২৪ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১১:৫৬

নতুন পানিপথ তৈরিতে বাংলাদেশ ভারত ঐকমত্য

নতুন একটি পানিপথ তৈরিতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এ নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) সই হয়েছে। ভারতীয় কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে, শিপিং বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভাইয়াকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ফার্স্টপোস্টের রিপোর্টে বলা হয়, নতুন পানিপথ তৈরিতে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার একটি ‘উচ্চাভিলাষী প্রকল্প’ গ্রহণ করেছে। খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ ব্যবহার করে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের অধীনে ভারতের অংশে ব্রহ্মপুত্র নদ ড্রেজিং করবে দেশটির সরকার। আর বাংলাদেশ অংশে ড্রেজিং করবে বাংলাদেশ সরকার। আগামী এক বছরের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে। নতুন পানিপথটি অত্যন্ত কার্যকর বা ফলপ্রসূ হবে আশা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতে দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ-ভারত নতুন পানিপথ তৈরির পরিকল্পনা এবং এ সংক্রান্ত সমঝোতা সইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, হ্যাঁ, এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সমঝোতা মতে ব্রহ্মপুত্র নদের বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতের অংশে ভারত সরকার ডেজিং করবে। এ নিয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন নৌ-সচিব। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে অবশ্য কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি। বার্তা সংস্থা আইএএনএস’কে উদ্ধৃত করে অনলাইন ফার্স্টপোস্ট পানিপথ সংক্রান্ত রিপোর্টে জানিয়েছে, গত শনিবার রাতে আগরতলা সফরকালে প্রতিমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভাইয়া গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি দ্বিপক্ষীয় পানিপথ তৈরিতে গৃহীত প্রকল্পের অনেকখানি প্রকাশ করেন। রিপোর্টে বলা হয়, ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বহুমাত্রিক কানেকটিভিটি বা সংযুক্তির বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে রয়েছে পানিপথের মাধ্যমে সংযুক্তিও। এরই মধ্যে এমন ১৬টি পানিপথ বিষয়ক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর বেশির ভাগের সঙ্গেই বাংলাদেশ জড়িত। এসব প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১১১৬ কিলোমিটার নদীঘেরা সীমান্ত রয়েছে উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়- ব্রহ্মপুত্রসহ এ দু’টি দেশের মধ্যে রয়েছে ৫৪টি অভিন্ন নদী। ত্রিপুরার পরিবহন বিষয়ক সচিব সমরজিৎ ভৌমিকের মতে, ত্রিপুরার গোমতী, হাওড়া ও বাংলাদেশের নদীগুলোর মধ্যে পানিপথ উন্নয়নের প্রস্তাব জমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এরই মধ্যে নৌ-চলাচল বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১২ কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছে। ত্রিপুরার গোমতী ও বাংলাদেশের মেঘনা নদীর মধ্যে পানিপথের উন্নয়ন বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে। ১৯৭২ সালের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে চারটি অভ্যন্তরীণ নৌ বা পানিপথ কার্যকর রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে উত্তর আসামের পান্দু পর্যন্ত নৌপথ। কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসামের দক্ষিণে করিমগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথ। বাংলাদেশের রাজশাহী ও আসামের দক্ষিণাঞ্চলের ধুলিয়ান পর্যন্ত নৌপথ। বাংলাদেশ হয়ে করিমগঞ্জ-পান্দু-করিমগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথ। প্রতিমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভাইয়া একদিনের সফরে শনিবার আগরতলা যান। এ সময় তিনি আসামের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, গভর্নর তথাগত রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জন ঔষধি পরিযোজনা প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করেন। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে মানসম্মত ওষুধ পৌঁছে দেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রী মিটিং করেন জাতীয় হাইওয়ে, অবকাঠামো উন্নয়ন করপোরেশন, ত্রিপুরা পিডব্লিউডি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে সড়ক প্রকল্পের চলমান কাজ নিয়ে আলোচনা করেন। মন্ত্রীর তথ্যমতে, ত্রিপুরাতে এখন ৬টি জাতীয় হাইওয়ে রয়েছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৮৫৪ কিলোমিটার। ওদিকে নতুন পানিপথ নির্মাণ সংক্রান্ত টাইমস অব ইন্ডিয়ার গতকালের রিপোর্টে বলা হয়, এটি নৌপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বড় নদীগুলোর সঙ্গে আসামের ব্রহ্মপুত্র নদকে যুক্ত করে নতুন পানিপথটি তৈরি হবে। দু’দেশের ৫৪টি যৌথ নদীর কথা উল্লেখ করে টাইম অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে আরো বলা হয়- ভারতীয় কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে, শিপিং বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভাইয়া বলেছেন, অনেক বেশি অবকাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে গৃহীত ‘লুক ইস্ট অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। হাইওয়েজ বা যোগাযোগের জন্য বড় বড় অবকাঠামো গড়ে তোলা সেই পরিকল্পনারই অংশ।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=75475&cat=2/-