১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৭:৫২

অর্থনীতিতে মন্দাভাব

রেমিট্যান্স ও রফতানিতে ধস অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে-- ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ

দেশের অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক সংকট ঘণীভূত হচ্ছে। বাজেটে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি; রাজস্ব আদায়ে ক্রমশ নিম্নমুখিতা ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা; তৈরী পোশাক রফতানীসহ সামগ্রিক রফতানী আয়ে নেতিবাচক প্রবণতা সহ রেমিট্যান্স আয়ে ধ্বস দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। এ ছাড়া বিগত প্রায় এক দশক ধরেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে চলছে বন্ধ্যাত্ব যা নিরসনে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। এসব কারণে অর্থনীতির প্রধান খাতগুলোতে নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে।
যখন দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করার কথা বলা হচ্ছে, যখন হাজার হাজার কোটি টাকার স্বাপ্নিক মেগা প্রকল্প নিয়ে রাজনৈতিক উচ্ছাস দেখা যাচ্ছে, তখন অর্থনীতির সব সূচকে ক্রমবর্ধমান নেতিবাচক প্রবণতায় উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। তাদের মতে, দেশের জননিরাপত্তা পরিস্থিতি, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধ্বস নেমে আসতে পারে।
জাতীয় অর্থনীতিতে চলমান সব সংকটকে ছাপিয়ে গেছে প্রবাসী আয়। এটা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগের পরও সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় এসেছে। গেল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। এই সূচক উদ্বিগ্ন করছে সরকার, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এদিকে চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় এই আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশে শ্রমিক পাঠানো নিয়ে নানান সাফল্যের কথাবার্তা প্রচার করা হলেও আদতে বাংলাদেশের শ্রম বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। সরকারের অদূরদর্শি পদক্ষেপ, ভুল পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনীতিক ব্যর্থতার কারণে বিদেশে বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানো কমে গেছে। যারা বিদেশে রয়েছেন তারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। কিন্তু দেশে জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপকতা নিয়ে বিশ্বমিডিয়াগুলোতে ফলাও করে প্রচারণায় প্রবাসে বাংলাদেশীদের যাতায়াত এবং বসবাসে যেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে; তেমনি বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য কমে যাওয়ায়ও রেমিট্যান্স পাঠানোতে মন্দা নেমেছে। তাছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরে জটিলতা, আস্থাহীনতা এবং নতুন নতুন নিয়মনীতির কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের বড় অংশ অবৈধ পথ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, এমনিতেই সা¤প্রতিক কয়েক মাসে হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসলহানি, উত্তরাঞ্চলে চলমান বন্যা, ধানক্ষেতে বøাস্ট রোগ, উপকূলীয় সাইক্লোন, পাহাড় ধসে শত শত মানুষের প্রাণহানি, অতিবৃষ্টির নাগরিক দুর্ভোগ দেশের অর্থনীতি ও পণ্যমূল্যে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবেÑ এমন মত বিশ্লেষকদের। রেমিট্যান্স কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে একমাত্র রিজার্ভ তথা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেই শক্তিশালী অবস্থানে ছিলো। এটাও কমে যাওয়া দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
এদিকে সদ্য পাস হওয়া বাজেটে সাধারণ জনগনের জন্য কোন সুখবর নেই। উপরন্তু সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লেও নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। এ কারনে আগামী দশকে একটি মধ্য আয়ের বাংলাদেশ প্রত্যাশা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং রফতানী আয়ের প্রতিবন্ধকতা দূর করার কার্যকর কোন উদ্যোগও দেখা যাচ্ছেনা। একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যে সব রাজনৈতিক শ্লোগান ও প্রতিশ্রæতি শোনা যাচ্ছে সেখানে প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
