মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার গাঁওদিয়া গ্রাম থেকে তোলা l প্রথম আলো
১৭ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ৭:৫৭

লৌহজংয়ে পদ্মার ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের গাঁওদিয়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন তীব্র হচ্ছে। গত ১৫ দিনে নদীতে বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় ঘরছাড়া হয়েছে কমপক্ষে ১৭টি পরিবার। ভাঙনের মুখে আছে আরও পাঁচ শতাধিক বসতঘর।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২২ বছর আগে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে ইউনিয়নের অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া গাঁওদিয়া ইউনিয়নের রানাদিয়া, হাড়িদিয়া, বড় মোকাম ও গাঁওদিয়া গ্রামের একাংশ বিলীন হয়ে যায়।
গত কয়েক দিনে সরেজমিনে দেখা যায়, গাঁওদিয়া থেকে সামুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন ধরেছে। গাঁওদিয়ার ডাক্তারবাড়ি থেকে ওয়াজের মাঠ এলাকা পর্যন্ত পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের শিকার অসহায় মানুষ ঘর, গরু, ছাগল সরানো এবং গাছপালা কাটায় ব্যতিব্যস্ত।
ভাঙনকবলিত এলাকার শিখা রানী দে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন কোথায় যাব। আমাদের ঘরবাড়ি আর কোথায় পাব। সরকার যদি আগে কোনো ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজকে এই অবস্থা হতো না।’
গাঁওদিয়া গ্রামের সঞ্জয় কুমার দে বলেন, ‘চোখের সামনেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাপ-দাদার বসতভিটা। পদ্মার ভাঙনে নিঃস্ব হলেও কেউ আমাদের জন্য কিছু করছে না। তবে অনেকেই আসছে, খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসও দিচ্ছেন। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেউ।’
গ্রামটিতে এরই মধ্যে মফিজ মিয়া, আনোয়ার হোসেন, মালেক শেখ, অজিত ডাক্তার, শফিক শেখ, কালু শেখ, সেরাই ড্রাইভারসহ অনেকের বসতঘর বিলীন হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন গাঁওদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ফসলি জমিসহ শতাধিক বসতবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভাঙনকবলিত এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ভাঙন রোধে খুব শিগগিরই বড় ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিল। তাদের প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। এ নিয়ে একটি জরুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তবে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না।’
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় পদ্মার ভয়াবহ রূপ দেখা যায়। কুমারভোগ থেকে গাঁওদিয়ার দহড়ী গ্রাম পর্যন্ত তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। প্রতিবছর এখানে অনেক টাকার কাজও করা হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আমার বসতবাড়ি এ পর্যন্ত তিনবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। গাঁওদিয়ার ভাঙনকবলিত এলাকার কাজের জন্য পানিসম্পদমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার জমা দেওয়া হয়েছে। উনি আমাকে কথা দিয়েছেন জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ দেবেন। আমি আশা করি, দু-তিন দিনের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব।’

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1254916/