২৪ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১২:০২

নারায়ণগঞ্জ সিএসডিতে চালের বদলে বাঁশ-কাঠের ‘ড্যামেজ’

গুদাম সিলগালা ঘাটতি পূরণে ২১০০ বস্তা নিম্নমানের চাল ক্রয়

নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপোতে (সিএসডি) চালের বদলে বাঁশ ও কাঠের ড্যামেজ (বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি এক ধরনের উঁচু ফ্রেম) পাওয়া গেছে। পরে সংশ্লিষ্ট গুদামটি সিলগালা করে দেন পরিদর্শন কর্মকর্তারা।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে গুদামের মজুদের ঘাটতি পূরণ করতে বাজার থেকে নিম্নমানের প্রায় ১০০ টন চাল ক্রয় করে সিল করা গুদামে ঢুকানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুদামের মজুদ যাচাই করতে এরই মধ্যে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের অনুরোধ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ঢাকার আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা জামাল হোসেন এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম নারায়ণগঞ্জের সিএসডি পরিদর্শনে যান। তারা পরিদর্শনকালে সিএসডির ৮ নম্বর গুদামে চালের স্টোরেজ দেখে মজুদের ঘাটতির সন্দেহ করেন। বিষয়টি সিএসডি ম্যানেজার আক্তারুজ্জামানকে জানালে তিনি বলেন, মজুদ ঠিকই রয়েছে। তিনি ত্রিপল দিয়ে ঢাকা একটি স্তূপ দেখিয়ে পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাদের বলেন, চালের স্তূপে পোকা ধরেছে
বলে ত্রিপলের নিচে রাসায়নিক দেয়া হয়েছে। এ সময় কর্মকর্তারা ত্রিপল সরাতে বলেন। ত্রিপল সরানোর পর সেখানে চালের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠের ড্যামেজ দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে গুদামটি সিলগালা করে সিএসডি ত্যাগ করেন ওই দুই কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় সিএসডিজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। শনিবার রাত ও রোববারে সিএসডির একটি অসাধু চক্র সিলগালা ভেঙে বাইরে থেকে নিম্নমানের ২১০০ বস্তা চাল ৮ নম্বর গুদামে মজুদ করে। যাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে গুদামের মজুদে ঘাটতি না পান। মজুদ করার পর পুনরায় গুদাম সিলগালা করা হয় বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। সিএসডিতে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, পরিস্থিতি সামাল দিতে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে সিলগালা ভেঙে নিম্নমানের চাল এনে ঘাটতি পূরণ করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকার আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা জামাল হোসেন রোববার যুগান্তরকে বলেন, পরিদর্শনকালে চালের স্তূপ দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়। যে পরিমাণ মজুদ থাকার কথা সে পরিমাণে চাল নেই বলে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে ত্রিপলের অংশবিশেষ খুলে দেখা গেছে সেখানে চাল নেই। রয়েছে বাঁশ ও কাঠের ড্যামেজ। পরে আমরা গুদামটি সিলগালা করে চলে আসি। প্রায় অভিন্ন তথ্য জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করেছি। তবে সিলগালা ভেঙে নিম্নমানের চাল দিয়ে মজুদ পূরণের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
সিএসডি ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, গুদামে চালের মজুদ কম হওয়ার বিষয়ে পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাদের সন্দেহ হওয়ায় তারা গুদাম সিলগালা করে চলে গেছেন। চালের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠের ড্যামেজ পাওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিলগালা ভেঙে নিম্নমানের চাল দিয়ে গুদামের মজুদ পূরণ করার কথাও অস্বীকার করেন আক্তারুজ্জামান।

 

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/24/142441/