১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৭:৪৮

শিক্ষা কর্মকর্তাদের গাড়িবিলাস

সরকারি শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনেককেই যেন গাড়িবিলাসে পেয়েছে। পদ অনুযায়ী গাড়ি বরাদ্দ না পেলেও ভিন্ন উপায়ে তাঁরা এই সুবিধা ভোগ করছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের জন্য রয়েছে চার-চারটি বিলাসবহুল গাড়ি। কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত এসব গাড়িতে অবিশ্বাস্যভাবে জ্বালানি ও মেরামতের ব্যয় দেখানো হচ্ছে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালকদের জন্য গাড়ি বরাদ্দ থাকার কথা। অধিদপ্তরের ছয়টি উইংয়ে ছয়জন পরিচালক। তাঁরা গাড়ি পাবেন। অধিদপ্তরের অধীনস্থ ১৩ প্রকল্প পরিচালকও গাড়ি পাবেন। সব মিলে প্রয়োজন মহাপরিচালকের একটিসহ মোট ২০টি গাড়ি। অতিরিক্ত আরো কিছু গাড়ি দাপ্তরিক কাজের জন্য থাকতেই পারে। কিন্তু মাউশি অধিদপ্তর ও তার অধীনস্থ প্রকল্পগুলোর মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা গাড়িসহ এখন ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ১৭৫টি গাড়ি! শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া এসংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, গাড়িগুলোর বড় অংশই বিলাসবহুল।
জানা যায়, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা মূলত সরকারি কলেজে পাঠদান করেন। শিক্ষা প্রশাসনের বেশির ভাগ পদেও এই ক্যাডার থেকে আসেন। সরকারি কলেজে অধ্যাপক পদমর্যাদার কাউকে গাড়ি দেওয়া হয় না। সরকারি সব কলেজের অধ্যক্ষদেরও গাড়ি নেই। কিন্তু সহযোগী অধ্যাপকরাও শিক্ষা প্রশাসনে এসে দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এমনকি মাউশি অধিদপ্তরের অনেক উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের নিচের পদের কর্মকর্তারাও ভিন্ন উপায়ে সার্বক্ষণিক গাড়ি ব্যবহার করছেন। এর পাশাপাশি বেশির ভাগ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়িও রয়েছে। মাউশি অধিদপ্তর ও এর অধীনস্থ প্রকল্পগুলোতে এখন কর্মকর্তারা ব্যবহার করছেন ৬৫টি সরকারি গাড়ি। আর মাঠপর্যায় মিলে গাড়ির সংখ্যা ১৭৫টি। শিক্ষা ভবনে বেশ বড় খোলা জায়গা থাকলেও সেটা এখন পরিণত হয়েছে গাড়ির মেলায়।
কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা যায়, মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নামেই বরাদ্দ রয়েছে চারটি গাড়ি। এগুলো হচ্ছে—মাউশি অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দ ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৮৫৭৪, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রাম (সেসিপ) থেকে বরাদ্দ ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-০৩১৪ নম্বর জিপ গাড়ি। এ ছাড়া টিচিং
কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট-২ (টিকিউআই-২) প্রজেক্ট থেকে বরাদ্দ ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-০১০৮ নম্বর জিপ গাড়ি এবং টিকিউআই প্রকল্পের প্রথম পর্যায় থেকে বরাদ্দকৃত ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৯২১৩ নম্বর জিপ গাড়ি রয়েছে। টিকিউআই প্রকল্প থেকে দুটি গাড়ির জ্বালানি বাবদ এক বছরে দেওয়া হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর সেসিপের গাড়িটি থেকে গত বছর জ্বালানি বাবদ দেওয়া হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৪৪৫ টাকা। তবে মাউশি অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত গাড়িটির জন্য এক বছরের জ্বালানি ব্যয়ে খরচ হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ২১৮ টাকা। মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দকৃত চার গাড়ির জন্য এক বছরে জ্বালানি ব্যয় হয়েছে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৩ টাকা। আর মেরামতের বিশাল অঙ্কের খরচ তো রয়েছেই। অথচ তার জন্য নিয়মানুযায়ী একটি গাড়িই বরাদ্দ থাকার কথা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মাউশি অধিদপ্তরের একজন প্রভাবশালী পরিচালক দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন। তাঁর নামে বরাদ্দ দেওয়া পাজেরো গাড়ি দিয়ে সন্তানদের স্কুল, কেনাকাটাসহ সব কাজই করা হয়। অফিস থেকেই আরেকটি পুরনো গাড়ি নিয়ে তিনি আসা-যাওয়াসহ অন্যান্য জায়গায় যাতায়াত করেন। পরিচালকের বাসায় শুধু বরাদ্দকৃত গাড়িটিই রাখা হয়।
এ ছাড়া একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানও দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন। তাঁর নামে বরাদ্দকৃত গাড়িটি সাধারণত পরিবারের সদস্যরাই বেশি ব্যবহার করেন। তবে ওই বোর্ডের মোট গাড়ির সংখ্যা পাঁচটি। চেয়ারম্যান অনেক সময় বাকি গাড়িগুলো থেকে একটি ব্যবহার করেন। আর ওই বোর্ড চেয়ারম্যান যখন ঢাকার বাইরে যান তখন রাজধানীর দুটি স্বনামধন্য স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে একটি গাড়ি নিয়ে যান। কারণ এই দুই প্রতিষ্ঠানের দুটি গাড়ি সব সময় শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের জন্য অপেক্ষমাণ থাকে।
এ ছাড়া টিকিউআই-২ প্রকল্প থেকেও একটি মাইক্রোবাস দেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিকে (নায়েম)। কিন্তু ওই গাড়িটি আর নায়েমে নেই। এটি স্থায়ীভাবে ব্যবহার করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব। পদমর্যাদা অনুসারে তিনি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন যুগ্ম সচিব নিয়ম ভঙ্গ করে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ সরকারের কাছ থেকে গাড়ি কেনার ঋণ নিয়েছেন এবং মাসিক জ্বালানি ও চালকের টাকা নিচ্ছেন। এর পরও অফিসের গাড়ি ব্যবহার করছেন। তবে কিছু মন্ত্রণালয়ের একই পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অফিসের যৌথ গাড়িতে যাতায়াত করেন।
মাউশি অধিদপ্তর ও তাদের অধীনস্থ প্রকল্পগুলোর কতটি গাড়ি রয়েছে, তা কারা ব্যবহার করছেন এবং এসব গাড়িতে জ্বালানি ব্যয় কেমন হচ্ছে—এসব হিসাবের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র কালের কণ্ঠ’র হাতে রয়েছে। অবশ্য এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন তথ্য চেয়েও পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর গত এপ্রিলের শুরুতে মাউশি অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর ফরম ‘ক’ অনুযায়ী এসব তথ্যের জন্য আবেদন করা হয়। মে মাসে কর্তৃপক্ষ গাড়ির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য কালের কণ্ঠ’র এ প্রতিবেদককে সরবরাহ করে।
নথিপত্রে দেখা যায়, মাউশি অধিদপ্তরের বেশ কিছু গাড়ি কয়েকজন কর্মকর্তাকে একসঙ্গে প্রতিদিন আনা-নেওয়ার কাজে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। অথচ ওই কর্মকর্তাদের অনেককেই গাড়িতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। এমনও কিছু প্রকল্প রয়েছে যেখানকার গাড়িগুলো ব্যবহার করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে আছে ঢাকা মহানগরীতে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছয়টি মহাবিদ্যালয় (সরকারি) স্থাপন প্রকল্পের ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-৪৬১৪ নম্বর গাড়ি, মাউশি অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো-চ-৫৬-১০৯৮ নম্বরের গাড়ি ও সেকায়েপ প্রকল্পের ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৩৭১৩ নম্বরের গাড়িটি। জ্বালানি ব্যয়ও মেটানো হয় প্রকল্প থেকে। টিকিউআই-২ প্রকল্প থেকে শিক্ষামন্ত্রীর নামেও ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-০১০৭ নম্বর গাড়িটি বরাদ্দ করা হয়েছে।
