২৬ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:৫৪

পুরান ঢাকার শ্যামবাজার

ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা

পুরান ঢাকার শ্যামবাজার ক্রমেই জৌলুস হারাচ্ছে। একসময়ের একক আধিপত্য করা পাইকারি বাজার এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এতে পাইকারি পণ্যের বৃহৎ এ বাজারে কমছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এজন্য যানজট, রাস্তার বেহাল দশা, ট্রাকে চাঁদাবাজি, দুষ্ট সিন্ডিকেট এবং বাজার অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রাখা এ পাইকারি বাজারের উন্নয়নে সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। এতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া ব্যবসায়ীরা মোটা অংকের বিনিয়োগ লোকসানের ঝুঁকি থেকে বাঁচবে। পাশাপাশি কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষা পাবে।


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্যামবাজারজুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। হাটের আবর্জনায় ভরে গেছে বুড়িগঙ্গার তীর। রাস্তা বা ফুটপাতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার ছড়াছড়ি। এছাড়া বাজারের রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা। একটু বৃষ্টিতেই এ ব্যবসা কেন্দ্রের বেচা-বিক্রি থমকে যাচ্ছে। পথচারীদের পায়ের গোড়ালি সম্পূর্ণ কাদায় ডুবে চলাচল করতে দেখা গেছে। রিকশা, ঠেলাগাড়ি এবং মালামাল বহনকারী ট্রুলিতে সেখানকার রাস্তায় প্রতিদিন সৃষ্টি হয় মারাত্মক যানজট। এতে দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা পড়েন বিপাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি সিন্ডিকেট অনৈতিকভাবে ছোট পিক্যাপভ্যান শ্যামবাজারের রাস্তায় পার্কিং করে রাখে। ফলে সৃষ্টি হয় জানযটের। তাই বন্দর থেকে আসা বড় ট্রাকে পণ্য খালাস করতে অনেক বেগ পেতে হয়। আবার আমদানি পণ্য নিয়ে যেসব গাড়ি আড়তে আসে ওই সিন্ডিকেট প্রতি ট্রাকের জন্য আড়ত থেকে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা নেয়। আর বাজারে আসা পাইকারদের পণ্য পরিবহনের জন্য সিন্ডিকেটের ছোট পিক্যাপভ্যান ব্যবহারে বাধ্য করা হয়। জানতে চাইলে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান পাটোয়ারী যুগান্তরকে বলেন, আমরা এসব পিক্যাপভ্যানকে বাজার থেকে সরিয়ে নিতে বললেও কোনো কাজ হয় না। আমরা তাদের নির্দিষ্ট কোনো গ্যারেজে পার্কিং করতে বলার পরও তারা দাপট দেখিয়ে অনৈতিকভাবে এসব পিক্যাপভ্যান যত্রতত্র পাকিং করে রাখে। ফলে বাজারের রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

বাজারের আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্যামবাজারে পণ্য পরিবহন সমস্যা বড় আকার ধারণ করেছে। শ্যামবাজার থেকে শুরু করে চারপাশের সব রাস্তা ব্যস্ত থাকে। বিভিন্ন দেশ ও জেলা থেকে আসা কৃষিপণ্য কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা দ্রুত নিজ গন্তব্যে যেতে চান। কিন্তু দেখা গেছে, রাস্তার বেহাল দশা ও যানজটের কারণে পণ্য কিনে নিয়ে যেতে দিনের অর্ধেক সময় লেগে যায়। একদিকে অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় অন্যদিকে দীর্ঘ যানজটে পড়ে সময় নষ্ট হওয়ায় পাইকারদের মধ্যে শ্যামবাজারে আসা নিয়ে অনীহা তৈরি হয়েছে। আর শ্যামবাজার বণিক সমিতি এবং ৪৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় বাজারের কোনো সমস্যারই সমাধান হয় না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আড়তদার জানান, নগরীতে নতুন অনেক আড়ত হয়েছে। ভয়াবহ যানজটের কারণে কাঁচামালের ব্যবসায়ীরাও কম আসেন শ্যামবাজারে। চলে যান যাত্রাবাড়ী অথবা কারওয়ানবাজারে। তাই শ্যামবাজার আগের মতো আর জমে না। এছাড়া এখানে নানা দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ঢাকার অন্যান্য মোকামের পাইকাররা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনছেন। যার কারণে ঐতিহ্যের এ পাইকারি বাজার জৌলুস হারাচ্ছে।

সূত্রাপুর থানাধীন শ্যামবাজার, ফরাশগঞ্জ রোড ও লালকুঠি এলাকাজুড়ে কৃষিপণ্যের পাইকারি ব্যবসা গড়ে উঠেছে। পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরঘেঁষে প্রায় শত বছর আগে শুরু হয় কৃষিপণ্যের ব্যবসা। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০টি আড়ত এবং ৫০ থেকে ৫৫ জন আমদানিকারক। আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, আলু, শাকসবজিসহ কৃষিপণ্য বিক্রি হচ্ছে এখানে। শ্যামবাজারের প্রবীণ আড়তদার হাজী শাহাবুদ্দীন বলেন, এক সময় কৃষিপণ্যে ভরপুর ছিল এ শ্যামবাজার। তবে আগের তুলনায় এখন অনেক কম। নদীপথে দিনের বেলায়ই এখানে পণ্য আসত সবচেয়ে বেশি। মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা, ট্রুলার ও লঞ্চবোঝাই কাঁচামাল নামে শ্যামবাজারে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা পণ্য এ হাটে নামে।

http://www.jugantor.com/industry-trade/2017/07/26/143031/