২৮ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩৩

স্মেয়ার ক্যাম্পেইন ও গণতান্ত্রিক সমাজ

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা

কোন জাতির উত্থান ও পতনের বিষয়টি নির্ভর সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর। কারণ, রাজনীতিকদেরকেই জনগণের ভাগ্য নিয়ন্তা হিসেবে মনে করা হয়। এমনই দাবি করা হচ্ছে আবহমানকাল থেকেই। মানুষের সংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জীবন গঠনের নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বনের ধারণা থেকে সমাজবদ্ধ জীবনের পথচলা শুরু হয়। তা ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে মহীরূহে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে তা আধুনিক রাষ্ট্রে রূপ নিয়েছে। দেশ, কাল, পাত্রভেদে আধুনিক রাষ্ট্রের সরকার কাঠামো ভিন্ন হলেও আধুনিক বিশ্ব গণতন্ত্রেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই মোটামোটিভাবে বর্তমান বিশ্বকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বললে অতুক্তি হবার কথা নয় বরং এটিই হচেছ বাস্তবতা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সি এফ ষ্ট্রং গণতন্ত্রের সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে বলেন, ÔDemocracy implies that government which shall rest on the active consent of the governed.’ অর্থাৎ শাসিতগণের সক্রিয় সম্মতির উপরে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত, তাকে গণতন্ত্র বলা হয়।
মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে যে শাসন পরিচালিত হয় সে শাসন পদ্ধতিকে গণতান্ত্রিক শাসন বলে অভিধা দেয়া হয়। একে পরাক্ষভাবে জনগণের শাসনও বলা যেতে পারে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এবং শাসনতন্ত্রের অন্যতম মূলনীতি গণতন্ত্র হলেও আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধটা এখনো ভঙ্গুর। গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা মরণপণ লড়াই করে অনেক ত্যাগ ও কুরবানির বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও এর ফসলটা আমরা এখনও ঘরে তুলতে পারিনি বরং তা অনেকটাই অধরাই রয়ে গেছে।
এর প্রধান কারণই হলো আমাদের দেশের একশ্রেণির রাজনীতিকদের অগণতান্ত্রিক ও নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা। গণতন্ত্র নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হলেও স্বাধীনতার ৪ দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি বা বিকশিত হয়নি। জনগণের ভোটের অধিকার এখনও নিশ্চিত নয়। আর জনগণকে শাসন কাজে শরীক করাও যায়নি। মূলত ফরাসী বিপ্লবের পর ফরাসি শাসকগোষ্ঠী জনগণকে ব্যাপকভাবে শাসনকার্যে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলো বলেই তারা দ্রুততার সাথে দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আমরা স্বাধীনতার পর এই কাজটা করতে শুধু ব্যর্থই হইনি বরং এ বিষয়ে আমাদের চিন্তা-চেতনাও খুবই পশ্চাদপদ। বস্তুত, শাসন কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে দেশে কোনভাবেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কারণ, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে কোনভাবেই ইতিবাচক কোন কিছু করা যায় না। খুব সঙ্গত কারণেই শাসনকাজে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকার কারণেই জাতীয় ইস্যু বা উন্নয়নে সর্বসাধারণের কোন আগ্রহই থাকে না। আর এর বাস্তব ভিকটিম হচ্ছে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
মূলত দেশে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আইনের শাসনও অনেকাংশেই অনুপস্থিত। ফলে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় যাওয়া আর যারা ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বাইরে রয়েছেন তাদের ক্ষমতা দখলের মনোবৃত্তির মধ্যেই আমাদের দেশের রাজনীতি রীতিমত ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে জনগণের ভাগ্যের তো কোন পরিবর্তন হচ্ছেই না বরং নাগরিকরা শ্রেণি বিশেষের স্বার্থ উদ্ধারের কাঁচামালে পরিণত হয়েছে। তাই দেশে কল্যাণমুখী রাজনীতির ধারা সৃষ্টি হয়নি। ফলে দেশের রাজনীতি হয়েছে ব্যক্তি, শ্রেণি ও গোষ্ঠী বিশেষের স্বার্থ উদ্ধারের অন্যতম হাতিয়ার। মূলত সুশাসন ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণেই দেশে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ ও গুপ্তহত্যা রেড়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধেও অপরাধ প্রবণতায় পৃষ্ঠপোষকতা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টির বিষয়টিকে একেবারে গৌণ মনে করার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।
