২৭ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৭

আবারো ‘বন্দুকযুদ্ধ’

ঢাকা এবং কুষ্টিয়ায় একদিনে ৪ জন নিহত :চলতি বছরে গত ৭ মাসে নিহত ৩৭

আবারো শুরু হয়েছে তথাকথিত ‘বন্ধুকযুদ্ধ’। ঢাকা এবং কুষ্টিয়ায় গতকাল কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৪ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানীর মিরপুরে নিহতরা এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলো বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। অন্যদিকে কুষ্টিয়ায় নিহতরা ডাকাত দলের সদস্য বলে পুলিশ দাবী করেছে। বন্দুক যুদ্ধ বা কথিত ক্রসফায়ার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে ১৫৭ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। আর চলতি বছরের ৬ মাস ২৬ দিনে ৩৭ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ২০১৫ সালে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময় এবং হেফাজতে মোট ১৯২ জন নিহত হন। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২৮। গতকালে ঘটনায়
গতকাল বুধবার সকালে ডিবির পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এএসপি মিজানুর হত্যাকান্ডে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে ওই ঘটনায় আর কারা জড়িত তাদের তথ্য এবং ছবি বেরিয়ে আসে। জাকির ও মিন্টুকে েেগ্রফতারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। রূপনগরে বন্দুকযুদ্ধে তারা দুজনই নিহত হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গতকাল ভোরে রূপনগর এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ের পাশে ছিনতাইকারী দল জড়ো হচ্ছে, এমন গোপন খবর পেয়ে ডিবি পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ছিনতাইকারীরা গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে অন্য ছিনতাইকারীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জানতে চাইলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ইনকিলাবকে বলেন, র্যাব পুলিশের সদস্যরা সন্ত্রাসী জঙ্গি বা অপরাধীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে বিভিন্ন অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হচ্ছেন। সন্ত্রাসীদের গুলিতে অনেক সময় পুলিশ অফিসার নিহতও হয়েছেন। আহত হচ্ছেন প্রায়ে। র্যাব পুলিশ ইচ্ছা করেই গুলি করে না। তাদের জানমাল রক্ষার্থে মাঝে মধ্যে পাল্টা হামলা করে। বেশ কয়টি ঘটনার তদন্তও হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা আহত নিহত হচ্ছেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেছেন,বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড থেমে নেই। এটা দেশের জন্য ও সুশাসনের জন্য বড়ই উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিত ছিল উদ্বেগজনক। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যা, ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ এবং ২০১৭ সালেও বিনা বিচারে আটক, গ্রেফফতার এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে।
এর আগে ২০১৬ সালে কথিত ক্রসফায়ারে মারা গেছে ১৫৭ জন। দেশে গুম খুন ও বন্ধুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মানবাধিকার সংগঠনের নেতা কর্মীরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত ৩২০ জনের বেশি মানুষ গুম হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে অভিযুক্ত আসামি, সেনা সদস্য এবং বিরোধী দলের সমর্থক। এদের মধ্যে ৫০ জনকে পরে হত্যা করা হয় এবং ডজনের মতো এখনও ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। অপহরণের শিকার কিছু লোকদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা আদালতে হাজির করা হয়েছে। এ ধরনের নিখোঁজের ঘটনা এখনও ঘটছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সমর্থকদের নিখোঁজ করা হচ্ছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০১৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং মিডিয়া ৯০টির বেশি ঘটনা লিপিবদ্ধ করে। এর মধ্যে ২১ জনকে হত্যা এবং ৯ জন এখনও নিখোঁজ।
বর্তমান সরকারে ক্ষমতার প্রথম দফায় প্রথম বছরে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড ঘটে ২২৮টি। তাদের প্রথম দফার ৫ বছরের শাসনামলে সব মিলিয়ে বিচারবর্হিভূত হত্যার সংখ্যা ৬২৪ জন। আর ২০১৪ সালের প্রথম মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটেছে ৪২টি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গত ১০ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার ১৯৭৩ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, এসব ঘটনার বিপরীতে, নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাখ্যা সব সময় গৎবাঁধা। তাই বরাবরি সন্দেহ উঁকি দিয়েছে। এই ক্রসফায়ারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হচ্ছে। কখনো বলা হচ্ছে ক্রসফায়ার, কখনো এনকাউন্টার। কিন্তু হাল আমলে আরেকটি নতুন শব্দ আমদানি করা হয়েছে। সেটি হলো বন্দুকযুদ্ধ। বন্দুকযুদ্ধ সেটিই হয়, যেখানে দুইটি পার্টি গোলাগুলী করে। কিন্তু বন্দুকযুদ্ধের যেসব গল্প এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রেস রিলিজে দেয়া হচ্ছে সেগুলো সবই মোটামুটি একই ধরনের এবং গৎবাঁধা।
কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ডাকাত নিহত
স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : কুষ্টিয়ায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সোবহান আলী ও হাসানুজ্জামান লালন নামের দুই ডাকাত নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি বিদেশী পিস্তল, দেশীয় তৈরি পাইপগান, একটি শার্টারগান, ৩ রাউন্ডগুলি, ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত করাত ও রামদা উদ্ধার করেছে। ভেড়ামারা থানার ওসি নুর হোসেন খন্দকার জানান, তারা মঙ্গলবার গভীর রাতে জানতে পারেন, ভেড়ারামার দশমাইল নামক স্থানে একদল ডাকাত ডাকাতি করছে। এ সময় ভেড়ামারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সেখানে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে এক ডাকাত নিহত।
পুলিশ জানায়, নিহত ডাকাত হাসানুজ্জামান লালন গাংনীর মনোহরদিয়া গ্রামের আলীম উদ্দিনের ছেলে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি শর্টারগান, এক রাউন্ডগুলি ও করাত উদ্ধার করে। পুলিশের দাবি, এ সময় ভেড়ামারা থানার ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ জানায়, নিহত লালনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এদিকে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, আটক ডাকাত সোবহান আলীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক থানা পুলিশ মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়াদি গোরস্তান এলাকায় তাকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়। এসময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুুলিশ তাদের উপর পাল্টা গুলি চালালে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে সোবহান আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটা বিদেশী পিস্তল, একটি দেশীয় বন্দুক, এক রাউন্ড গুলি ও ৩ রাউন্ড গুলির খোসা, একটি চাইনিজ কুড়াল ও একটি হাসুয়া উদ্ধার করে। নিহত সোবহানের নামে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও কুমারখালী থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে ৮টি মামলা রয়েছে বলে ওসি নাসির উদ্দিন দাবি করেন।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/89208/