২৫ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:১৮

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কম পাবে!

সমস্যাটি হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুলোতে। এবার মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৭২৬ জন

এত দিন গণমাধ্যমে খবর হতো, জিপিএ-৫ পেয়েও কাঙ্ক্ষিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন না অনেক শিক্ষার্থী। এবার উল্টো চিত্র। এক ধাক্কায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ২০ হাজার ৩০৭ জন কমায় অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কম পাবে। বিশেষ করে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুলোতে এটা হবে; বরং সাধারণ মানের ফল নিয়েও ভর্তি হওয়া যাবে।
এবারের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আসন পর্যালোচনায় এই চিত্র উঠে এসেছে। এবার ১০টি শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছেন ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ জন পরীক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন অতিরিক্ত পরিচালক প্রথম আলোকে বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে প্রায় সাড়ে আট লাখ। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য অধিভুক্ত কলেজগুলোতে স্নাতক (সম্মান) ও পাস কোর্সে আসন প্রায় সাড়ে চার লাখ। এই হিসাব বলছে, পাস করা শিক্ষার্থীরা কোনো না কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবেন; বরং আসন খালি থাকবে। এমনকি এবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জিপিএ-৫ ছাড়াই সাধারণ মানের ফল নিয়ে সহজে ভর্তি হওয়া যাবে।
ইউজিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিলেও শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে ৩৭টি। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বুয়েটসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন আছে ৫২ হাজারের কিছু বেশি। সরকারি ৩০টি মেডিকেলে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিযোগ্য আছে ৩ হাজার ২৬২টি আসন। বেসরকারি ৬৫টি মেডিকেল কলেজে আসন প্রায় ৬ হাজার। ডেন্টাল কলেজগুলোতে আছে আরও কয়েক শ আসন। অর্থাৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল মিলিয়ে আসন আছে ৬২ থেকে ৬৩ হাজার। অথচ এবার ১০ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে যত আসন আছে, তার প্রায় অর্ধেক এবার জিপিএ-৫ ছাড়াই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। তবে মেডিকেলে ঠিকই প্রতিযোগিতা হবে। কারণ, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন শুধু বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৮ হাজার ৯৩৫ জন। তাঁদের বড় একটি অংশই মেডিকেলে ভর্তির চেষ্টা করবে।
সমস্যাটি হবে মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আরও স্পষ্ট করে বললে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুলোতে। এবার আট বোর্ডে মানবিক শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৭২৬ জন। মাদ্রাসায় পেয়েছেন ১ হাজার ৮১৫ জন। তবে বিষয় জটিলতায় মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিষয়ে ভর্তি হতে পারেন না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা অনুষদের অধীনে আসন আছে প্রায় ২ হাজার ৩০০। মানবিকের শিক্ষার্থীদের প্রথম লক্ষ্য থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। সব মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সাড়ে ছয় হাজারের কিছু বেশি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন আছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০-এর মধ্যে। এর মধ্যে মানবিকের বিষয়গুলোতে আসন আছে সাড়ে ৫০০-এর মতো।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একমাত্র জিপিএ-৫ মেধার স্বাক্ষর বহন করে না। একজন শিক্ষার্থীর ভাষার ওপর দক্ষতা কত, সমাজ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান কেমন, বিষয়ের প্রতি গভীরতা কেমন ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেছে জিপিএ-৫ পেয়ে ইংরেজিতে ভর্তি হয়ে অনেকে ভালোভাবে ইংরেজিতে দুটো বাক্য লিখতে পারে না। তাই জিপিএ-৫ বড় কথা নয়, একজন শিক্ষার্থী মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করল কি না, সেটাই আসল বিষয়।


 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1264741/