৩১ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:৩৩

দ্বিতীয় দফা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অবৈধ

হাইকোর্টের রায়

চলতি বছরে দ্বিতীয় দফায় গৃহস্থালি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করে গতকাল বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো: ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত বলেছেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত ১ জুন থেকে গৃহস্থালির গ্যাস সংযোগে এক চুলার মাসিক বিল ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার যে সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে, তা অবৈধ।
এখন থেকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছ থেকে এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা নেয়া হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। ১ আগস্ট থেকে নির্ধারিত এ দাম বহাল রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের এ আদেশ পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি আকারে জনগণকে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিইআরসিকে।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ১ অগাস্ট থেকে কর্তৃপক্ষ আর ওই বাড়তি হারে বিল আদায় করতে পারবে না। তবে গত জুন থেকে বাড়তি হারে যে বিল গ্রাহকেরা দিয়ে আসছেন, তা তারা ফেরত পাবেন না, বিষয়টি আদালত মার্জনা করেছেন বলে রিটকারীপক্ষের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী জানিয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর সুব্রত চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে জারি করা রুলের আংশিক মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন ১ জুলাই থেকে এক চুলা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানো অবৈধ। তবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সরকারের নেয়া গ্যাসের বাড়তি দামের বিষয়টি মার্জনা করা হয়েছে। ফলে ১ আগস্ট থেকে গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের ব্যবহারের ওপর বাড়তি টাকা নেয়া যাবে না।
আদালতে বিইআরসির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিতাস গ্যাসের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইশরাত জাহান। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন সুব্রত চৌধুরী ও মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। তিনি আরো বলেন, গত জুন থেকে দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম কার্যকর হয়েছে। জুলাই মাসও চলে যাচ্ছে। এ দুই মাস রায়ের আওতাভুক্ত হবে না।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বিইআরসি দুই ধাপে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তার দ্বিতীয় দফায় মূল্যবৃদ্ধির আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। একই সাথে আদালত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গত ২৪ জুলাই দুই দফা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে ৩০ জুলাই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
শুরুতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কনজুমার কমপ্লেইন হ্যান্ডলিং ন্যাশনাল কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১ জুন থেকে দ্বিতীয় দফা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে বিইআরসির আপিলে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে রুল শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
বিইআরসির ঘোষণা অনুসারে, প্রথম দফায় মূল্য বৃদ্ধি গত ১ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। মূল্যবৃদ্ধির পর এক চুলার গ্যাসের মূল্য ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকার স্থলে ৮০০ টাকা। দ্বিতীয় দফায় ১ জুন থেকে এই মূল্য বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা করা হয়।
অন্য দিকে যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা করা হয়।
আর বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও গ্যাসের দাম দুই ধাপে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।
ভোক্তা অধিকারকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন সে সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানায়।
আইনজীবীরা জানান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনোরূপ পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু সরকার ২৩ ফেব্রুয়ারি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ১ মার্চ ও ২ জুন থেকে দুই দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/240296