পুলিশের অনুমতি না পেয়ে ইউনূস সেন্টার আয়োজিত ‘সপ্তম আন্তর্জাতিক সামাজিক ব্যবসায় দিবস ২০১৭’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে। ইউনুস সেন্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘অনিবার্য কারণবশত আমরা সামাজিক ব্যবসায় দিবস উপলে জুলাই ২৮-২৯, ২০১৭ তারিখের আয়োজিত সপ্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাতিল ঘোষণা করছি।’ এ বিষয়ে গতকাল পুলিশ সদর দফতরে কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, অল্পসময়ে সম্মেলনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলেই ২৮ ও ২৯ জুলাই আশুলিয়ার ইউনূস সেন্টারে এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়নি। সার্বিক নিরাপত্তা প্রস্তুতি ছাড়া বড় ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অনুমতি দেয়া হয় না। তা সম্ভবও নয়। এর সাথে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি জানান, ইউনূস সেন্টারের প থেকে গত ২৪ জুলাই এই সম্মেলনের কথা জানানো হয়েছে পুলিশকে। ইউনূস সেন্টারের প থেকে জানানো হয়, এই সম্মেলনে ৩৬টি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি অংশ নেবেন। জাতিসঙ্ঘের একজন সহকারী মহাসচিব ছাড়াও বিশ্ব অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও একটি দেশের রাজারও এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ রকম একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাত্র তিন-চার দিন আগে নিরাপত্তার জন্য কেবল ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতনরা এ বিষয়ে কেউ কিছুই জানেন না। এত কম সময়ে এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলেই তাদের সম্মেলন আয়োজনের অনুমতি দেয়া যায়নি। তবে সময় নিয়ে আয়োজন করতে চাইলে পুলিশ অনুমতি দেবে। আইজিপি বলেন, এ ধরনের কোনো সম্মেলন আয়োজনের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে আয়োজক সংস্থার চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু মাত্র তিন দিন আগে কেউ এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলে নিরাপত্তা চাইলে তা দেয়া সম্ভব নয়। তারা ঢাকা জেলার এসপির কাছে সম্মেলনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। এসপি তাদের জানিয়েছেন, এত বড় অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা তিনি একা দিতে পারবেন না। প্রস্তুতির জন্য সময় লাগবে। অথচ এখন তারা বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন সরকার তাদের সম্মেলন বন্ধ করে দিয়েছে, এটা সত্য নয়। সরকার বন্ধ করেনি। তাদের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানেও না। তারা সবাইকে অন্ধকারে রেখেছিল।
আইজিপি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে একটার পর একটা আন্তর্জাতিক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কয়েক মাস আগেও আমরা ইন্টার পার্লামেন্ট ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলন করলাম। চিফ অব পুলিশ কনফারেন্সও করেছি। এ ধরনের ইভেন্টের নিরাপত্তা দেয়ার মতো সমতাও রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের। কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতি দরকার। কাল (শুক্রবার) থেকে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ জন্য আমরা এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আন্তর্জাতিক ইভেন্টের ব্যাপারে হাই সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়।
এ দিকে, পুলিশের অনুমতি না পেয়ে সম্মেলনটি বাতিল করেছে ইউনূস সেন্টার। এ বিষয়ে ইউনূস সেন্টার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে অনিবার্য কারণবশত আমরা সামাজিক ব্যবসায় দিবস উপলে জুলাই ২৮-২৯, ২০১৭ তারিখের আয়োজিত সপ্তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাতিল ঘোষণা করছি। এই সম্মেলন আগামীকাল সকাল ৯টায় জিরাবোতে অবস্থিত সামাজিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়ার কথা ছিল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য যারা নিবন্ধনকৃত হয়েছিলেন তারা আগামীকাল (আজ শুক্রবার) এবং পরবর্তী দিন শনিবারের সম্মেলনে যোগদানের জন্য যে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তা যেন বাতিল করেন, তার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সব মেহমান ও অংশগ্রহণকারী, বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসার জন্য যারা অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন, তাদের কাছে আমরা মাপ্রার্থী।
‘এই সম্মেলনে, যোগদানের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় দুইশত অংশগ্রহণকারী বিদেশ থেকে এসে গেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব থমাস গাস। সম্মেলনে তার মূল বক্তব্য রাখার কথা ছিল। তিনি জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন ল্য কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রধান কর্মকর্তা। আনুমানিক দু’হাজার জনের এই সম্মেলনে ৫০টি দেশ থেকে মোট ৪০০-র বেশি বিদেশী অংশগ্রহণকারী যোগদানের জন্য নিবন্ধন করেছেন।
‘যা হোক, সম্মেলনের কিছু কিছু কর্মসূচি ইউনূস সেন্টারের ফেসবুকের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। অনলাইন সেশন শুরু হবে ২৮ জুলাই ২০১৭ সকাল সাড়ে ১০টায়। এসব চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন সেশনের বক্তাদের বক্তব্য সরাসরি প্রচারিত হবে। এই সম্মেলনের আয়োজনে যারা আমাদের বিপুল সহায়তা দিয়েছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’