২৮ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৫৭

নাজিমউদ্দিন রোড রাজধানীর ভবদহ

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের বাসিন্দারা চার দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। সোমবার সকালে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় ওই রোডে। সেই পানি প–রোপুরি নামার আগেই মঙ্গলবার সকালে আবারও বৃষ্টি। পরে রাতে এবং বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিতে এ জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার নেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা দূর হয়নি। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে আছে এ এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।


শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সাবেক ভিপি ও স্থানীয় বাসিন্দা মামুন আহমেদ জানান, ৫০ বছর ধরে এলাকাবাসী এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এলাকার নতুন-পুরনো বাড়ির ভিটি দেখলেই বিষয়টি সহজে প্রতীয়মান হবে। অল্প বৃষ্টিতেই বিশাল জলজট ঘটে। তখন স্যুয়ারেজ আর খাবার পানির লাইন একাকার হয়ে যায়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা প্রতি নির্বাচনে স্থায়ী এ সমস্যা সমাধানের কথা বলে ভোট নেন। ভোটের পর আর কারও দেখা মেলে না। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ নাজিমউদ্দিন রোডকে যশোরের ভবদহ আখ্যা দিয়ে থাকেন। কেননা ভবদহ এলাকার মতোই এখানকার জলাবদ্ধতা মোটামুটি স্থায়ী।

বুধ ও বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, চানখারপুল মোড় থেকে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়ে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি। নাজিমউদ্দিন রোডের শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সামনে থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হোটেল নীরব পর্যন্ত জলাবদ্ধতা। এ পথে যাওয়ার ডানে-বামে আছে চানখারপুল প্রাইমারি স্কুল গলি, নবাববাগিচা, জমিদার গলি, চানখারপুল লেন, শুকুর মিয়ার গলি, নবাববাগিচামুখী বড় শাহী মসজিদ গলি, তাঁতখানা লেন বা কবিরাজ মসজিদের গলি। প্রত্যেক গলিতে কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমর সমান পানি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় চানখারপুল লেনের গৃহবধূ ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। তিনি গলিমুখে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। পানি পার হতে একটি রিকশা পাচ্ছেন না। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে পানি পার হওয়ার সময়ে তিনি জানান, রিকশাওয়ালারা থাকে চান্সে। তার বাসা থেকে বোরহানুদ্দীন কলেজ আধা কিলোমিটারের পথ; কিন্তু ২০ টাকার কমে কেউ যায় না।

বোরহানুদ্দীন কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমান জানান, অল্প বৃষ্টিতেই এ এলাকায় পানি জমে যায়। হোটেল সোহাগ থেকে কলেজের গেট ১০-১৫ গজ। ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকদের তা পেরিয়ে কলেজে ঢুকতে হয় ১৫-২০ টাকা খরচ করে।

নবাববাগিচা এলাকার বাসিন্দা বদরুল ইসলাম জানান, তার বাসার সামনে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এটিসহ নাজিমউদ্দিন রোড এলাকায় ৫-৬টি কেজি স্কুল, কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। জলাবদ্ধতা হলেই ওইসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কমে যায়। কেননা দুর্গন্ধযুক্ত এবং জীবাণুযুক্ত পানি পেরিয়ে অনেকেই বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যায় না। জলাবদ্ধতা নাজিমউদ্দিন রোড ঘিরে হলেও তা বকশিবাজার, নবাবকাটারা এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান খোন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘ওখানকার সমস্যাটি ২০-৫০ বছর আগের। আমি নিজে আজ (বৃহস্পতিবার) ওখানে আমার সব লোক নিয়ে কাজ করে এসেছি। কিছুটা সুফল পেয়েছি। কাল (আজ) সকালে আবার ওখানে যাব। আশা করছি, কাল পানি পুরোপুরি নিষ্কাশন হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নাজিমউদ্দিন রোডের এ জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন। সেটি ত্রুটিপূর্ণ। এ কারণে পানি নামতে পারে না। আমরা এ নিয়ে ওয়াসাকে অনেক লেখালেখি করেছি। মৌখিকভাবে বলেছি। মানুষ আসলে ওয়াসাকে চেনে না। এ কাজের জন্য তারা সিটি কর্পোরেশনকেই দায়ী মনে করে। তাই আমরা ছুটে যাই।’

 

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/28/143441/