১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৮:০২

বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন

সাতক্ষীরার জনি নিখোঁজে যুক্ত এসপি ওসি এসআই

আটকের চার দিন পর হাজত থেকে নিখোঁজ হন, ১১ মাসেও খোঁজ মেলেনি * ওই ম্যাজিস্ট্রেট শিবিরের ক্যাডার, রিপোর্টে মনগড়া মত দিয়েছেন : এসপি

সাতক্ষীরা সদর থানাহাজত থেকেই নিখোঁজ হয়েছিলেন হোমিও চিকিৎসক শেখ মোখলেছুর রহমান জনি। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট আটকের চতুর্থ দিনে তিনি নিখোঁজ হন। আর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) আলতাফ হোসেন, সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদুল হক শেখ ও এসআই হিমেল হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। বিচার বিভাগীয় তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। আজ এ বিষয়ে হাইকোর্ট আদেশ দিতে পারেন।
একই দাবি করে আসছিলেন জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার। তবে উল্লিখিত তিনজন তা নাকচ করে বলে আসছিলেন, তারা জনিকে চিনেনই না। আটকও করেননি। আর বিচার বিভাগীয় প্রতিবেদন দাখিলের পর নিজেদের অপরাধ ঢাকতে এখন তারা তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচয় ও কাজ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
জেসমিন নাহার বলেন, ৪ আগস্ট রাতে শহরের নিউমার্কেটে গিয়েছিলেন জনি। এ সময় এসআই হিমেল জনিকে আটক করেন। তাকে থানায় তিন দিন রাখা হয়। সে সময় প্রতিদিন থানায় গিয়ে জনিকে খাবার দিয়ে আসতেন জেসমিন। চতুর্থ দিন সকালে গিয়ে আর স্বামীর দেখা পাননি তিনি। এসআই হিমেল জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। সেই থেকে ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও স্বামীর খোঁজ পাননি তিনি। স্বামীর খোঁজে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ও পুলিশ ও মানবাধিকার সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কোথাও সুরাহা না পেয়ে তিন মাসের শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে অবশেষে ঢাকায় আসেন। ৬ মার্চ হাইকোর্টে রিট (হেভিয়াস কর্পাস) করেন জেসমিন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করেন এবং পুলিশকে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। দু’দফা আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে জনিকে আটক করেনি বলে জানায় পুলিশ। পরে হাইকোর্ট ৯ মে বিচারবিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা নিতে সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন। সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল্লাহ মাহমুদ তদন্ত শেষে ২৯ জুন হাইকোর্টে এ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেন। জেসমিন নাহারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মতিউর রহমান শনিবার যুগান্তরকে জানিয়েছেন, রোববার এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য আছে।
সূত্র জানায়, বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনিকে আটক ও ৩ দিন পর হাজতখানা থেকে নিখোঁজের ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদুল হক শেখ এবং এসআই হিমেল হোসেন সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া সাতক্ষীরার তৎকালীন পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
এ বিষয়ে জেসমিন নাহার যুগান্তরকে বলেন, তার স্বামী শহরের কুকরালি এলাকার বাসিন্দা মোকলেছুর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগে নেই। স্বামীর সন্ধান চেয়ে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তা নেয়নি। তারও আগে ২৪ আগস্ট এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু কোনো জবাব পাননি।
জেসমিন বলেন, এসআই হিমেল তাকে অনেকবার এই বলে শাসিয়েছেন যে, স্বামীকে আটকের কথা অন্য কেউ জানলে তার ক্ষতি হয়ে যাবে। এসআই হিমেল হোসেন যখন জনিকে থানায় এনে আটকে রাখেন, তখন ওসি ছিলেন এমদাদুল হক শেখ। ওসির নির্দেশেই হিমেল তার স্বামীকে আটক করেন। যশোর কোতোয়ালি থানায় বদলি হয়েছেন হিমেল হোসেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, মোখলেছুর রহমান জনি নামে কাউকে ওইদিন পুলিশ আটক করেনি। জেসমিন নাহারের অভিযোগ সঠিক নয়। বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ম্যাজিস্ট্রেট একজন শিবিরের ক্যাডার, রিপোর্টে মনগড়া মতামত দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন বলে জেসমিন নাহার যে দাবি করেছেন, সে বিষয়ে আলতাফ হোসেন বলেন, কারও এমন অভিযোগ পাইনি। ওসি এমদাদুল হক শেখ বর্তমানে ঝিনাইদহ সদর থানায় কর্মরত আছেন। শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, মোখলেছুর রহমান জনি নামের কাউকে চিনি না। জেসমিন যে অভিযোগ করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। বিচারবিভাগীয় তদন্তের কপি পেয়েছেন উল্লেখ করে এমদাদুল হক বলেন, তিনি (ম্যাজিস্ট্রেট) আমাকে ডেকেছিলেন। আমি বলেছি, থানায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এমন ঘটনা ঘটলে তো সেখানে পাওয়া যাবে। বিচারবিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছেন উল্লেখ করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে রোববার (আজ) শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে। তিনি বলেন, এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। ওই রিপোর্টে জেসমিনের অভিযোগ মিথ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে এসআই হিমেলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/16/139956/