৩১ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:০৫

দেখা অদেখা

শুধু রোডম্যাপ নয়

সালাহউদ্দিন বাবর

নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ১৬ জুলাই ইসি জাতীয় সংসদের একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি রোডম্যাপ বা পথনকশা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়টি নিয়েই যত কথা। রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন নিয়ে যারা ভাবেন, তারা তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। রোডম্যাপ মূলত এখন থেকে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত ইসি কী কাজ কিভাবে করবে, তারই একটা ছক। রোডম্যাপ এর বাইরে আর কিছু নয়। কিন্তু দেশের মানুষের বড় আকাক্সক্ষা অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন। সে সম্পর্কে কোনো কথা বা নিশ্চয়তা রোডম্যাপে নেই। ইসি নির্বাচন কোন পথে, কিভাবে অগ্রসর হবে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো উৎসাহ দেখানো হয়নি; বরং বিএনপি এর সমালোচনা করেছে, আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। এ নিয়ে কোনো বাড়তি উৎসাহ কারো পক্ষ থেকেই আসেনি।
সাতটি কর্মপরিকল্পনা সামনে রেখে পুস্তিকার আকারে ইসি এই রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের প্রায় দেড় বছর আগে এই কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করল ইসি। এটাকে সর্বশেষ কোনো বক্তব্য নয় বলে ইসি মনে করে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে আরো কিছু বলা হতে পারে। এতে রয়েছে আইনি কাঠামোগুলো পর্যালোচনা এবং হালনাগাদ করা তথা সংস্কার করা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করা, সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ, সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি। উল্লিখিত কর্মসূচিগুলো কবে শুরু করা হবে, সে সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি। তবে ইসি নির্বাচন নিয়ে আরো কিছু কাজ করবে। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত দলের নিরীক্ষা, সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ প্রভৃতি করা হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরবর্তী ৯০ দিন নির্বাচনী আইন বিধি অনুযায়ী ইসি কাজ করবে। তবে এই সময় সরকার কিভাবে পরিচালিত হবে, রাজনৈতিক পরিবেশ কিভাবে নিশ্চিত করা হবে, সে ব্যাপারে রোডম্যাপে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। অথচ নির্বাচনের আগের এই ৯০ দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই ৯০ দিন ইসি পূর্ণক্ষমতায় আসীন থাকবে। এই তাৎপর্যপূর্ণ সময়টাতে ইসি কী করবে, রোডম্যাপে কিছু বলা হয়নি। তাই এই রোডম্যাপকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারপরও ইসি এটাকে বড় করে প্রচার করার তাৎপর্য বোধগম্য নয়। রোডম্যাপে রাজনৈতিক দল, নির্বাচন নিয়ে যারা ভাবেন ও গবেষণা করেন এবং গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের সাথে ইসির সংলাপের কথা রয়েছে। এই তিন তরফের সাথে আলোচনার পর একটা অবস্থানে পৌঁছে যদি ইসি এই রোডম্যাপ তৈরি করত এবং ঘোষণা করত তাহলে রোডম্যাপ নিয়ে যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে, সেটা হতো না। একটা কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে ইসি যত বেশি ঐকমত্যের ভিত্তিতে পথ চলতে পারবে, তাদের পথচলা তত সহজ হবে এবং বিতর্কমুক্ত থাকবে। ইসিকে একেবারে কোনো দিকে ঝুঁকে না পড়ার অবস্থানে থাকতে হবে অবশ্যই। ক্ষমতাসীনরা স্বাভাবিক কারণেই ইসিকে প্রভাবিত করার প্রয়াস অতীতে চালিয়েছে, ভবিষ্যতেও চালাবে। এটাকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। দেশের সংবিধান এসব অনাকাক্সিক্ষত ঝুটঝামেলা থেকে দূরে থাকার শক্তি ইসিকে জোগান দিয়ে রেখেছে।
ইসিকে আরো একটি বিষয় বুঝতে হবে, যে ইসি বিদায় নিয়েছে এবং তারা যাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তারা কোনো ভালো দৃষ্টান্ত রেখে যাননি। বিধ্বস্ত মর্যাদার একটি কমিশন পরিচালনার দায়িত্ব তারা নিয়েছেন। গত ইসি অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার শর্তগুলো পূরণ করতে পারেনি। ফলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং দেশে একটি জবাবদিহিমূলক প্রশাসন কায়েম হতে পারেনি। আর এভাবে দশটি বছর ধরে দেশে অস্থির রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে। গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে বহু ক্ষেত্রে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এই অশুভ প্রভাবের ফলে দেশ অনিয়ম-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। আইনসভা একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দায়িত্বশীল সরকার এবং কার্যকর বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠতে পারেনি। যারা সত্যিকার বিরোধী শক্তি তাদের কোনো দায়িত্ব পালন এবং অবদান রাখার সুযোগ হয়নি। আন্তর্জাতিক সমাজে বাংলাদেশের যে ইমেজ ছিল, তা মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে।
বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অতি দরিদ্র। তাদের সামাজিক সুরক্ষা দিয়ে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করা যেমন জরুরি, তেমনি কঠিন। এ জন্য একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল যোগ্য সরকার বেছে নেয়ার অধিকার সেসব মানুষের হাতে থাকা দরকার। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই। তেমন একটি নির্বাচন করার সুমহান দায়িত্ব এবার ইসির স্কন্ধে পড়েছে। এর সাথে সত্যিকার গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শুরুর প্রত্যাশা সবার। আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে জাতি সেই শুভ দিনের আশাবাদী। ইসি একটি কঠিন দায়িত্ব নিয়ে পথ চলছে। এ ক্ষেত্রে ইসিকে একটি মধ্যরেখা অনুসরণ করে চলতে হবে। ভারতের নির্বাচনী আইন বাংলাদেশের চেয়ে কঠিন বা বিশাল নয়। কিন্তু ভারতের নির্বাচন কমিশনে যারা সমাসীন হন, তারা তাদের ঐতিহ্য অনুসরণ এবং নিজেদের অন্তর্নিহিত শক্তি নিয়ে কাজ করে সেই নির্বাচন কমিশনকে পৃথিবীর একটি খ্যাতিমান কমিশনে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। ভারতের নির্বাচন নিয়ে কখনোই অভিযোগ উঠতে শোনা যায়নি। বাংলাদেশের কমিশন কেন সে পথ ধরে চলতে পারবে না? এক দিনে হয়তো সে ভাবমর্যাদা অর্জন করা সম্ভব নয়। কিন্তু এর শুভসূচনা তো হতে হবে। জনগণ সেটাই আশা করে। সেই শুভযাত্রা শুরুর প্রতি দেশের মানুষের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। ইসির শক্তির উৎস তো রয়েছে। সেটা হলো সংবিধান, দেশের সর্বোচ্চ আইন যা ইসিকে কাজ করার এবং স্বাধীনভাবে চলার পূর্ণ শক্তি জোগাবে। এর সাথে বাড়তি যা প্রয়োজন, সেটা নৈতিক শক্তি। ইসির আর তো পাওয়ার কিছু নেই শুধু সুনাম অর্জন করা ছাড়া।
কিন্তু ইসির বক্তব্য ও ভূমিকা নিয়ে ইতোমধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইসি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এতেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি বা এটাই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন নিয়ে তাদের অনেক কিছুই করতে হবে এবং করার আছে। কিন্তু ইসি মনে হয়, দায়িত্ব পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তাদের দায়দায়িত্ব, এর আগে তাদের করার কিছু নেইÑ এ কথা বলে তো বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব কেবল তিন মাসের জন্য হতে পারে না। আইন না থাকলেও তারা যে সংলাপের আয়োজন করছেন, তা কিভাবে করছেন? বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। কারণ লক্ষ করা যাচ্ছে, সরকারি দল ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। তারা দেশের সর্বত্র সভা-সমাবেশ করে ভোট চাইছেন। বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি এবং এই দলের চেয়ারপারসনের বেপরোয়া সমালোচনা করছে সরকার। অথচ বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ কোথাও ঘরের ভেতর চা খেতে গেলে সেখানেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে ঘরের ভেতর আবদ্ধ রেখে খালি মাঠে গোল করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। তাতে মনে হচ্ছে, সরকারি দল তাদের প্রতিপক্ষকে কোনো অবস্থায়ই সমান সুযোগ দিতে চায় না। অথচ নির্বাচন কমিশন এখানে নীরব। তারা বলে যাচ্ছেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে তারা কিছু করতে পারবেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রোডম্যাপ ঘোষণার পর সব রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। বিশেষজ্ঞদের আরো অভিমত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে ইসি উচ্চ আদালতের মতামত চাইতে পারে। তা না হলে ভোটের কিছু আগে ছাড়া বিরোধী দল প্রচার চালানোর কোনো সুযোগ পাবে না। সে ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি কার্যকর হবে না। এ প্রসঙ্গে ইসির যে বক্তব্য, এই মুহূর্তে সরকার কিভাবে পরিচালিত হবে ও রাজনৈতিক কর্মপরিবেশের বিষয়গুলো তাদের এখতিয়ারে নেইÑ ইসির এই ভূমিকা এবং বক্তব্যের ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি হবে না, তাদের প্রতি।
