৬ সালের আগস্টে দিল্লি এবং ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা প্রভাব মোকাবেলায় সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তার আগেই একই মাসে চীন ও পাকিস্তান তাদের প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতা বহুগুণে বাড়িয়ে নিয়েছে। বেইজিং ৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় থাকবে সড়ক, রেল যোগাযোগ এবং আরব সাগরের গোয়াদর নৌবন্দর পর্যন্ত পাইপলাইন ব্যবস্থা। সেটিও ভারতের জন্য কম উদ্বেগজনক নয়।
মার্কিন সহায়তায় চীন-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় দিল্লি পেশি প্রদর্শন শুরু করেছে। তবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন-পাকিস্তান দুই সীমান্তে যুদ্ধ করতে ভারতের মাত্র ১৬ দিনের অস্ত্রশস্ত্র মজুদ আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধ বেধে গেলে পাকিস্তান খুব সহজেই কাশ্মির তার দখলে নিয়ে নিতে পারে। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত ৩৫০০ কিলোমিটার। চীন গত সপ্তাহে ভারতকে এই বলে সতর্ক করেছে যে, পর্বতও নড়ানো সম্ভব, কিন্তু চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে নড়ানো সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, ১৯৬২ সালে সীমান্ত নিয়েই ভারত-চীন যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধে ভারত শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। ১৯৮৮ সালে চীনা বাহিনী ভুটানের চুম্বি উপত্যকা দখলে নিয়ে নেয়। এই উপত্যকা ডোকলাম মালভূমির নিচে ছিল। ভারত বেইজিংয়ের সঙ্গে ভুটানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনেও বাধা দিয়ে আসছে।
গত ৫ জুন, চীন ডোকলাম সীমান্ত বরাবর ভারতের পাথুরে বাংকারগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। চীন বলেছে, সিকিম সীমান্তের কাছে ভারত অনুপ্রবেশ করায় চীন এ ব্যবস্থা নিয়েছে। চীন আরো বলেছে, ভারত-চীন সীমান্ত আর ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত মীমাংসা এক নয়। ভুটান একটি সার্বভৌম দেশ। তার সার্বভৌমত্বের প্রতি সবারই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত। চীন যদি ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মীমাংসা করতে পারে, তাহলে তৃতীয় পক্ষের তাতে কিছু বলার থাকে না।
বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভুটানের মতো অসহায় হয়ে পড়তে পারে। দিল্লির জন্য ডোকলাম মালভূমি দখলে রাখা খুবই জরুরি। তা না হলে চীনা বাহিনী পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে চিকেন নেক এলাকা দখল করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। তখন বাংলাদেশের সব সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে ভারতীয় বাহিনী সাত রাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করবে। ঢাকার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা সত্ত্বেও সে কারণে দিল্লির জন্য জরুরি, কে বাংলাদেশ শাসন করবে?
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/239884