৩১ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:৩২

ডিজিটাল ভোগান্তি হজযাত্রায়

ই-ভিসার অভাবে বিমানের ফ্লাইট বাতিল

চলতি বছর হজ পালনে ডিজিটাল ভোগান্তিতে পড়েছেন হজযাত্রীরা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাক-নিবন্ধনের সময় জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এ কারণে টাকা জমা দিয়েও অনেকে হজে যেতে পারছেন না। আবার যারা নিবন্ধন করেছেন তারাও নতুন করে ই-ভিসা জটিলতায় পড়েছেন। এ কারণে বিমানের ফ্লাইট বাতিল পর্যন্ত করতে হয়েছে। এ ছাড়া সৌদিতে মোয়াল্লেম ফি ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, পুনঃহজে খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকদের।
প্রাক-নিবন্ধন : এ বছরের পবিত্র হজ নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রাক-নিবন্ধন দিয়ে এ জটিলতা শুরু হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রাক-নিবন্ধন করতে গিয়ে অনেকেই আগে টাকা জমা দিয়েও সিরিয়ালে অনেক পেছনে পড়ে যান। এ কারণে তারা মূল নিবন্ধন করতে না পারায় এ বছর হজে যেতে পারছেন না। এ কারণে দেড় হাজারের মতো বেসরকারি এজেন্সি থাকলেও এ বছর মাত্র ৬৩৫ এজেন্সির অধীনে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাচ্ছেন। বাকিরা কোটা বঞ্চিত হয়েছে।
ই-ভিসা পদ্ধতি : গত ২৪ জুলাই থেকে এ বছরের হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এর পর থেকে নানা জটিলতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সৌদি সরকার এ বছরই প্রথম ই-ভিসা পদ্ধতি চালু করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকেরা। সৌদি ই-হজের সার্ভার জটিলতাসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে ই-ভিসা পাচ্ছেন না অনেক হজযাত্রী। এ কারণে নির্ধারিত ফ্লাইটে সৌদি যেতে পারছেন না তারা। পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে ফ্লাইটে ওঠার শেষ মুহূর্তেও ভিসা না পাওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফেরত যেতে হচ্ছে অনেককে।
হজ অফিস ও এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৪ জুলাই থেকে ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত কয়েক শ’ হজযাত্রীর ই-ভিসা যথাসময়ে প্রিন্ট হয়নি। বেশির ভাগ এজেন্সিরই দুই-একজন হজযাত্রীর ভিসা আসছে না। সৌদির ই-হজ সিস্টেমের সার্ভারে সমস্যার কারণেই এ জটিলতা হচ্ছে বলে হজ অফিস-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফেরত আসা ভিসার আবেদনগুলো আবার পাঠানো হলেও তা কবে পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যেই হজযাত্রীরা ক্যাম্পে দিন কাটাচ্ছেন। ভিসা জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে সৌদি যেতে না পারায় বাংলাদেশ বিমান ও সৌদিয়ার ফ্লাইট বিপর্যয় শুরু হয়েছে।
ফ্লাইট বাতিল : পর্যাপ্তসংখ্যক হজযাত্রী না পাওয়ার কারণে গতকাল রোববার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়া বিজি-৫০২৭ ফ্লাইটটির গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। সূত্র জানায়, ফ্লাইটটিতে (বিজি-৫০২৭) ৪০৬ জন হজযাত্রী থাকার কথা ছিল। কিন্তু পর্যাপ্তসংখ্যক হজযাত্রী না পাওয়ায় ফ্লাইটটি বাতিল করতে হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, ই-ভিসা জটিলতার কারণে অনেকে এখনো পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক হজযাত্রীর ভিসাসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। এ জন্য তারা নির্ধারিত ফ্লাইটে (বিজি-৫০২৭) যেতে পারছেন না। ফলে ফ্লাইটে দেখা দিয়েছে হজযাত্রী সঙ্কট। এ কারণে ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
গত শনিবারও একই কারণে বিমানের দু’টি ফ্লাইট বাতিল হয়। ওই দুই ফ্লাইটে প্রায় ৪০০ জন করে হজযাত্রী বহনের কথা ছিল। এ ছাড়া গত শুক্রবার নির্ধারিত সময়ে হজযাত্রীদের বিমানবন্দরে উপস্থিত করতে না পারায় তিনটি এজেন্সির ১০৯ জন নির্ধারিত ফ্লাইটে সৌদি আরব যেতে পারেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, এবারই প্রথম হজযাত্রীদের জন্য ই-ভিসা চালু করা হয়েছে। এই ই-ভিসা প্রিন্ট করতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর প্রিন্ট করতে গিয়ে অনেকের ভিসা প্রিন্ট হচ্ছে না। এজন্য তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য হজ অফিসকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর এসব পাসপোর্ট আমরা আবার সৌদি দূতাবাসে পাঠাচ্ছি। তসলিম বলেন, এ সমস্যা বৈশ্বিক। এখানে কারো কিছু করার নেই। সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের জন্য হাবের পক্ষ থেকে সৌদি দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
মুয়াল্লিম চুক্তি নিয়ে জটিলতা : সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর সৌদি আরবে কম মূল্যের (৭২০ রিয়াল) মুয়াল্লিম সার্ভিসের সঙ্কট দেখা দেয়। এতে বাংলাদেশের অন্তত ৯০টি এজেন্সির প্রায় ১৮ হাজার হজযাত্রীর জন্য মুয়াল্লিম চুক্তি করা নিয়ে বিপাকে পড়েন এজেন্সি কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগী এক এজেন্সি মালিক জানান, সর্বনি¤œ মূল্যের মুয়াল্লিম সার্ভিসের জন্য যেখানে ৭২০ রিয়াল খরচ হওয়ার কথা, সেখানে বর্তমানে ১ হাজার ৫০০ রিয়ালের নিচে মুয়াল্লিম পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হজের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার পর শনিবার বিষয়টির সমাধান হয় বলে জানিয়েছেন হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
পুনঃহজে খরচ বাড়ছে : গত ২০১৫-১৬ সালে যারা হজ করেছেন তাদের যারা এ বছরও হজে যাবেন, তাদের ভিসা করতে অতিরিক্ত ২ হাজার রিয়াল (৪৪ হাজার টাকা) লাগবে। ফ্লাইট শুরুর এক দিনের মাথায় আকস্মিক সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এ ধরনের একটি সার্কুলার জারি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে নতুন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট হজযাত্রীরা।
এ বিষয়ে বেসরকারি হজ এজেন্সি ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাওলানা মাহমুদুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, ২৫ জুলাই সৌদি আরবের এক সার্কুলার অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে হজে যাওয়া ব্যক্তিদের এবার হজের ভিসার জন্য সেন্ড করলেই ২ হাজার রিয়াল কেটে নিচ্ছে। আকস্মিক এ নিয়মে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে গেলে হজযাত্রীদের সাথে এজেন্সি মালিকদের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ছাড়া সৌদিতে এ বছর বাড়িভাড়া দ্বিগুণ বেড়ে গেছে বলেও তিনি জানান।
এ দিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হজ বুলেটিন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ৬০টি ফ্লাইটে মোট ২১ হাজার ১১০ হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার ২ হাজার ৮৭৬ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ১৮ হাজার ২৩৪ জন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/240312