২৪ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১১:৫১

কোন গুদামে মজুদ কত অধিদপ্তর জানে না!

সরকারি গুদামের চাল পাচারের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এমনকি চালের মজুদ নিয়ে সরকার যখন বিপাকে তখনো সরকারি গুদামের চাল পাচার হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে চট্টগ্রামে এ রকম পাচার হওয়ার সময় ২০০ টন চাল জব্দ হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। 

সরকারি গুদামের চাল পাচার বন্ধ না হওয়ার পেছনে প্রতিটি ঘটনায় খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি খাদ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও দেশের কোন গুদামে কত চাল ও গম আছে তার হিসাব নেই।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সরবরাহ) চিত্তরঞ্জন বেপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে যে চাল আটক হয়েছে তা আমি পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছে তা আমি জানি না। ’
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর কাছে এ তথ্য থাকা উচিত ছিল কি না—এ প্রশ্নে চিত্তরঞ্জন বেপারী বলেন, ‘আমি পরিচালক হলেও কোথা থেকে কোন চাল কে নিয়ে গেল বা আত্মসাৎ করল তার দায়দায়িত্ব আমার একার নয়। এখানে আরো সাতজন পরিচালক আছেন। দায়িত্ব ভাগ করা আছে। ’
খাদ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দায়িত্বে অবহেলাই শুধু নয়, সারা দেশে চাল ও গম ক্রয় থেকে শুরু করে সরবরাহ ও মজুদের যে তালিকা সরকারের কাছে আছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। লোকাল সাপ্লাই ডিপো (এলএসডি), সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো (সিএসডি) মিলে সারা দেশে ৭৫২টি খাদ্যগুদাম রয়েছে অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া আরো চারটি বড় ধরনের সাইলো খাদ্যগুদাম রয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, এসব গুদামে সরকার প্রতিবছর চাল ও গম মজুদ করে। বছরের বিভিন্ন সময় দরিদ্রদের মধ্যে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ), কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ (কাবিখা) বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গুদাম থেকে চাল সরবরাহ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী এসব গুদামের কোনটি থেকে কত পরিমাণ চাল ও গম বের হলো বা ঢুকল তার একটি পরিসংখ্যান খাদ্য অধিদপ্তরের কাছে থাকার কথা।
সরকারি গুদামে যেখানে চালের সংকটের কারণ দেখিয়ে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছে সেখানে চট্টগ্রামে সরকারি গুদামের চাল আটকের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে খাদ্য অধিদপ্তর। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ঘটনায় কারা জড়িত তা বের করতে সাত দিনের সময় দিয়ে অধিদপ্তরের একজন পরিচালককে প্রধান করে সংশ্লিষ্ট এলাকার খাদ্য কর্মকর্তাসহ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ’ এই কর্মকর্তাও মনে করছেন, চাল এভাবে পাচার বা আটকের ঘটনায় নিশ্চয়ই খাদ্যগুদামের কারো যোগসাজশ রয়েছে; নইলে এভাবে সরকারি চাল রাস্তায় পাওয়ার কথা নয়।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নিয়ম হচ্ছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতি মাসে কমপক্ষে দুইবার গুদামের মজুদ পরিস্থিতির তদারকি প্রতিবেদন দেবেন বিভাগীয় কর্মকর্তার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রতিবেদন আসবে কেন্দ্রে। কিন্তু নিয়মিতভাবে কাজটি করা হয় না। অনেক এলাকার খাদ্যগুদাম কয়েক বছরে একবার পরীক্ষা না করার নজিরও আছে। ওই সব গুদামের মজুদ থেকে চাল-গম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব বিষয়ের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশ বা কারো গাফিলতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/07/24/523039