টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে প্লাবিত বৃহত্তর চট্টগ্রাম -সংগ্রাম
২৬ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১২:০১

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢল ॥ বৃহত্তর চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

টানা প্রবল বর্ষণ, অমাবস্যার ভরা জোয়ার, পাহাড়ি ঢল ও কাপ্তাই হ্রদের পানি ছাড়ায় বৃহওর চট্টগ্রামে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানিতে নগরী ও জেলার নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে পুকুর, মাছের ঘের, খালবিল। ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়েছে। জোয়ারের পানি, কাপ্তাই লেকের পানি, বৃষ্টির পানিতে অনেক এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে সব দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। পানির পাশাপাশি দোকানপাট বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পানি নামলেও নষ্ট হয়ে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য। পচে যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে খাতুনগঞ্জে ৩শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে লাইটার জাহাজে করে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। একশ'র বেশি মাদার বেসেল অলস বসে রয়েছে বহিঃনোঙ্গরে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগড়ব বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথির প্রভাব এবং জলবায়ুগত কারণে বঙ্গোপসাগরে মঙ্গলবার দেশে সর্বোচ্চ জোয়ার হয়েছে। জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮ ফুটের মতো ছিল।
আবহাওয়াবিদরা জানান, জোয়ারের সময় স্বাভাবিক নিয়মে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। নগরীতে কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, অমাবস্যার জোয়ার, ভারি বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল, উজান থেকে বেয়ে আসা পানি এবং কাপ্তাই লেকের পানি ছেড়ে দেয়া। আবহাওয়াবিদরা মনে করেন, গত কয়েকদিন ধরে জোয়ারের সময়ও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জোয়ারের সময় এমনিতেই বিভিন্ন খাল দিয়ে নগরীতে পানি প্রবেশ করে। ওইসময় ভারি বৃষ্টিপাত হলে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যায় খাল-নালার। এতে জলজটের সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অমাবস্যার কয়েকদিন জোয়ারের পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়টি পূর্ণিমার সময়ও প্রযোজ্য। বর্তমানে অমাবস্যার প্রভাবে একদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে জোয়ারের পানি। আবার সেই সময়ে ভারি বর্ষণ হওয়ায়ও পানির উচ্চতায় প্রভাব পড়ছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, অতি বৃষ্টির পানির সাথে ভরা জোয়ারের কারণে কর্ণফুলী নদীর পানি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ সীমার প্রায় ৩ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পানিও নগরের ঈানিবদ্ধতায় চাপ বাড়াচ্ছে। আবার পাহাড়ি অতি বৃষ্টির পানি কাপ্তাই হ্্রদের জলসীমা অতিক্রম করাতে বাঁধ কর্তৃপক্ষ প্রতি সেকেন্ডে ৩৬ হাজার কিউসেক পানি ছাড়ছে। একই সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে আরো ২৬ হাজার কিউসেক জল প্রতি সেকেন্ডে কর্ণফুলীতে নামছে। তাছাড়া হালদাসহ শাখানদীগুলোর পানিও কর্ণফুলী নদীতে এসে পড়ছে। সে পানিও কর্ণফূলী নদীর জলসীমা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে এইচাপ পড়ছে নগরের ঈানিবদ্ধতা সমস্যায়। বাড়ছে নগরের জলজট ও জনদুর্ভোগ।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বি.এন.পি’র সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বি.এন.পি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা:শাহাদত হোসেন বলেছেন, ১৯৯৫ সালের ড্রেনেজ মাষ্টার প্ল্যানের সঠিক বাস্তবায়ন সহ পাহাড় কাটা বন্ধ, চট্টগ্রামের চাক্তাই খাল, মহেশ খাল, বীর্জ খাল, রাজাখালী খাল, মীর্জা খাল, মনোহরদী খাল সহ সমস্ত খাল খনন কর্ম সূচীর মাধ্যমে পলিথিন ও ককশীটের যত্রতত্র ব্যবহার বন্ধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নালা নর্দমা পরিষ্কার কর্মসূচী, খালের সীমানা নির্ধারণ, বেঁড়ি বাধ নির্মাণ, কর্ণফুলীর নব্যতা বৃদ্ধি সহ, নগর পরিকল্পনা বিদদের সম্বয়ের মাধ্যমে স্বল্প, মাধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচীর মাধ্যমে চট্টগ্রামে ঈানিবদ্ধাতা দূরীকরনের ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। ডা: শাহাদাত হোসেন আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চট্টগ্রাম সর্বোচ্ছ রাজস্ব দেয়ার পরেও চট্টগ্রামর প্রতি বিমাতা সূলভ আচরণ করাহচ্ছে। বহাদ্দার হাট থেকে বারাই পাড়া হয়ে খাজা রোড, কর্ণফুলী পর্যন্ত একটি বাই-পাস খাল খনন পরিকল্পনা করতে দশ বছর সময় ব্যায় হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক গুলো মেরামতে ব্যাপক দূরর্নীতির কারণে স্বল্প সময়ে সড়ক গুলো এই বিহাল দশা হয়েছে। অভিল্বম্বে খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ না করলে এবং ড্রেনেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে নগরির লক্ষ লক্ষ মানুষের দূর্ভোগের সীমা থাকবে না। চট্টগ্রামের বাকলিয়া, চাক্তাই- খাতুনগঞ্জ বশির হাট, পথর ঘাটা, ঈানিবদ্ধতা পরিদর্শন কালে তিনি এই কথা বলেন।