বিষয়টি নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ যেমন বিব্রত, ঠিক তেমনিভাবে উদ্বিগ্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলও। এমনই এক প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘বাংলাদেশে গোপন আটক ও গুম’ শীর্ষক ৮২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব গোপন আটক ও গুমের ঘটনার পারিপার্শ্বিকতাসহ প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। মূলত এইচআরডি এজন্য সরকারের ক্ষমতাকেন্দ্রীক নেতিবাচক রাজনীতিকেই দায়ি করেছে।
সঙ্গত কারণেই এজন্য সরকারের টনক নড়ার কথা এবং এমনসব অভিযোগ খ-নে একটি যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ ও অভিযোগের অসারতা প্রমাণের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি ছিল। বা ঘটনার সত্যতা থাকতে পুনরাবৃদ্ধিরোধে করণীয় নির্ধারণ ও তার বাস্তব প্রয়োগ করা জরুরি ছিল। কিন্তু সরকার সে পথে অগ্রসর হয়েছে বলে মনে হয় না বরং শাক দিয়ে মাছ ঢাকার একটা অগ্রহণযোগ্য প্রয়াসই লক্ষ্য করা গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ‘স্মেয়ার ক্যাম্পেইন’ বা ভিত্তিহীন প্রচারণা বলে দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। যা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।
সরকার ও মানবাধিকার সংস্থার অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে খেলাটা বেশ রাসালো হয়ে উঠেছে বলেই মনে হচ্ছে। এইচআরডব্লিউর প্রকাশিত প্রতিবেদন অগ্রহণযোগ্য ও মিথ্যা প্রচারণা বলে প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারকে পাল্টা জবাব দিয়েছে সংস্থাটি। নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, ‘সত্য বলাটা মিথ্যা প্রচারণা নয়’। ফলে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের সাথে একটি মানবাধিকার সংস্থার খেলাটা বেশ উপভোগ্য হয়েই উঠেছে বলেই মনে হচেছ। সরকার পক্ষ এইচআরডব্লিউকে পেইড সংস্থা বলেও সমালোচনা করেছে। যা শোভনীয় হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ, সরকারের উচিত ছিল প্রকাশিত প্রতিবেদনের অসারতা প্রমাণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং দেশে কোন গুমের ঘটনা ঘটছে না বলে জনমতে স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়া। কিন্তু সরকার তা না করে একটা দায়সারা বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। এক্ষেত্রে সরকার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে বলে মনে হয় না।
উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ কয়েকশ’ ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটক করে গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ সংবাদকে ‘মিথ্যা প্রচারণা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। সরকারের পক্ষে কোন প্রকার যুক্তি প্রমাণ ছাড়াই এমন বক্তব্য সর্বমহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
সরকারের এমন নেতিবাচক মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছে এইচআরডব্লিউ। ‘নো, বাংলাদেশ, দ্য ট্রুথ ইজ নট এ স্মেয়ার ক্যাম্পেইন’ (সত্য বলাই মিথ্যা প্রচারণা নয়) শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে গোপন আটক ও গুম নিয়ে ৮২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ‘স্মেয়ার ক্যাম্পেইন’ বা মিথ্যা প্রচারণা বলে দাবি করেন। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ স্বজনের সন্ধান বা সে বিষয়ে উত্তর পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে তা কঠিনভাবে উপেক্ষা করছেন।
মিনাক্ষী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন তিনি বারবারই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি হাইলাইট করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি ক্ষমতায় গেলে এগুলো বন্ধ করবেন। এখন তার সরকারের পর্যায়ক্রমিক দ্বিতীয় মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার পূর্বসূরিদের মতো শুধু প্রতিধ্বনিই তুলছে না, একইসঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গোপনে আটক করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ ও সমালোচকদের গুম করে দিচ্ছে। এ ছাড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আসলে বাংলাদেশ এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারে এবং তাদের তা করা উচিত।’
সরকার ও এইচআরডি বাকযুদ্ধ চলার মধ্যেই সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলোও সরকারের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ করছেন বেশ জোড়ালো ভাবেই। এখানে বিশিষ্ট কলামিস্ট, কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারের অপহরণের বিষয়টি আলোচনার পাদপীঠে চলে এসেছে। সরকারের গুম ও অপহরণ বিষয়ে বিরোধী দলগুলোর পক্ষে বলা হচেছ, ‘সরকারের সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে, শোনা যাচ্ছে মানুষজন ও আত্মীয়স্বজনদের চিনতে তার কষ্ট হচ্ছে। অথচ তার অপহরণ ঘটনাকে এখন নাটক বানাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। কিন্তু কোনো চক্রান্ত ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনায় সাজানো নাটক মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। মানুষ যা বোঝার তা ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন।’
