১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ৭:৪৫

সংরক্ষিত বন ধ্বংস করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন

রামগড়-সীতাকুণ্ড রিজার্ভ ফরেস্ট দেশের অন্যতম সংরক্ষিত বনভূমি। সেখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী। ওই বন দ্বিখণ্ডিত করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করতে যাচ্ছে সরকার। মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট-মেঘনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের জন্য ১৩ কিলোমিটার বন কাটা হবে। এর ফলে ৬৩ হেক্টর বনের মধ্যে বিভিন্ন উদ্ভিদ, রাবার গাছসহ ক্ষতি হবে সাড়ে ৭৮ কোটি টাকার। উন্নয়নের জন্য এভাবে বনভূমি ধ্বংস করা হলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিষয়টি নিয়ে গত ১৯ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বন বিভাগের আংশিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ বিষয়ক প্রতিনিধি দলে থাকা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন সমকালকে বলেন, 'বনকে দ্বিখণ্ডিত করা হলে বনের আর চরিত্র থাকে না। বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালনের জন্য বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তার পরও বনের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বন বিভাগের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে আংশিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে।'

চট্টগ্রাম বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট-মেঘনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের জন্য বন বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ এবং অনাপত্তি পত্রের জন্য আবেদন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। সে অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন বিভাগ গত বছরের এপ্রিলে সরেজমিন পরিদর্শন করে মে মাসে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। এতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের সঞ্চালন লাইনের জন্য মিরসরাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৬৩ হেক্টর বনভূমির ওপর দিয়ে যাবে এ বিদ্যুৎ

লাইন। এর মধ্যে বন বিভাগের রয়েছে ৪১ দশমিক চার হেক্টর বনভূমি। বাংলাদেশ ফরেস্ট ইন্ড্রাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) রাবার বাগান রয়েছে ২১ দশমিক ৬ হেক্টর ভূমিতে। এই বনভূমির আয়তন প্রায় ৭২ বর্গকিলোমিটার।

সঞ্চালন লাইনের দুইদিকে ২৩ মিটার করে মোট ৪৬ মিটার এলাকার গাছপালা কাটা হবে। এ জন্য শুধু উত্তর বন বিভাগের কাটা হবে কাঠ উপযোগী ২২৭টি গাছ, এক হাজার ৪৪০টি বল্লী, এক হাজার ৮৫৯টি চারা, ১২১টি বাঁশঝাড়। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে সেগুন, গর্জন, চাপালিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। এ ছাড়াও রয়েছে জীববৈচিত্র্যের জন্য নির্মিত ২১টি টাওয়ার। টাওয়ার ও গাছের মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৭ কোটি ৯১ লাখ ছয় হাজার ১৬৭ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের দাঁতমারা রাবার বাগানের ২১ দশমিক ৬ হেক্টর ব্যবহার করা হবে এ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে। এ রাবার বাগানে রয়েছে উৎপাদনশীল ১১ হাজার ৩৬৮টি রাবার গাছ। এ বাগানেও রয়েছে ১৩টি জীববৈচিত্র্য টাওয়ার। এ বাগানের মোট ক্ষতির পরিমাণ ৬০ কোটি ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৬০ টাকা।

এই সংরক্ষিত বনের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এলাকা বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান ও হাজারিখিলে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অবস্থিত। এ ফরেস্টে রয়েছে প্রায় ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১২৩ প্রজাতির পাখি, আট প্রজাতির উভচর, ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন বনভূমি নিয়ে গবেষণা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, 'একদিকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য অভয়ারণ্য করছি। আবার উন্নয়নের নামে এসব বনভূমির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নিয়ে যাচ্ছি, যা ওই এলাকার জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। বিদ্যুৎ লাইন বন্যপ্রাণীর চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে কমে যাবে জীববৈচিত্র্যও। তাই সরকারের উচিত হবে বনের বাইরে দিয়ে সঞ্চালন লাইনটি নিয়ে যাওয়া।'

এ প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, হাই ভোল্টেজ লাইন যাওয়ার ফলে এক ধরনের রেডিয়েশন হতে পারে, যা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে। পাশাপাশি বিদ্যুতের তারে লেগে পশুপাখি মারা যেতে পারে।

 

http://bangla.samakal.net/2017/07/16/308571