চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসের গাড়িবহরে হামলার পর পুলিশের অ্যাকশন :নয়া দিগন্ত
১ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২৯

হাটহাজারীতে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসের গাড়িবহরে হামলা

ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং জুতা প্রদর্শন

হাটহাজারী উপজেলা সদরে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের গাড়িবহরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং জুতা প্রদর্শন করেছে ক্ষমতাসীন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। গতকাল বেলা ১টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মন্ত্রী উপজেলা মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এ হামলার শিকার হন। এ সময় মন্ত্রীর গাড়িবহরে দুইজন মহিলা এমপি ও একজন সাবেক সেনাপ্রধান ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তারা ছিলেন।
তাৎক্ষণিক পুলিশি হস্তক্ষেপে হামলাকারীরা সরে পড়ে। তবে হামলায় কেউ হতাহত হননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটহাজারী সদরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। ‘দেশের কোথাও বন্যা হয়নি’ মর্মে পত্রপত্রিকায় দেয়া মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর সমর্থকেরা এ হামলা চালিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পত্রিকায় আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে’।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে হাটহাজারী চেয়ারম্যান সমিতি হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘বন্যা বা জলাবদ্ধতার কবল থেকে হাটহাজারীবাসীকে রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সভাকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর অনুসারীরা সকাল থেকে হাটহাজারী কলেজ আঙ্গিনায় অবস্থান নেয়। মন্ত্রী হাটহাজারীতে প্রবেশের আধাঘণ্টা আগে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি হাটহাজারী উপজেলার সম্মুখ হয়ে হাটহাজারী কলেজ গেট দিয়ে বাসস্ট্যান্ট জিরো পয়েন্টে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে উত্তর জেলা ছাত্রলীগ নেতা সাকেরিয়া চৌধুরী সাগর, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুর রহমান রাসেল, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো: আজম উদ্দিন, তসলিম হায়দার, গিয়াস মেহেদি ও সাঈদুল হক খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দৌলা রেজার নেতৃত্বে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। বেলা প্রায় ১টার দিকে নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল বহরযুক্ত মন্ত্রীর গাড়িবহর বাসস্ট্যান্ট গোল চত্বর (জিরো পয়েন্ট) অতিক্রম করার সময় বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন আকস্মিক মন্ত্রীর গাড়িবহরের অগ্রভাগে থাকা মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের অনেককে হাতে জুতা নিয়ে মন্ত্রীর গাড়িবহর লক্ষ্য করে জুতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়। তখন কর্তব্যরত পুলিশ ইটপাটকেল নিক্ষেপকারীদের ধাওয়া দিলে তারা সরে পড়ে। তবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় যানবাহনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা কেউ হতাহত হয়নি।
এ সময় মন্ত্রীর গাড়িবহরে সাবিহা মুছা এমপি, ফিরোজা বেগম চিনু এমপি, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশিদ ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকতার উননেছা শিউলী ছিলেন। ঘটনার পরপর অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স হাটহাজারী সদরে এসে অবস্থান নেয়।
এদিকে মন্ত্রীর গাড়িবহর বাসস্ট্যান্ট জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে অনুষ্ঠানস্থলে চলে গেলে বিক্ষোভকারীরা আবার বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি বাসস্ট্যান্ট থেকে শুরু হয়ে কলেজ গেট কাচারী সড়ক বাজার হয়ে পুনরায় বাসস্ট্যান্ট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তিকর স্লোগান দেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের কোথাও বন্যা হয়নি’ মর্মে পত্রপত্রিকায় দেয়া মন্ত্রীর বক্তব্য তামাশাপূর্ণ যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করেছে। অথচ মন্ত্রীর নিজ গ্রাম গুমানমর্দনসহ হাটহাজারীর বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তাই আমরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছি। মন্ত্রীর গাড়িবহর দেখে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের কেউ কেউ প্রতিবাদ জানিয়ে পাথর নিক্ষেপ করেছে।’
এদিকে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘বন্যা বা জলাবদ্ধতার কবল থেকে হাটহাজারীবাসীকে রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভা হাটহাজারী চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবিহা মুছা এমপি, ফিরোজা বেগম চিনু এমপি, সাবেক সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম হারুন-অর-রশিদ, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী, বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য জসিমউদ্দিন শাহ, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শাহনেওয়াজ চৌধুরী প্রমুখ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/240569