সরকারি দল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও বিরোধী দলগুলোর উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। এমননি দেশে গুম-অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে বিরোধী দলগুলোর কাছে গুম-অপহরণের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে গুম ও নিখোঁজদের তালিকা চেয়েছেন। সরকারের এমন দাবির প্রেক্ষিতে এক প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা ও তার সন্তানরা এখনও ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় আছেন।
সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও থানা বিএনপি নেতা সাজেদুল হক সুমন, সাজেদুলের খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর),পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভূঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এএম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম (হাবিবুর বাশার জহির), পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল, নিজাম উদ্দিন (মুন্না) ও তরিকুল ইসলাম (ঝন্টু), কাজি ফরহাদ, সেলিম রেজাকে (পিন্টু), ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের হতভাগ্য পরিবার তাদের স্বজনদের অপেক্ষায় আছে। বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের সভাপতি গুম হওয়া এমএ আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমিন ছেলের অপেক্ষায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অসুস্থ হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এদের রোদনভরা অপেক্ষার খবরে তো ওবায়দুল কাদেরের চোখের পানি ঝরবে না।
গুম হওয়া মানুষগুলোর বেশির ভাগই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবি করে বলা হয়, ‘২০১৩ সালের নবেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কেবলমাত্র ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ৭০ দিন গুম করে রাখার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ফেলে আসা হয়। মানবাধিকার সংস্থা এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৫২ জনের এখন পর্যন্ত হদিস পাওয়া যায়নি। অথচ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গুম ও নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ পান না।’ কয়েক দিন আগে গ্রেফতার হবিগঞ্জ যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবর আলীকে আদালতে হাজির না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় প্রেসব্রিফিং এ।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে গুম ও আটকের যে ফিরিস্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা তাদের দল ও ঢাকা মহানগরী কেন্দ্রীক। বাস্তব অবস্থাটা আরও ভয়াবহ বলেই মনে করছেন তথ্যাভিজ্ঞমহল। কারণ, অন্যান্য দল বা দলনিরপেক্ষ সরকার বিরোধী লোকজনদের গুমের তালিকা তাদের লিস্টে আসেনি। সরকারের পক্ষে গুমের তালিকা চাওয়ার প্রেক্ষাপটে ও বিএনপি কর্তৃক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে তালিকা প্রদানের পর বিষয়টি নিয়ে সরকার পক্ষকে খুব একটা উচ্চবাচ্য করতে শোনা যাচ্ছে না। ফলে পরোক্তভাবে সরকার পক্ষ এসব অভিযোগ মেনে নিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। আসলে বাস্তবতাকে অস্বীকার করার তো কোন সুযোগ থাকে না।
মূলত আইন ও সাংবিধানিক শাসনের অনুপস্থিতি এবং উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সমাজের অনুপস্থিতির কারণেই আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। মানুষ প্রতিনিয়ত অধিকার বঞ্চিত হচেছন। ক্ষমতাকেন্দ্রীক নেতিবাচক রাজনীতির যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে দেশের সকল শ্রেণির মানুষ। এমনটিই মনে করা হচ্ছে সর্বমহলে। অবৈধভাবে আটক ও গুম এই অগণতান্ত্রিক ধারার অনুসঙ্গ মাত্র। এ ক্ষেত্রে এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন কতখানি সত্য আর সরকারের দাবি কতখানি যৌক্তিক তা আলোচনা-পর্যালোচনার দাবি রাখে। দেশে বেআইনী আটক ও গুমের ঘটনা আগের দিনের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর সে বিষয়টিকে প্রধান উপজীব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। কিন্তু সরকার এটিকে ঢালাওভাবে স্মেয়ার ক্যাম্পেইন বলেই দায় এড়াতে পারে না বরং একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। যাতে কোন বিভ্রান্তি বা অস্বচ্ছতা থাকলে তা নিরসন করা সম্ভব হয়। মূলত এজন্য একটি জবাবদিহীমূলক গণতান্ত্রিক সমাজের বিকল্প নেই। দেশের মানুষ সেই স্বপ্নের সমাজই কামনা করে।
smmjoy@gmail.com


 

http://www.dailysangram.com/post/293656-