কয়েকদিনের টানাবর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়া ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়ার ওয়ার্ডের ইছাক্কার পুল, রাজাখালী রোড, আবদুর ছোবাহান ও আবদুর নুরের কলোনী, তুলাতলী জামাই বাজার, রাজাখালী বৌবাজারের পানি বন্দী মানুষের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করলেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি প্রত্যক্ষ করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।
গত কয়েকদিনের অবিরাম ভারি বর্ষণে সৃষ্ট প্লাবনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলাগুলোতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ডুবে গেছে ফসলি জমি। কোন কোন স্থানে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে বসত বাড়ি।
রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই সংবাদদাতা জানায়, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ বাড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে কাপ্তাই হ্রদের বাঁধের সবক’টি স্পিলওয়ে দুই ফুট করে খুলে দেওয়া হয়েছে। ১৬টি স্পিলওয়ে খুলে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৩৬ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে। পাশাপাশি কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪টি ইউনিট চালু রেখে টারবাইনের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে আরো ২৬ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে সর্বোচ্চ ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ১৬টি স্পিলওয়ে ও ৪টি টারবাইনের মাধ্যমে একসাথে সেকেন্ডে ৬২ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে পড়ায় ভাটি অঞ্চল রাঙ্গুনিয়ার ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর ডুবে গেছে।
কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আবদুর রহমান ১৬টি স্পিলওয়ে ও ৪টি টারবাইনের মাধ্যমে সেকেন্ডে একসাথে ৬২ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলী নদীতে ফেলা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন। এদিকে কাপ্তাই হ্রদের ছেড়ে দেয়া অতিরিক্ত পানি ও তিনদিনের টানা বৃষ্টির পানিতে রাঙ্গুনিয়ার আরো ২০ গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে। এসব এলাকার কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের ছেড়ে দেয়া পানি ও টানা বৃষ্টিতে কর্ণফুলী নদীর পাড় উপচে পড়ে রা্গংুনিয়ার কমপক্ষে ৩০টি গ্রাম ডুবে গেছে। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ইউনিয়নের ধোপাঘাট, কাঠালতলি, সরফভাটা ইউনিয়নের পাইট্ট্যালিকুল, ভুমিরখীল, কানুরহাট, পূর্ব সরফভাটা, পশ্চিম সরফভাটা, আসকর আলী সড়ক, শিলক ইউনিয়নের ধোপাঘাট, ফকিরাঘাট, ডংগেরমূখ, মরিয়মনগর ইউনিয়নের কাটাখালি, বালুগোট্টা, সওদাগরপাড়া, রশিদিয়া পাড়া, চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের ফেরিঘাট, কদমতলি, মোল্লাপাড়া, ফকিরপাড়া, ও পৌরসভার ইছামতি, ইছাখালি, নোয়াগাঁও গোডাউন ও ফকিরাখীল গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি ডুবেছে পানিতে। রাঙ্গুনিয়ার বৃহত্তর গুমাই বিল ডুবে আছে কয়েকদিন ধরে। গুমাইবিলসহ রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন বিলে পানির নিচে প্রায় এক’শ হেক্টর রোপা আমনের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