ইসির ভূমিকা ও বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে যে, আবারো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি প্রহসনের নির্বাচন হতে চলেছে। ইসির প্রতি এখনই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অনাস্থা সৃষ্টির আলামত পাওয়া যাচ্ছে। যদি রাজনৈতিক দলগুলো ইসির প্রতি আস্থা হারায়, তাহলে তো এই ইসির অধীনে আগামী নির্বাচনে সবার অংশ নেয়ার বিষয় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। আর তাতে দেশের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা ভাবা যায় না। দেশের মানুষ একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে দীর্ঘ দিন। তাই হতাশা ও ক্ষোভে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে জনগণ। ইসি প্রণীত রোডম্যাপ নিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না বলে সঙ্গত কারণেই সন্দেহ হচ্ছে। ইসির পক্ষ থেকে এখনো ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি। এর অর্থ কি তারা ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি এখনো ভাবনায় রেখেছেন? পৃথিবীর বহু দেশে সাধারণভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতেই নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ওই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনভিজ্ঞ। তাই তারা এটা ব্যবহার করলে ভুল করবে এবং এতে ভোটে কারচুপির আশঙ্কা থাকবে। তা ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ বিঘিœত হতে পারে। ইসি বলেছে, তারা ভোটকার্যক্রম সহজীকরণের পদক্ষেপ নেবেন। ইভিএম ব্যবস্থা চালুর কথা তারা তাহলে বলছেন কেন? নির্বাচনের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছেÑ ভোটকেন্দ্র এবং আশপাশের এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অতীতে সব সময় দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রে মাস্তানদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার অভাবে ভোট না দিয়েই ঘরে ফিরেছে। আর এই সুযোগে তাদের ভোট ‘দেয়া হয়ে গেছে’। এভাবে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায় না। এসব যৌক্তিক কারণেই ভোটের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের জোরালো দাবি উঠেছে। অতীতে যতবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, তার শুভ ফল পাওয়া গেছে। এবারো বিএনপি এই দাবি তুলেছে আর ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা হয়নি। যদি সবার লক্ষ্য হয়Ñ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সে ক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের কাজ যাতে ভালো হয় তার জন্য যা প্রয়োজন সেটা করতে উদ্যোগী হওয়া উচিত। এর বিরোধিতা করা মেটেই সঙ্গত নয়। ইসি এই প্রত্যয় নিয়ে অগ্রসর হোক যে, তারা একটি ভালো নির্বাচন করে উদাহরণ সৃষ্টি করবেন।
ইসির প্রতি জনগণের যে আকাক্সক্ষা তা যেন নষ্ট না হয়; হতাশ হয়ে যেন দেশের জনগণ হতবুদ্ধি না হয়ে পড়ে। সবাই জানে, ইসি একটি স্বাধীন ও ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই কথার প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান এবং এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি আরো বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তাই এখন আর এ কথা বলা যাবে না যে, ইসি তফসিলের বেড়াজালে আবদ্ধ। কোথাও কোনো বাধ্যবাধকতা থাকলে সেটা ইসিকে অতিক্রম করতে হবে। দেশের মানুষের আস্থা অর্জন এবং আকাক্সক্ষা পূরণের কোনো অযৌক্তিক অন্তরায় বা অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না। অথচ দেশের চতুর্দিক থেকে আশা ভঙ্গের বার্তা আসছে। এভাবে যদি সব দিক থেকে আঁধার ঘোর হয়ে আসে, তবে জাতি হিসেবে আমাদের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাই ইসির পক্ষ থেকেও যেন এমন কোনো বার্তা না দেয়া হয় যাতে আঁধার আরো গভীর হয়ে ওঠে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে ইসির দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকারকে সব রকম সহায়তা দিতে হবে। একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অবশ্যই সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যত অন্তরায় দেখা দেবে, সেখানে তাকে এগিয়ে আসতে হবে। একটি ভালো নির্বাচন হলে তার কৃতিত্ব যেমন নির্বাচন কমিশনের, তেমনি সরকারেরও। রাজনীতিতে সরকারের বিপক্ষে অভিযোগ রয়েছে, তারা বিরোধী দলের সাথে ন্যায়ানুগ আচরণ করছে না। নির্বাচনের জন্য সরকারি মহল সর্বত্র তা অবাধে প্রচারকাজ চালাচ্ছে। কিন্তু বিরোধী দলকে সে সুযোগ তারা দিচ্ছে না মোটেও। আওয়ামী লীগেরই একটি দাবি ছিল, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল সাংবিধানিকভাবেই এবং কয়েক দফা এই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হয়েছে। সে নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের সময়ই সেই ব্যবস্থা রহিত হয়েছে। এখন আবার এই দাবি উঠেছে। সরকারের প্রধান বিরোধী পক্ষ এই দাবি তুলেছে। যদি সবার একই মত হয়, দেশে আগামীতে একটি অভিযোগহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে ক্ষেত্রে এই দাবির প্রতি সবার অকুণ্ঠ সমর্থন জানানো উচিত। তেমন একটি নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসবেন জনগণের আস্থা নিয়ে, তাদের প্রতি অভিনন্দন জানানোর ব্যাপারে কারোই কুণ্ঠিত হওয়ার যুক্তি থাকবে না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/240246