সূত্র মতে, প্রায় ২ বছর ধরে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি নিম্নমুখী। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের নীতি নির্ধারকরা বেশ চিন্তিত। অবশ্য রেমিট্যান্স বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগসহ প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি অনেক বেশি। তাই ফি কমিয়ে আনার চিন্তাভাবনা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিদেশে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ছয় লক্ষাধিক। জিডিপিতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশ। কিন্তু রেমিট্যান্স দিন দিন কমছেই। প্রবাসী আয় কমার পেছনে ৫টি কারণ দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের সঙ্গে বেশকিছু দেশের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দরপতন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে স্থায়ী হওয়া, সৌদি আরবে আকামা (বসবাসকারী পরিচয়) সংক্রান্ত খরচ এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহারের কারণেই প্রবাসী আয় কমছে। বরিশালের উজিরপুর থানার বাসিন্দা ও সৌদি প্রবাসী কামাল সরদার ফোনে জানান, অফিস সময়ে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাংকে গিয়ে দেশে টাকা পাঠানো খুবই মুশকিল। কারণ ব্যাংকে গেলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে সময় নষ্ট হয়। আবার অফিস চলাকালীন বেশি সময় অফিসের বাইরে থাকলে চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে এক ধরনের অসাধু এজেন্টের কাছে তথ্য দিয়ে ক্যাশ ইন করে দেশে টাকা পাঠান। ফলে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা দেশে অর্থ পাঠালেও তা রেমিট্যান্স হিসেবে যোগ হচ্ছে না। তিনি বলেন, নতুন নিয়মে অফিসিয়ালি যে বেতনে কাজ করতে যান, তার চেয়ে বেশি টাকা পাঠাতে পারেন না কর্মীরা? ফলে নির্ধারিত কাজের বাইরে ‘অড জব’ করে তারা যে টাকা আয় করেন তা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে পারেন না। তিনি বলেন, ব্যাংকিংয়ে টাকাটা পরিবারের সদস্যদের হাতে পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। সে সুযোগ বিকাশ বা অন্য কোনো ইনফর্মাল সিস্টেমে পাওয়া যায়।
গত ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার ছিল। এরপর থেকে প্রতি বছরই প্রবাসী আয় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের ওপরে ছিল। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হঠাৎ প্রবাসী আয় কমে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে নেমে এসেছে, যা গত ৬ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহ বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অপব্যবহার রোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রোভাইডারকে দিয়ে এই বিষয়ে সতর্ক হতে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে তাদের সার্ভিলেন্স বাড়ানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হচ্ছে। এতে আমদানি কারকদের সুবিধা হলেও রেমিট্যান্স ও রফতানিতে প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে গেছে। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো প্রক্রিয়া কঠিন হওয়ায় প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। এ জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং খরচ কমানো পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এ গভর্নর।
“ডলারের বিনিময় হার যাতে প্রবাসীদের অনুকূলে থাকে সেদিকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেয়াল রাখা উচিত। এছাড়াও দীর্ঘদিন থেকে জনশক্তি রফতানিতে স্থবিরতা চলছে। সরকার নানা দেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এর কোনো ফল আমরা দেখিনি। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া উচিত।”
এদিকে ২০১৬ সালে বৈশ্বিক তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে এফডিআই’র অবস্থা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কিছুটা ভালো। এ সময় ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ভারতেই এসেছে ৪৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১ শতাংশ। শতাংশের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ বেশি এফডিআই গেছে গত বছর। চীনের সঙ্গে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের কারণে সে দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ হয়েছে এ সময়। বাংলাদেশে এফডিআই বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে এফডিআই এসেছে ২৩৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার পর দেশে এটিই সর্বোচ্চ পরিমাণ এফডিআই। ২০১৫ সালে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২২৩ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট এফডিআইর স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৩৩ কোটি ডলার।
