বৃষ্টি হলেই ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো নারায়ণগঞ্জে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। দুই মাস ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ চত্বর পানিতে ডুবে আছে। পানি অপসারণের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না : শফিউদ্দিন বিটু
২৮ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১১:০২

ডিএনডির ২০ লাখ বাসিন্দা ভয়াবহ দুর্ভোগে

পানিতে ভাসছে পুরো এলাকা

পানি থৈ থৈ করছে ডিএনডিতে। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন ডিএনডির অভ্যন্তরের ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা। প্রায় প্রতিটি এলাকা ছাড়াও রাস্তাঘাট, মাঠ, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, বাসাবাড়ি ডুবে গেছে পানিতে। অব্যাহত বৃষ্টিতে কৃত্রিম বন্যার কারণে মাসাধিক কাল ধরে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে ডিএনডিবাসী। এতে করে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ছে ডিএনডিবাসীর।
ডিএনডিতে থৈ থৈ পানি বা কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হলেও ডিএনডি সেচপাম্পের সামনে সেচ দেয়ার মতো পানি আসছে না। ডিএনডির একমাত্র খালে কচুরিপানা, প্লাস্টিক ও নানা রকমের বর্জ থাকায় পানি স্বাভাবিকভাবে পাম্প হাউজের সামনে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ সবগুলো পাম্প দিয়ে সেচের মতো পানি পাচ্ছেন না। ডিএনডির বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পানি আটকে মাছ চাষ করায় পানি খালে আসতে পারছে না। বর্তমানে পয়ঃনিষ্কাশন, কেমিক্যালসহ নানা বর্জবাহিত পানির কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
ডিএনডিবাসীকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রান্নার কাজ ও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে। বাসাবাড়িতে পানি ঢোকায় বেশি দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিশু ও মুরব্বিদের। নিজের বাড়ি রেখে অনেকেই আবার তুলনামূলক শুকনো এলাকায় বাসা ভাড়া নিচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ওমর ফারুক বলেন, আমার কার্যালয়েও পানি উঠেছে। পানিবন্দী এলাকাবাসীর দুর্ভোগ দেখে কষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। এলাকাবাসীর জন্য কিছু করতে না পেরে নিজেকে অসহায় মনে হয়। কেননা ডিএনডির পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা ছাড়া বিকল্প পথ নেই।
দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে কৃত্রিম বন্যা থেকে রক্ষা করতে ডিএনডিবাসী কয়েকবার শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কের আদমজীতে ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের ইউটার্ন এলাকায় মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে যোগ দেয়া ডিএনডিবাসী জানান, কৃত্রিম বন্যায় আমরা অনেক দুর্ভোগের মধ্যে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা ডিএনডি পাম্প পরিদর্শন বা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেননি। এলাকাবাসীর মতে, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ পাম্পহাউজ থেকে পশ্চিমে ডিএনডির একমাত্র ক্যানেলের ছয়-সাত কিলোমিটার কচুরিপানা ও বর্জ অপসারণ করলে ডিএনডির পানি খালে আসতে পারত। এতে দ্রুত কৃত্রিম বন্যা থেকে রক্ষা পেত ডিএনডিবাসী। শিমরাইল পাম্প হাউজের উপসহকারী প্রকৌশলী রামপ্রাসাদ বাছার জানান, ১২৮ কিউসেক পানি নিষ্কাশন মতাসম্পান্ন চারটি পাম্পের মধ্যে তিনটি সচল রয়েছে। কিন্তুগত বুধবার আমরা দু’টি পাম্প চালিয়েছি পানিস্বল্পতার কারণে।
বৃহস্পতিবার পাম্প হাউজের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, পানির স্তর মাত্র ২ দশমিক ৯ মিটার। পানি স্বাভাবিকভাবে পাম্প হাউজের সামনে আসতে পারলে যার উচ্চতা হয় ৩ দশমিক ৬ মিটার। ডিএনডি সেচ খালে পলিথিন বা বর্জ না ফেলার জন্য ডিএনিডবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন এ প্রকৌশলী। তিনি আরো জানান, ডিএনডির পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে (ফতুল্লা, ডেমরা, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী, গোদনাইলসহ আশপাশের এলাকা) ছোট ছোট আরো পাম্প বসালে দ্রুত ডিএনডিকে কৃত্রিম বন্যা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। ডিএনিড পাম্প হাউজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, বামৈল ও শুকুরসী এলাকায় ইতঃপূর্বে সেচপাম্প দ্বারা ডিএনডি সেচপাম্প কর্মকর্তারা পানি নিষ্কাশন করতেন। কিন্তু গত বছর থেকে এ দায়িত্ব পড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওপর। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত বছর এবং এ বছর নিষ্কাশনে কোনো পাম্প বসায়নি। এতে ওই এলাকার পানি না কমায় পানি অনেক দেরিতে শাখা খাল দিয়ে মেইন খাল হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ডিএনডি পাম্প হাউজে আসে। এতে জলাবদ্ধতার স্থায়িত্ব বাড়ে।
জানা যায়, ১৯৬২-৬৮ সালে আট হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে নির্মাণ করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। ডিএনডির সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই বাঁধ এলাকায় বর্তমানে ২০ লাখের বেশি মানুষের বাস।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/239420