২৮ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩৫

ইসরাইলের ইউটার্ন, ফিলিস্তিনিদের উল্লাস

আল আকসা ফের মুক্ত

অধিকৃত জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ইস্যুতে পিছু হটল ইসরাইল। মসজিদটি থেকে মেটাল ডিটেক্টর সরিয়ে নেয়ার দু’দিন পর এবার বাকি ‘নিরাপত্তামূলক প্রতিবন্ধকতা’গুলোও সরিয়ে নিয়েছে দেশটি। মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের পথে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তামূলক অন্যান্য বেষ্টনী বৃহস্পতিবার সকালে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইলি পুলিশ। এর মধ্য দিয়ে বিনা বাধায় আল আকসায় প্রবেশে ফিলিস্তিনিদের দাবি পূরণ হল। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে আল আকসায় নামাজের জন্য মুসলিমদের পুনরায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। আল আকসায় ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। আল আকসা মসজিদটি মুসলিমদের কাছে ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত। এছাড়া ইহুদিদের কাছে এটি ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত অন্যতম পবিত্র স্থান। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনি হামলায় দুই ইসরাইলি পুলিশ সদস্য নিহত হন। এ ঘটনার জেরে জেরুজালেমের পুরনো শহরের ওই মসজিদের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে তেল আবিব।


শুক্রবার আরও কড়াকড়ি আরোপ করে ৫০ বছরের কম বয়স্ক লোকদের আল আকসায় নামাজ পড়তে বাধা দেয় ইসরাইল। এতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী ৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। সংঘর্ষে ৩ ইসরাইলিও নিহত হন। আল আকসায় কড়াকড়ি আরোপের ঘটনায় তুমুল বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন ফিলিস্তিনিরা। অন্যদিকে, ইসরাইলের ওপর এ ধরনের অনায্য কর্মকাণ্ডে তেল আবিবের ওপর চাপ বাড়াতে থাকে জাতিসংঘসহ মুসলিম বিশ্ব। বহির্বিশ্বের চাপ ও বিক্ষোভ প্রতিরোধের মুখে মঙ্গলবার আল আকসার ফটকে মেটাল ডিটেক্টরগুলো সরিয়ে নেয় ইসরাইল। দু’দিন পর বৃহস্পতিবার মসজিদের প্রবেশপথ থেকে সিসি ক্যামেরা, অস্থায়ী উঁচু নিরাপত্তা স্তম্ভসহ বাকি নজরদারি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

ইসরাইলি পুলিশের মুখপাত্র লুবা সামরি বলেন, ১৪ জুলাই হারাম আল শরিফের কাছে সন্ত্রাসী হামলায় দুই ইসরাইলি পুলিশ নিহত হওয়ায় সেখানে যে নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করে তরুণ ফিলিস্তিনি ও স্থানীয়রা সেখানে মিছিল করেছে। আনন্দ মিছিলে অংশ নেয়া এক ব্যক্তি জানায়, ‘গত ১২ দিন ধরে আমরা কেউ ঘুমাইনি, আল আকসা মসজিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ইসরাইলি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ছাড়া আমরা কেউ কোনো কাজ করিনি।’ আরেক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘এ দিনটি একইসঙ্গে আনন্দের, উদযাপনের এবং বেদনার... যেসব ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন কিংবা আহত হয়েছেন তাদের জন্য ব্যথিত বোধ করছি।’

এদিকে, আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ইসরাইল সব ধরনের নজরদারি ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর ওই মসজিদে ফিরে আসার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আল আকসা মসজিদের ভেতরেই এবার নামাজ হবে।’ আল আকসাকে কেন্দ্র করে ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আব্বাস। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ইস্যুতে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আব্বাস বলেন, এখন আমরা শুধু আল আকসায় দুপুরের নামাজ পড়তে পারছি- এটা নিয়ে কথা হবে। বাকি বিষয় বিবেচনা করে বৈঠকের পরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ওই মসজিদ থেকে ইসরাইলি নজরদারি প্রত্যাহারের পর মুসলিম নেতারা সেখানে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণকারী ইসলামিক ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ এ আহ্বান জানিয়েছে। ইসলামিক ওয়াকফ কাউন্সিলের পরিচালক আব্দেল আজিম সালহাব বলেন, ‘আমরা আঙ্গিনায় নামাজ আদায় করতে সক্ষম হব।’ তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের দখলদার বাহিনী দশকের পর দশক ধরে আল আকসা মসজিদের আঙ্গিনা অপবিত্র করার চেষ্টা করে আসছে। এখন আপনারা বিজয়ের নতুন যুগে বাস করছেন। যারা বিক্ষোভের জন্য জমায়েত হয়েছিলেন তাদের প্রত্যেককে আমরা স্বাগত জানাই।’

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি দেশটিতে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করতে চান। অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা নিয়ে স্পর্শকাতর সংবাদ প্রকাশ করছে এমন অভিযোগ এনে বুধবার তিনি এ মন্তব্য করেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, আলজাজিরা টেম্পল মাউন্টকে ঘিরে সহিংসতা ছড়াচ্ছে। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেশ কয়েকবার এ চ্যানেল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। যদি আইনি জটিলতায় এটা সম্ভব না হয়, আলজাজিরা বয়কট করতে প্রয়েজনীয় আইন করার ব্যবস্থা করব।’

 

http://www.jugantor.com/ten-horizon/2017/07/28/143471/