অবিশ্বাস্য জ্বালানি ব্যয় : জ্বালানিতে অবিশ্বাস্য ব্যয় হচ্ছে মাউশি অধিদপ্তর ও প্রকল্পের গাড়িগুলোতে। কোনোটিতে বছরে পাঁচ লাখ, কোনোটিতে দেড় লাখ! প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টের (সেকায়েপ) প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মাহামুদ-উল-হকের জিপ গাড়িতে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এক বছরে জ্বালানি ব্যয় দেখানো হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮৪০ টাকা। অথচ প্রায় একই ধরনের অন্যান্য জিপ গাড়িতে বছরে জ্বালানি ব্যয় হয়েছে দুই লাখ টাকা। এ ছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের পরিচালক শরীফ মোর্তজা মামুনের গাড়িতে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৫ টাকা, এস্টাবলিশমেন্ট অব ফরেন ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং সেন্টারস-২ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের গাড়িতে দুই লাখ ৩৯ হাজার ৭৮ টাকা, সেকায়েপ প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালকের গাড়িতে দুই লাখ ৩৯ হাজার ২০০ টাকা, সেসিপ প্রগ্রামের যুগ্ম প্রগ্রাম পরিচালক মো. আবু ছাইদ শেখের গাড়িতে তিন লাখ ২৭ হাজার ১০৬ টাকা বছরে জ্বালানি ব্যয় দেখানো হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্পের পরিচালকের গাড়িতে এক বছরে দুই লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক কলেজ ও প্রশাসনের গাড়িতেও তিন লাখ ১২ হাজার ৯৮৫ টাকা বছরে দেখানো হয়। এর বাইরে বড় ধরনের মেরামত খরচ আছেই গাড়িগুলোতে।
টিকিউআই-২-এ ‘ক্রয় বাণিজ্য’ : মাউশি অধিদপ্তরের হিসাবেই দেশের ৫৫ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল বোঝেন না। শিক্ষামন্ত্রীসহ সবাই প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। এর পরও এখনো অনেক শিক্ষক ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পাননি। এই প্রশিক্ষণের মূল দায়িত্ব টিকিউআই-২ প্রকল্পের। কাজে অগ্রগতি না থাকলেও প্রতিবছরই নতুন নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। সারা দেশের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ বিভিন্ন দপ্তরের জন্যও গাড়ি কিনেছেন তাঁরা। আর এই প্রকল্পের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের বদলে যেন কেনাকাটায়ই স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন। প্রকল্পের বয়স খুব বেশি না হলেও এখন পর্যন্ত ১০৪টি গাড়ি কেনা হয়েছে বলে হাতে আসা নথিপত্রে দেখা যায়।
নাম প্রকাশ না করে মাউশি অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন যে গাড়িগুলো কেনা হচ্ছে একেকটির দাম ৬০ থেকে ৯০ লাখ টাকার মধ্যে। এসবের একটি গাড়ি কেনায় বড় অঙ্কের কমিশন পাওয়া যায়। যারাই টেন্ডার পায় না কেন কমিশন ছাড়া কোনো গাড়ি কেনা হয় না। আর প্রকল্প থেকে একবার গাড়ি কিনলেই জ্বালানি আর মেরামতের খরচ দিতে হয়। এতেও বড় অঙ্কের টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। ’
