২৮ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫৮

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেড় হাজার

এবারের বন্যায় ২০ জেলার কমপক্ষে দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটি আংশিক আবার কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর যেগুলোতে পানি ঢুকেছিল, সেসব প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট গেছে। অনেক স্থানে স্কুলের মেঝে দেবে গেছে। এছাড়া নষ্ট হয়ে গেছে কোনো কোনো স্কুলের প্রবেশপথের রাস্তা। সবমিলিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বন্যাপ্রবণ জেলার শিশুদের লেখাপড়া দারুণভাবে বিঘিœত হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র জানায়, কোনো কোনো জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসায় অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থীরা। স্কুল বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া যায়নি। এছাড়া আগস্টে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার কথা। বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত আরও উন্নতি না হলে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে এ পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে।


সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বন্যা শেষ না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। বিভিন্ন জেলা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে (ইইডি) ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিপিই মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল যুগান্তরকে জানান, বিভিন্ন জেলায় এখনও বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোনো কোনো জেলা থেকে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির কারণে আমরা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পুরোপুরি পাইনি। বন্যার কারণে ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আমাদের শিক্ষকরা দৈনিকই স্কুলে যাচ্ছেন। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ৯৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ক্ষতি দূর করতে আমরা প্রস্তুত আছি। এ খাতে আর্থিক বরাদ্দ আছে। পানি নেমে গেলে দ্রুত সংস্কার কাজ করা হবে। মাউশি পরিচালক অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দু’ধরনের ক্ষতি হয়েছে। একটি একাডেমিক, অপরটি অবকাঠামোগত। দুই ক্ষতি পূরণেই আমাদের প্রস্তুতি আছে। এর মধ্যে অবকাঠামোগত ক্ষতি দূর করতে প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা হবে। এ কাজ করতে মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে ইইডিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমরাও একটি তালিকা পাঠিয়েছি। আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২৮৮টি প্রতিষ্ঠান আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এপ্রসঙ্গে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ইইডির স্থানীয় প্রকৌশলীরা পাঠাবেন। এ খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। সে লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুত আছি।

এছড়া ডিপিই মহাপরিচালক এবং মাউশি পরিচালক প্রায় একই সুরে বলেন, একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি পূরণে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কোনো ছেলেমেয়ের বইপত্র নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাকে নতুন বই দেয়া হবে। জেলায় বাফার স্টকে চাহিদার ৫ শতাংশ বই সংরক্ষিত আছে। যদি কোনো জেলায় তাতেও চাহিদা পূরণ না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী জেলা বা ঢাকা থেকে ব্যবস্থা করা হবে। তারা আরও জানান, বন্যায় লেখাপড়ার যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষ করে পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতি এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দেয়া হবে। এদিকে সরকারিভাবে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলা হলেও এর সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেসরকারি কেজি স্কুল, এমপিওবিহীন স্কুল-মাদ্রাসার অনেকগুলো সরকারি হিসেবে উঠে আসেনি। ওইগুলোসহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আড়াই হাজার হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৮৮টি বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫শ’ হবে বলে জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে ডিপিইতে মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে। এ সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক নুরুল আমিন জানান, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৯৩টি শুধু প্রাথমিক স্কুলের ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৫ কোটি টাকা। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। বন্যার পানির নেমে গেলে প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে।

 

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/28/143437/