সাতকানিয়া থেকে সংবাদদাতা জানায়, কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সাতকানিয়ায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক বসত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। কেরানীহাট-বান্দরবান ও সাতকানিয়া-বাঁশখালী সড়কের কয়েকটি স্থান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো পানির নিচে ডুবে গেছে। শঙ্খ ও ডলু নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি শঙ্খ নদীর ভাঙনও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত রবিবার শঙ্খের ভাঙনে ১৩টি বসত ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানায়, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত, শঙ্খ, ডলুনদী ও হাঙর খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে বাজালিয়া, কেঁওচিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, ছদাহা, আমিলাইষ, চরতি, নলুয়া, ঢেমশা, খাগরিয়া ও সাতকানিয়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এরমধ্যে সাতকানিয়া পৌরসভার চরপাড়া, ছিটুয়া পাড়া, আমিলাইষের নতুন চর পাড়া, চরতির দ্বীপ চরতি, দক্ষিণ চরতি, দক্ষিণ ব্রাহ্মণ ডেঙ্গা, দক্ষিণ তুলাতলি, পূর্ব ছাদাহা ও উত্তর ছদাহা এলাকার অনেক বসত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে উঁচু এলাকায় আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা কবলিত এসব এলাকার অভ্যন্তরীন সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে শঙ্খনদীর ভাঙ্গনও তীব্র আকার ধারন করেছে। সোমবার একদিনে শঙ্খের ভাঙনে চরতিতে ৩টি, নলুয়ায় ৫টি ও আমিলাইষে ৫টি বসত ঘর নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে।
আনোয়ারা সংবাদদাতা জানায়, টানা বর্ষণ ও সাগরের জোয়ারে আনোয়ারায় পানির উচ্চতা আরো বেড়েছে। ৩ থেকে ৫ ফুট জোয়ারে তলিয়ে গেছে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের অন্তত ৩৫টি গ্রাম। সোমবার বৃষ্টির কারণে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে পূর্ব আনোয়ারার কয়েকটি গ্রাম। ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। উপজেলার কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে উপজেলার ৩২০ হেক্টর আমনের বীজতলা, ১২শ হেক্টর আউশ ফসল ও ৫ হেক্টর সবজির পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকায় পুরো আনোয়ারা এক রকম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম-আনোয়ারা প্রধান সড়ক। ওষখাইন-সত্তারহাট সড়কসহ উপজেলার বেশিরভাগ সড়কও এখন পানির নিচে। এতে উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পটিয়া সংবাদদাতা জানায়, বোয়ালখালী উপজেলায় গত দুইদিনের ভারি বর্ষণ ও কর্ণফুলীর জোয়ারে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরণদ্বীপ, শ্রীপুর-খরণদ্বীপ, কধুরখীল, পশ্চিম গোমদন্ডী, শাকপুরা ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদী র্তীরবর্তী এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছে পড়েছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়াই যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। পানির তোড়ে অন্তত: ১০টি স্থানে রাস্তা বিছিন্ন হয়ে কালুরঘাট-ভান্ডারজুড়ি সড়কে যান চলাচল গত দুইদিন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এদিকে ভারি বর্ষণে কড়লডেঙ্গায় পাহাড়ি ঢলে মো. মতিউর রহমান (৩২) নামের একব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। গত রবিবার কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে লেবু আনতে গিয়ে তিনি পাহাড়ি ঢলে পড়ে যান। নিখোঁজ মো. মতিউর রহমান উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়লডেঙ্গা চম্পা তালুকদার পাড়ার ইউছুপ নবীর ছেলে। গত সোমবার উপজেলার প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানির তোড়ে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তার উপরের সারফেস উঠে গিয়ে অধিকাংশ স্থানে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোথাও নৌকা দিয়ে এলাকার শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ চলাচল করছেন। উত্তরাঞ্চলের অন্তত: ২০টি প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি মাদ্রাসার আঙ্গিনায় পানিতে সয়লাব হওয়াতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ওইসব প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরার মুসলিম পাড়া, বড়–য়া পাড়া, মাস্টার পাড়া, শেখ পাড়া শ্রীপুরের ভারাম্ভা ঘাট এলাকা, খরণদ্বীপের জেলে পাড়া, চরণদ্বীপর ঘাটিয়াল পাড়া, বড়–য়া পাড়া, পশ্চিম চরণদ্বীপ, কধুরখীলের গুইলধ্যাখালী, নাজিরখালী, জামতল ও মুক্তিযোদ্ধা রিভার ভিউ, পশ্চিম গোমদণ্ডীর চরখিদিরপুর, চরখিজিরপুর, শাকপুরার পশ্চিমাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় জোয়ারের সময় প্রায় কয়েক হাজার ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে রান্নাসহ অন্যান্য গৃহস্থালী কাজে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়াতে ৫শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নদী তীরবর্তী ও সমতলের প্রায় ক্ষেত খামারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষনে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/293338-