রফতানী উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি’র) হিসেবে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরী পোশাক রফতানী খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘাটতি প্রায় ৬ শতাংশ। অনেক প্রতিবন্ধকতা ও দুর্যোগ সত্তে¡ও তৈরী পোশাক রফতানী খাতে অতীতে কখনো এমন নেতিবাচক ধারা দেখা যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ সব বাজারেই তৈরী পোশাক রফতানীতে ধস নেমেছে। দেশে কথিত জঙ্গিবাদ উত্থানের প্রচারনা এবং গত বছর হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক হত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রফতানী খাত নতুন করে চাপের মুখে পড়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজারে বাংলাদেশি তৈরী পোশাক রফতানী গড়ে ৬ শতাংশ হারে কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এমনকি সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়ায় সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। বিজিএমইএ সুত্র বলছে, ছোটবড় সব বাজারেই তৈরী পোশাক রফতানী কমেছে। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রপ্তানীতে মন্দাভাব দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। অবস্থার পরিবর্তন না হলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা কারখানাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিছুদিন পূর্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাত নিয়ে একজন পার্লামেন্ট মেম্বারের নেতিবাচক আলোচনা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
ইপিবি’র হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আলোচ্য বছরে বিভিন্ন পণ্য থেকে রপ্তানি আয় এসেছে তিন হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ (৩৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন) ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ কম। এই প্রবৃদ্ধি ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। আলোচ্য অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি (৩৭ বিলিয়ন) ডলার।
রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় এই স্বল্প প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের ভিশন-২১’ বাস্তবায়ন কিংবা পোশাক খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রূপকল্প বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন খোদ রফতানিকারকরাই। তারা বলছেন, রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে এটিই এখন আশংকার বড় কারণ। এটি ভালো লক্ষণ নয়। কারণ আমাদের ন্যূনতম প্রবৃদ্ধি নিয়ে এগুলো চলবে না। মনে রাখা দরকার সামনে ২০২১ সাল নাগাদ সার্বিক রফতানি খাত থেকে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এককভাবে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন তা অর্জন করতে হলে প্রতি মাসেই রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকতে হবে ১১-১২ শতাংশ হারে। কিন্তু আমাদের গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি হচ্ছে না। এই নিম্ন প্রবৃদ্ধি থেকে উচ্চতর প্রবৃদ্ধিতে যাওয়া সম্ভব না হলে আমাদের নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো কঠিন হবে। সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, বৈশ্বিক এবং দেশের আর্থিক খাতে নানা প্রতিকূলতায় রফতানি আয়ে এই ধাক্কা লেগেছে। তাই প্রবৃদ্ধি থাকলেও সেটি চলতি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে রফতানিকারকদের আত্মবিশ্বাসেও চিড় ধরেছে। এ পরিস্থিতিতে তারা শংকা প্রকাশ করে বলেছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির চলমান অস্থিরতার কারণে আগামীতে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক প্রভাব রফতানিতে পড়তে শুরু করেছে।
ইপিবি’র প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় সার্বিক রপ্তানি আয় কমেছে। এ খাত থেকে মোট আয়ের ৮১ শতাংশ আসলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে নাম মাত্র দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে নিট খাতে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও উভেনে কমেছে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। যদিও পোশাক শিল্প নিয়ে স্বপ্নের শেষ নেই। অথচ অবকাঠামো সংকট, সরকারি সহযোগিতার অভাব ও অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তৈরি পোশাক শিল্পে দেখা দিয়েছে অশনি সংকেত। ভীতি-আতঙ্ক-অনিশ্চয়তায় দেশী বিনিয়োগে ভাটা পড়ায় মিলকারখানা বন্ধ হচ্ছে। গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ-গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন কমছে এবং মিলকারখানা বন্ধ হওয়ায় কর্মজীবীরাও কর্মহীন হচ্ছে। সম্প্রতি আইএমএফ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিট পরবর্তি ইউরোপের বাস্তবতা বাংলাদেশের রফতানী বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আইএমএফ রিপোর্টে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা’ হচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা টারময়েল আবার ফিরে আসতে পারে, যা জননিরাপত্তা পরিস্থিতি ও দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/87734/