‘শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আল-আকসার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করব’ লেখা ব্যানার নিয়ে গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ :এএফপি
২৬ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:৩৮

আল-আকসা থেকে মেটাল ডিটেক্টর সরিয়েছে ইসরাইল

মন্ত্রিসভার ভোটে জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদের প্রবেশপথ থেকে বিতর্কিত মেটাল ডিটেক্টর সরিয়ে নিয়েছে ইসরাইল। গতকাল মঙ্গলবার ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটির পর ফল অনুসারে মেটাল ডিটেক্টর সরানো হয়। এর পরিবর্তে মন্ত্রিসভা কম দৃশ্যমান কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এখন থেকে সব নিরাপত্তা দল তাদের তল্লাশির কাজে মেটাল ডিটেক্টরের পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তি বা অন্য কোনো উপায় ব্যবহার করবে। বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, নতুন যন্ত্রপাতি ও অতিরিক্ত পুলিশ অফিসারদের জন্য ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গত ১৪ জুলাই আল-আকসা মসজিদের কাছে দুই পুলিশ খুন হওয়ার পর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এরপর মসজিদের প্রবেশপথে মেটাল ডিটেক্টর স্থাপনসহ আরোপিত হয় বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ। এমনকি জুমার নামাজেও মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে থাকেন ফিলিস্তিনিরা। শনিবার বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায় ইসরাইলি নিরাপত্তাবাহিনী। এ দিনের বিক্ষোভ চলাকালে আরো দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তা সত্ত্বেও মেটাল ডিটেক্টরে নিরাপত্তা তল্লাশি না মানার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় জানিয়েছে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিরা।
১৯৬৭ সালে যখন ইসরাইল এই এলাকায় প্রবেশাধিকার পায় তখন শুধু মুসলিমরাই আল-আকসায় নামাজ পড়তে পারত। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় প্রার্থনার সুযোগ পেত ইহুদিরা। মেনে চলতে হতো অনেক নিয়ম। বিগত ৫০ বছরে এই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। আর ইসরাইল এখন আল-আকসার দখল নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের ভাষ্য অনুযায়ী, জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভে পুলিশি অ্যাকশনে ৪৫০ মানুষ আহত হয়েছে। অন্যান্য সংবাদমাধ্যম সূত্রে পশ্চিম তীরেও প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনির আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যার পর ইসরাইল সরকারের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
তিনি মনে করেন, নিরাপত্তা অজুহাত মাত্র। এটি স্রেফ ইসরাইলিদের নিয়ন্ত্রণ আরোপের একটি কৌশল।
এজন্য তিনি ইসরাইলের সাথে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে মাহমুদ আব্বাস বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশের বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা বাতিল করা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সব পর্যায়ে ইসরাইলিদের সাথে সব রকম যোগাযোগ আমরা বিচ্ছিন্ন করছি।
সার্বিক পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি স্থাপনের জন্য ক্ষমতাধর দেশ ও সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত কোয়ারটেট গ্রুপ বা চতুষ্ঠয় সংস্থা উদ্বেগ জানানোর পর ইসরাইল ইঙ্গিত দিচ্ছিল তারা এখন নিরাপত্তা বিধানের ভিন্ন কোনো পদ্ধতির কথা বিবেচনা করছে। জাতিসঙ্ঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত এর আগে প্রাচীন পরিত্র নগরীটিতে উত্তেজনা ‘বিপজ্জনকভাবে’ বেড়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেন। নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদ মেটাল ডিটেক্টরের পরিবর্তে উন্নত প্রযুক্তি ও অন্যান্য পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে নিরাপত্তা নজরদারির জন্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সুপারিশ মঞ্জুর করেছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/238817