২৬ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:৪১

উদ্বিগ্ন সাত কলেজের দুই লাখ শিক্ষার্থী

শিগগিরই সংকট কাটছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের দুই লাখ শিক্ষার্থীর। আইন অনুসারে এ কলেজগুলো এখনও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ সংশোধনের কাজ এখনও শুরু হয়নি। উল্লেখ্য, এ আইন অনুযায়ী, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠদানকারী দেশের সব মহাবিদ্যালয়ই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের তথ্য নতুন করে সংরক্ষণের কাজেও নেই কোনো অগ্রগতি। এসব কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীরা। গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনকে এই সাত কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীরা জানান, কলেজগুলো অধিভুক্ত করার পরও ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চরম গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য, ছবি সিডি আকারে দেওয়া হলেও এ প্রতিষ্ঠান তা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করেনি। তারা ঢাকা কলেজকে এসব তথ্য সংরক্ষণ করতে বলে। ঢাকা কলেজ এসব তথ্য মাসের পর মাস ফেলে রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর কোনো মনিটরিংও করেনি। তাই সাত মাস পরও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ১৮ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের বৈঠক হয়। সেখানে পরীক্ষার তারিখসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পেঁৗছানো হয়নি।

উদ্বিগ্ন সাধারণ শিক্ষার্থীরা :রাজধানীর ইডেন সরকারি মহিলা কলেজে ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্রী কান্তা আক্তারের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। বাস্তবে তা হয়েছে ২০১৫ সালের শেষে। এরপর তিনি একই কলেজে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে ভর্তি হন। এই ব্যাচের মাস্টার্স পরীক্ষা নিয়মানুসারে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা হয়নি। এরই মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার কলেজসহ রাজধানীর মোট সাতটি কলেজের অধিভুক্তি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। তার পর গত পাঁচ মাসেও পরীক্ষা-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাচ্ছিলেন না তারা। কান্তা জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত কলেজগুলোর যারা তাদের সঙ্গে পড়তেন, তাদের সবার মাস্টার্স পরীক্ষা আরও দুই মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে। বিশেষত এ কারণেই বিক্ষুব্ধ হয়ে পরীক্ষা না হওয়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে পরীক্ষার তারিখ ও সময়সূচির দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

কান্তা আক্তার বলেন, 'গত

রোববার পরীক্ষার সূচি ঘোষিত হলেও আমরা নিশ্চিত নই। কারণ এর আগেও কলেজ থেকে কয়েক দফায় মাস্টার্স পরীক্ষার তারিখ জানানো হলেও আদতে তা হয়নি। তা ছাড়া পরীক্ষা আগের সিলেবাসেই হবে, নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন সিলেবাস তৈরি করবে, তাও বোঝা যাচ্ছে না।'

ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী জান্নাতুল খাদিজা তামান্না জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় দ্রুতই তাদের অনার্স শেষ হয়েছিল। মাস্টার্সে ওঠার পর অধিভুক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার সময় আমাদের অনেকের বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষ করতে দেওয়া হলেও ভাইভা ও প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা পরে আর নেওয়া হয়নি। আমাদের সিনিয়র ব্যাচেরই মাস্টার্স পরীক্ষা হয়নি, আমাদের তাহলে কবে হবে?'

তিতুমীর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম সমকালকে জানান, ভর্তির সময় আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফি পরিশোধ করে রেজিস্ট্রেশন করি। এখন কলেজ থেকে বলা হচ্ছে, আমাদের নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

একাধিক ছাত্রছাত্রী জানান, একই ব্যাচের সহপাঠীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা শেষ করে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় তাদের মনে সেশনজটসহ নানা শঙ্কা ভর করে। তাই তারা বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য :এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চেয়ে ও অনেক পীড়াপীড়ি করে এই সাতটি কলেজের দায়িত্ব নিয়েছেন। আইনগত কারণে আমরা কিছু বলতে পারছি না। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।' উল্লেখ্য, বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সরকারি কলেজের প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণসহ নানা খাত থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ যুক্ত হওয়ায় আয় বাড়বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সমকালকে বলেন, 'শিক্ষামন্ত্রী যদি এ ধরনের কথা বলে থাকেন, তা সঠিক বলেননি। কারণ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এ সাত কলেজের দায়িত্ব নিয়েছি। এখানে পীড়াপীড়ির বিষয় নেই।'

এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, 'সাত কলেজের ব্যাপারে আমাদের যা বক্তব্য, তা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে দিয়েছি। এর বাইরে আর কোনো বক্তব্য নেই। এসব কলেজের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেসব তথ্য চেয়েছে, তা যথাসময়েই দেওয়া হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'শুনেছি, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমাধানে শিক্ষা সচিব দায়িত্ব পেয়েছেন। এ সংকট নিরসনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যা করণীয় তা করবে। সচিবকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।'

 

http://bangla.samakal.net/2017/07/26/311391