২৮ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫৯

নাচোলে থানা হেফাজতে মৃত্যু

‘এক লাখ টাকা না দেয়ায় নির্যাতন করে হত্যা’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানায় বুধবার দুপুরে মারা গেছেন হেফাজতে (রিমান্ড) থাকা আসামি মাহফুজুর রহমান। পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বলছে। তবে পরিবারের সদস্যরা তা নাকচ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, ১ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় পুলিশের নির্যাতনেই মারা গেছেন মাহফুজুর। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।


বৃহস্পতিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে মাহফুজুরের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। হাসপাতালের আরএমও ডা. আয়শা জুলেখার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের চিকিৎসক দল ময়নাতদন্ত করেন। তবে ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি চিকিৎসকরা। পরে দুপুরে মাহফুজুরের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আদালতকে জানাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম। একই সময়ের মধ্যে আদালতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতেও সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়। থানায় আসামির মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ আদালতকে জানালে বুধবার বিকালে বিচারক এ আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুল বারিক। প্রতিবেদনে তিনি এটিকে আত্মহত্যা উল্লেখ করেছেন। সন্ধ্যায় জমা দেয়া হয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টও। তবে তাতে কী রয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

মাহফুজুরের লাশ নিতে সদর হাসপাতালে আসেন মেজ ভাই মো. জুলহাস ও মো. শাহীন আলম। জুলহাস যুগান্তরের কাছে অভিযোগ করেন, আমার ভাইকে রিমান্ডে নির্যাতন না করার জন্য নাচোল থানা পুলিশ এক লাখ টাকা দাবি করেছিল। অনেক কষ্ট করে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। ঘটনার দিন (বুধবার) সকাল ১০টার দিকে শেষবারের মতো ভাইকে দেখতে নাচোল থানায় যাই। তখন সে স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎ করে দুপুর ২টার দিকে পুলিশ ফোন করে জানায়, মাহফুজুর আত্মহত্যা করেছে। পুরো ঘটনা পুলিশের নাটক। ভাইকে হত্যা করে পুলিশ টয়লেটে লাশ ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

শাহীন আলম বলেন, সে (মাহফুজ) কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। টয়লেটের দরজার যে উচ্চতা এবং দরজায় যেভাবে লাশ ঝুলানো ছিল, সেভাবে কেউ আত্মহত্যা করে না। পুলিশ বলছে, জিন্সের প্যান্ট ছিঁড়ে সে আত্মহত্যা করেছে। জিন্সের প্যান্ট সে ছিঁড়ল কী দিয়ে? লাশ উদ্ধারের সময় তার পরনের প্যান্ট ও গলায় লাগানো জিন্সও এক মনে হয়নি। প–লিশ হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাচোল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন। তিনি যুগান্তরকে জানান, এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।

পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যর কমিটি বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করেছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়ারেশ আলী মিয়া ও ডিআইও-১ সানাউল হক। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাহবুব আলম খান যুগান্তরকে বলেন, দুপুরে চিঠি পেয়েই কাজ শুরু করেছি। যথাদ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেয়া হবে।

পেটে ব্যথায় আক্রান্ত নাচোল উপজেলার জাহিদপুর গ্রামের নাসির উদ্দিনের মেয়ে নাহিদাকে ১৭ জুলাই জননী ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন মাহফুজুর রহমান তার অস্ত্রোপচার করেন। ১৯ জুলাই মারা যায় নাহিদা। এ ঘটনায় নাহিদার বাবা নাসির উদ্দিন মাহফুজুরসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। রাতে মাহফুজুরকে গ্রেফতার করে নাচোল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়। পুলিশ জানায়, এসএসসি পাস মাহফুজুর নিজেকে ডা. মাসুদ রানা এবং সার্জারিতে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী পরিচয় দিয়ে ওই ক্লিনিকে বিভিন্ন অস্ত্রোপচার করত।

ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার তার রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুরুষ হাজতখানার টয়লেটে নিজের প্যান্ট ছিঁড়ে দরজার ফাঁকা বিমে ঝুলে আত্মহত্যা করে মাহফুজুর রহমান। লাশের সুরতহাল তৈরিকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হক জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

 

http://www.jugantor.com/first-page/2017/07/28/143431/