১ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:২৪

আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০১৬ প্রকাশ

পাঁচ খাতে ঋণের চেয়ে খেলাপির হার বেশি

এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে : গভর্নর

দেশের পাঁচ খাতে ব্যাংক ঋণ যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। বিশেষ করে কৃষিতে এ হার দ্বিগুণের বেশি। এ ছাড়াও রয়েছে তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাত, কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্প। আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০১৬ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৬ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ২ শতাংশ। আর এ ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, ‘ভারতসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বেশি। এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আগামীতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এসএমই) গুরুত্ব দিতে হবে।’
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০১৬’ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে গভর্নর ছাড়াও ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান ও এসএম মনিরুজ্জামান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস খান, আইডিএলসির এমডি আরিফ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সব বক্তাই খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দেন।
ফজলে কবির বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতার জন্য সুশাসন জরুরি। সাইবার নিরাপত্তার ব্যাপারে সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’
আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ‘বৈশ্বিক পদ্ধতিতেই আর্থিক খাতে অনেক অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে সবার আগাম প্রস্তুতি থাকতে হবে।’ আনিস এ খান বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। কারণ এটা ব্যাংকের নিট মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
আরিফ খান বলেন, ‘দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের হার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি। এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’
প্রকাশিত প্রতিবেদনের খাতভিত্তিক ঋণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, কৃষি খাতে ঋণ গেছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে আরও ভয়াবহ তথ্য হল, খাতটিতে ঋণ গেছে মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু খেলাপি হয়েছে মোট খেলাপির প্রায় ৯ শতাংশ। ফলে কৃষি খাতে ঋণের চেয়ে খেলাপির হার প্রায় দ্বিগুণের বেশি। একইভাবে তৈরি পোশাক খাতে ঋণ গেছে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা, যা ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। খাতটিতে মোট ঋণের ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বিতরণ হলেও খেলাপি হয়েছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। সে হিসাবে এ খাতে ঋণের চেয়ে খেলাপির হার বেশি। বস্ত্র খাতে ঋণ গেছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, যা ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। খাতটিতে ৮ দশমিক ১ শতাংশ ঋণ গেলেও খেলাপি হয়েছে তার থেকে বেশি। অর্থাৎ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ঋণ গেছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা, যা ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। খাতটিতে ১ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণ গেলেও খেলাপি হয়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। এছাড়া কৃষিভিত্তিক শিল্পে ঋণ গেছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা, যা সাড়ে ৯ শতাংশ। এ খাতে ৫ দশমিক ১ শতাংশ ঋণ গেলেও খেলাপি হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ এ খাতে ঋণের চেয়ে খেলাপির হার বেশি।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ব্যাংক খাতের মোট ঋণের সাড়ে ১০ শতাংশ একবারই পুনঃতফসিল করা হয়েছে। খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে বাণিজ্যিক ঋণ। বাণিজ্যিক ঋণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৩ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য বড় ঋণের খেলাপি প্রায় ১০ শতাংশ।
এর আগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যিক খাতে ঋণ গেছে ১ লাখ ২১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কৃষি খাতের ২৮ হাজার ২১ কোটির মধ্যে খেলাপি হয় ৪ হাজার ৬ কোটি টাকা। পোশাক খাতের ৭৩ হাজার ৭৫৩ কোটির মধ্যে ৬ হাজার ১০৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়।
শীর্ষ ৫ ও ১০ ব্যাংকের খেলাপি সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, খেলাপি ঋণের ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ শীর্ষ ৫ ব্যাংকের। অন্যান্য ব্যাংকের রয়েছে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ খেলাপি। একইভাবে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। বাকি ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ খেলাপি রয়েছে অন্যান্য ব্যাংকের। প্রতিবেদনে বড় ও ছোট ঋণের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬ সালে বড় শিল্পে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ঋণ গেছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/08/01/144436/