১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৮:০৫

নগদ আদায় হ্রাসে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমছে

তিন মাসে আদায় ৩১৮ কোটি টাকা

দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। এতে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকে নগদ আদায় কমে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতার ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ব্যাংকিং খাতে পুঞ্জীভূত অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তিন মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ৩১৮ কোটি টাকা। এ হিসাব গত ডিসেম্বর প্রান্তিকের। এক বছর আগে একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৩২৭ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, নগদ আদায় কমে যাওয়ায় এক দিকে ব্যাংক যেমন বিনিয়োগ সক্ষমতা হারাচ্ছে, পাশাপাশি ঋণ আটকে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাচ্ছে। এতে বছর শেষে লভ্যাংশ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এই ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ডিসেম্বর প্রান্তিকে পুঞ্জীভূত ঋণ অবলোপন হয়েছে, ২২ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, এর বিপরীতে ডিসেম্বর প্রান্তিকে তিন মাসে ব্যাংকগুলো আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১৬৯ কোটি টাকা। দুই বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ডিসেম্বর প্রান্তিকে পুঞ্জীভূত ঋণ অবলোপন হয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। কিন্তু ওই তিন মাসে আদায় হয়েছে মাত্র এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ৩৯টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ৩০টির ডিসেম্বর প্রান্তিকে পুঞ্জীভূত ঋণ অবলোপনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে তারা আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১৪৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণগুলো আদায় হচ্ছে না। যারা ঋণ নিয়েছেন তারা ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্য মামলা হয়েছে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে। এসব মামলা বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে। এসব মামলা পরিচালনা করতেও ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আবার কিছু মামলা নিষ্পত্তি হলেও ওই সব মামলার বিপরীতে ব্যাংকের দাবিকৃত অর্থ আদায় হচ্ছে না। বছরের পর বছর খেলাপিরা ব্যাংকের ঋণ আটকে রেখেছেন। এতে ব্যাংকগুলোর নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। খেলাপিরা যেসব ঋণ আটকে রেখেছেন, ওই ঋণের অর্থ সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ। খেলাপিরা ঋণ আটকে রাখলেও এর বিপরীতে আমানতকারীদের অর্থ নির্ধারিত মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ ফেরত দিতে হচ্ছে। অপর দিকে যেসব ঋণ অবলোপন করা হচ্ছে ওই সব ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যাচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকের আয় কমে যাচ্ছে। আর ব্যাংকের আয় কমে যাওয়ায় প্রকৃত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শেয়ার হোল্ডাররা।
ব্যাংকের শুধু মুনাফাই কমছে না; বিনিয়োগ সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। কারণ ব্যাংকগুলোর ঋণ আটকে যাওয়ায় এর বিপরীতে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হচ্ছে। নতুন আমানত নিয়ে পুরনো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হচ্ছে। ঋণ আদায় হলে ব্যাংকগুলো বাড়তি বিনিয়োগ করতে পারত, এখন আদায় না হওয়ায় কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
এর প্রভাব সম্পর্কে অপর এক ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, বর্তমানে বিনিয়োগ চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলোর শুধু মুনাফা কমে যাওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে বিনিয়োগ চাহিদা সৃষ্টি হলে ব্যাংকগুলো তখন নগদ টাকার অভাবে কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। এতে কাক্সিক্ষত হারে প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হবে না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/236116