সেসিপও পাল্লা দিয়ে কিনছে : মাউশি অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প হচ্ছে সেসিপ। শুধু অধিদপ্তরই নয় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বিভিন্ন আঞ্চলিক শিক্ষা কার্যালয়, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি—সব জায়গায়ই কর্মকর্তা সরবরাহ করছে সেসিপ। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার থেকে কর্মকর্তাদের প্রেষণে এনে শুধু সেসিপের সাইনবোর্ড লাগিয়ে পদায়ন করা হচ্ছে। এতে শিক্ষা প্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। আর সরাসরি পদায়নকৃতরা গাড়ি না পেলেও সেসিপ থেকে যাঁদের পদায়ন করা হচ্ছে তাঁদের ঠিকই দেওয়া হচ্ছে নতুন গাড়ি। আবার অনেক দপ্তরে কর্মকর্তা না দিয়েই তাঁরা শুধু গাড়ি সরবরাহ করছেন।
কালের কণ্ঠ’র হাতে আসা নথি ঘেঁটে দেখা যায়, সেসিপের গাড়ির সংখ্যাও বর্তমানে কম নয়। ২৭টি! এমনও দপ্তর রয়েছে যেখানে তারা গাড়ি সরবরাহ করলেও তা কে ব্যবহার করেন সেটা কারো জানা নেই। এর পরও নিয়মিত জ্বালানি বিল দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া এই প্রকল্পের সব কর্মকর্তাই কোনো না কোনোভাবে গাড়ি ব্যবহার করছেন। এই প্রকল্পের গাড়ির জ্বালানি তেলেও রয়েছে অবিশ্বাস্য ব্যয়। ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-৯৪৭৯ নম্বর মাইক্রোবাসে এক বছরে তিন লাখ ৬৭ হাজার ৭০৬ টাকা এবং ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-৯৪৮০ নম্বর মাইক্রোবাসে তিন লাখ ৮০ হাজার ৫৭৯ টাকার জ্বালানি ক্রয় দেখানো হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাইরেও পদাধিকারবলে অন্য কিছু প্রগ্রাম ও প্রকল্পের প্রধান। এখন ওই প্রকল্প থেকে পদমর্যাদা অনুসারে প্রকল্প পরিচালকের জন্য গাড়ি কেনা হয়। আমি ওই গাড়ি নিলেও তা অন্যদেরকে দিয়ে দিই। আবার প্রকল্পের কাজেও গাড়িগুলো ব্যবহার করা হয়। ’ তিনি বলেন, ‘আমার নামে চারটি গাড়ি থাকলেও এটা নিয়ে অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই। আর আমি নিজে একটি গাড়িই ব্যবহার করি। ’
টিকিউআই-২-এর প্রকল্প পরিচালক মো. জহির উদ্দিন বাবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কাজ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এ জন্য যা লাগে তা দিতে হয়। তবে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে খুব বেশি একটা ঝামেলা নেই। আমাদের এখান থেকে ফিক্সড বিল দেওয়া হয়। ফলে সমস্যা হয় না। ’ মাউশির মহাপরিচালকের নামে কেন দুটি গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘তিনি আমাদের প্রকল্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ জন্য প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় থেকে তাঁকে একটি গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের প্রথম পর্যায় থেকে মাউশি মহাপরিচালককে কোনো গাড়ি দেওয়া হয়েছে কি না তা জানা নেই। কারণ তখন আমি ছিলাম না। হয়তো আগের গাড়িটি সচল নেই, সেটাও হতে পারে। কারণ একসঙ্গে তো দুটি গাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার কথা নয়। ’
সেকায়েপের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মাহমুদ-উল-হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২৫০টি উপজেলা আমাদের প্রকল্পভুক্ত। ফলে অনেক অনেক মাঠ পরিদর্শনে যেতে হয়। এ জন্য জ্বালানি ব্যয়ও বেশি হয়। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের প্রকল্পে বসেন। তাঁকেসহ আমাদের অন্য কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার হয়। এ জন্যই ওই গাড়ির ব্যবহারকারীর নামের জায়গায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় লেখা হয়েছে। ’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাধারণত পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মনিটরিং, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকার কথা। এর বদলে চলছে গাড়িবিলাস!

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/07/16/519811