২৪ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১১:৪৬

আল আকসায় ইসরাইলি বর্বরতা চলছেই

আরও দুই ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যা * কূটনৈতিক চাপে ইসরাইল * জাতিসংঘের জরুরি বৈঠক আজ * ইসরাইলকে থামাও : এরদোগান * মেটাল ডিটেক্টর সরানোর ইঙ্গিত ইসরাইলের

জেরুজালেমের পবিত্র আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরাও তাদের বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরাইল। আল আকসায় প্রবেশের ওপর ইসরাইলি বিধিনিষেধকে কেন্দ্র করে শনিবার পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে পৃথক দুই হামলার ঘটনায় আরও দুই ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যা করেছে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী। ইসরাইলের এ ধরনের বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে কূটনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে তেল আবিব। উত্তেজনা প্রশমনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আজ জরুরি বৈঠক ডেকেছে। এদিকে ওই মসজিদের প্রবেশপথে মেটাল ডিটেক্টর সরানোর ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরার।


আল আকসা মসজিদে প্রবেশে ইসরাইলি বিধিনিষেধের ফলে সৃষ্ট বিক্ষোভে আহত দুই ফিলিস্তিনি কিশোর শনিবার হাসপাতালে নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত তিন দিনে মোট ৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শনিবার পূর্ব জেরুজালেমের আল আইজারিয়াতে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ওদে নাওয়াজা (১৭) নিহত হয়েছেন। এছাড়া পশ্চিম তীরের আবু দিস গ্রামে নিহত হন ১৮ বছর বয়সী এক তরুণ।

১৪ জুলাই ওই মসজিদের কাছে দুই ইসরাইলি পুলিশ নিহত হওয়ার পর সেখানে মেটাল ডিটেক্টরগুলো বসায় ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। মুসলিমরা যাকে ‘হারাম আল শরিফ’ বলে সেই স্থানটিকে ইহুদিরা ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আল আকসা মসজিদে শুধু ৫০ বছরের বেশি বয়সী মুসল্লিদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তখন প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী ওই বিক্ষোভ দমনে ফিলিস্তিনিদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছোড়ে। এতে একই দিনে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন। পরে শনিবার ফিলিস্তিনি এক যুবকের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ৩ ইসরাইলি। নতুন এ উত্তেজনায় সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১০ জনের প্রাণ গেল।

আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। আজ এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে শনিবার ইসরাইলের এ ধরনের বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। তিনি এ ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানান। উত্তেজনা নিরসনে মিসর, ফ্রান্স ও সুইডেনের অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি এ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। ওই সংস্থায় নিযুক্ত সুইডিশ কূটনীতিক কার্ল স্কাউ টুইটারে বলেন, ‘জেরুজালেমে উত্তেজনা অবিলম্বে কমিয়ে আনার উপায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি আলোচনায় মিলিত হতে যাচ্ছে।’ এদিকে জেরুজালের ওল্ড সিটিতে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরাইল ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। শনিবার এক বিবৃতিতে ইইউ জানায়, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একই সঙ্গে কাজ করতে ইসরাইল ও জর্ডানকে উৎসাহিত করছি আমরা।

আল আকসায় ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে ইসরাইলকে থামানোর আহ্বান জানান তিনি। শনিবার এক লিখিত বিবৃতিতে এরদোগান বলেন, আল আকসায় আমার ভাইদের হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অবিলম্বে ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে মেটাল ডিটেক্টর বা অন্য কোনো বাধা থাকতে পারবে না। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইল সরকার কর্তৃক আগ্রাসন থামাতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আল আকসা মসজিদের ফটকে বিতর্ক সৃষ্টিকারী মেটাল ডিটেক্টরগুলো সরিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনায় ইসরাইল রাজি বলে জানান দেশটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মেজর জেনারেল ইয়োভ মোদেশাই বিকল্প পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘জর্ডান ও অন্যান্য আরব রাষ্ট্র এ সমস্যা সমাধানে বিকল্প কোনো নিরাপত্তা পরামর্শ দেবে বলে আমরা আশা করছি। সমস্যার সুরাহা চায় ইসরাইল, তা ইলেকট্রুনিক, সাইবার বা আধুনিক প্রযুক্তির যে কোনো বিকল্পে হতে পারে। আমরা নিরাপত্তা সমাধান চাই, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নয়।’ বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সম্পাদক অ্যালান জনস্টন বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে এই প্রথম নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিল ইসরাইল।

http://www.jugantor.com/ten-horizon/2017/07/24/142509/