১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৮:০০

মোটা চালের কেজি এখনো ৪৫ টাকা

শুল্ক কমানোর সুবিধায় আমদানি বাড়ায় আগের তুলনায় বাজারে চালের সরবরাহ বেড়েছে। সব ধরনের চালে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে মিল ও পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুব বেশি প্রভাব পড়েনি খুচরা পর্যায়ে। খুচরা বাজারে মোটা চালের কেজি এখনো ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এতে দীর্ঘদিন ধরে লাগামহীন চালের বাজারে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, আমদানি শুল্ক সুবিধায় যে পরিমাণ চাল দেশের বাজারে প্রবেশ করছে, তাতে দাম কমে প্রতিকেজি ৪০ টাকার নিচে আসা উচিত। কিন্তু তা হয়নি।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি মজুত বাড়াতে ৫ দেশ থেকে ১২ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ৩টি দেশের সঙ্গে আমদানির আলোচনা চূড়ান্ত করে আনা হয়েছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে আড়াই লাখ টনের পর এবার থাইল্যান্ডের সঙ্গে ২ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার ভিয়েতনাম থেকে চালবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। বেসরকারি খাতে চাল আমদানিতেও গতি এসেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত কয়েক দিনে বাজারে মোটা চালের দামও কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি চালের দর ৪৭ টাকা থেকে কমে ৪৫ টাকা হয়েছে। পাইকারি দরও কমে ৪০ থেকে ৪৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, পাইকারিতে মোটা চাল ৪০ থেকে সাড়ে ৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে গুটি চাল ৪২ টাকা ও স্বর্ণা ৪৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্যানুযায়ী, ঢাকায় প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৩ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়।
বাবুবাজারের পাইকার বসুন্ধরা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা সালাউদ্দিন বলেন, বিদেশ থেকে চাল আসার পর সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে, মিলাররা চালের দাম কমাতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, বাবুবাজারের মিনিকেট ৫১ থেকে ৫২ টাকা, বিআর আটাশ ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, বিআর ঊনত্রিশ ৪৫ টাকা এবং মোটা চাল প্রতি কেজি ৩৯ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের বিক্রেতা শহিদ বলেন, চালের দাম ধীরে ধীরে কমছে। খুচরা বিক্রেতারাও দাম কমাতে বাধ্য হবেন। সিন্ডিকেট ছাড়া কেউ চাইলেও বেশি দামে বিক্রি করে টিকে থাকতে পারবে না। তিনি জানান, ৫০ কেজির মিনিকেট চালের বস্তা ২৬০০ থেকে ২৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নাজিরশাইলের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৪৪০ থেকে ২৪৫০ টাকায়। এছাড়া ভারত থেকে আসা মোটা চালের বস্তা (৫০ কেজি) ২১৬০ থেকে ২১৮০ টাকা এবং আটাশ চালের বস্তা ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ঈদের আগে মিনিকেটের বস্তা ২৬৭০ থেকে ২৬৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ওই সময় অন্য চালের দামও বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা করে বেশি ছিল। এক মাস আগেও মোটা গুটি চাল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি করে বিক্রি হলেও শুক্রবার এই চাল ৪২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সর্বশেষ খুচরা বাজার দর অনুসারে, প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা, বিআর-২৮, পারিজা) ৪৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৫৬-৫৮ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৪-৫৬ টাকা, বিআর-২৮ ৫০ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫২ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৫৪ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮-৫০ টাকা, বাসমতি ৫৪ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪-৭৬ টাকা এবং পোলাও চাল (পুরাতন) ১০০ টাকা, (নতুন) ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ বছর বোরো মৌসুমে সরকারকে চাল না দেয়ায় ১৬ হাজার চালকলকে ৩ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যার পর থেকেই চাল মজুত করেছিল। আমরা যে ক্রয়মূল্য (৩৪ টাকা) দিয়েছিলাম, বাজারের মূল্যের সঙ্গে তার বিরাট ফারাক ছিল। ফলে আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে প্রায় ২০ হাজার মিল আছে, যার মধ্যে ১৬ হাজার মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে গত ২০শে জুন সরকার চালের ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস করে। শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে প্রায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে শত শত চালের ট্রাক দেশে প্রবেশ করেছে। এতে ১০০ টাকার চাল আমদানিতে ১৮ টাকা কম শুল্ক দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এরপরও সারা দেশের ভোক্তারা এখনো এর সুফল পাচ্ছে না।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=74268&cat=2/