২৭ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:০৯

বৃষ্টি-জলাবদ্ধতায় লণ্ডভণ্ড চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক

যান চলাচলে ভয়াবহ দুর্ভোগ * ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ শুরু করেছে চসিক

চট্টগ্রামে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। বুধবার চান্দগাঁও মৌলবীপুকুর এলাকা থেকে তোলা ছবি -যুগান্তর
টানা এক সপ্তাহের বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক অবকাঠামো অনেকটা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এতদিন জলাবদ্ধতার কারণে সড়কের বেহাল অবস্থা দৃশ্যমান না হলেও পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কের খানাখন্দগুলো ভেসে উঠেছে। ভাঙাচোরা সড়কে যানচলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক যেমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তেমনি উপ-সড়ক কিংবা বাইলেনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরীর অন্তত ৪০ শতাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক হিসাবও দিয়েছে ওই সূত্র। বলা হয়েছে, বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ শুরু হয়েছে। এরপরই প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।

সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কর্পোরেশনের অধীনে নগরীতে মোট ১ হাজার ৪৯ কিলোমিটারের ১ হাজার ৭০০টি সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫৫ কিলোমিটার বিটুমিন (কার্পেটিং) সড়ক রয়েছে। ২৭৩ কিলোমিটারের ১ হাজার ২৭টি কংক্রিট সড়ক, ৯৪ কিলোমিটারের ২৯৪টি ব্রিক সলিং এবং ১২৭ কিলোমিটারের ৪৯৭টি কাঁচা সড়ক আছে। এর মধ্যে কার্পেটিং করা তিনশ’ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রায় এক সপ্তাহ অতি বৃষ্টি হয়। বছরের সর্বোচ্চ জোয়ারটিও হয় এ সময়ের মধ্যে। বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে নগরীর নি¤œাঞ্চলসহ অধিকাংশ এলাকা ও সড়ক ছিল পানির নিচে তলিয়ে যায়। এ কারণে নগরীর সড়ক-মহাসড়কের চেহারা পাল্টে গেছে। বুধবার সকাল থেকে দেখা গেছে সূর্যের মুখ। অধিকাংশ এলাকার পানিও নেমেছে। তাই দৃশ্যমান হচ্ছে সড়কের বেহাল চিত্র। সড়কের বিটুমিন ও ইট-সুরকি উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। নগরীর প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ আরাকান সড়ক, আগ্রাবাদ এক্সেসে রোড, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক এবং মুরাদপুর বিশ্বরোডসহ বেশ কিছু সড়কে ইট ও বিটুমিন উঠে গেছে। এসব সড়কের কোথাও পিচ নেই। কোথাও সরে গেছে ইট। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের। ভাঙাচোরা সড়কে যানবাহন চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। মঙ্গলবার কালামামিয়া বাজার এলাকায় আরাকান সড়কে উল্টে যায় পণ্যবাহী একটি ট্রাক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেশ নাজুক। এ সড়কের খানাখন্দ আর গর্তে যানবাহনের চাকা আটকে যাচ্ছে। এ কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে ৫ মিনিটের রাস্তা পার হতে সময় লাগছে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। টানা বর্ষণে আরাকান সড়ক, জাকির হোসেন রোড, সিডিএ এভিনিউর অধিকাংশ সড়ক, পোর্ট কানেকটিং রোড, কাপাসগোলা সড়ক, হালিশহর সিডিএ আবাসিক এলাকার সড়ক, বাকলিয়া ও মিয়াখান নগর এলাকার ছোটবড় বিভিন্ন সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আগ্রাবাদ বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে ইপিজেড হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের অবস্থাও বেহাল। এছাড়া বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট, ষোলশহর ২নম্বর গেট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী, ষোলশহর ২নম্বর গেট থেকে বহদ্দারহাট সড়কের বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিমানবন্দর সড়ক, স্ট্র্যান্ড রোড, আলকরণ রোড, কদমতলী উড়ালসড়কের ওঠানামার মুখে, দেওয়ানহাট ওভারপাসের সামনের অংশ, পতেঙ্গার চরপাড়া সড়ক বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বুধবার যুগান্তরকে জানান, ‘টানা বর্ষণে নগরীর বেশকিছু সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিহগ্রস্ত হয়েছে। কিছু সড়ক আছে সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায়, সেগুলো উঁচু করার দরকার ছিল। আমরা এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার চেষ্টা করছি। খুব শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করব।’

 

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/27/143239/