২৪ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ১১:৪৩

দেখা অদেখা

দুই সিটি করপোরেশনের সক্ষমতায় ঘাটতি

সালাহউদ্দিন বাবর

দেশের উন্নয়ন অর্থ, সবক্ষেত্রে জনগণ ও রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি; দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন; জনগণের জীবনমানের সমৃদ্ধি স্বাচ্ছন্দ্য বিধান, শহর নগর ও গ্রামে বসবাসরত মানুষের শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা; শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্রমবিকাশের ধারা চলমান রাখা ইত্যাদি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ করাই কর্তব্য। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন সব স্থানীয় সরকার তাদের আওতাভুক্ত উন্নয়নসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, এবারে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দায়িত্বশীলরা যথেষ্ট সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারেননি। সরকার বলছে, তাদের কাছে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী রয়েছে, কিন্তু দুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হচ্ছে সব কিছু। রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মহানগরী মওসুমি বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতায় একাকার। দুই নগরীর লাখ লাখ অধিবাসী পানিতে নাস্তানাবুদ। রাজধানীর কোটি মানুষ চিকুনগুনিয়ার ভয়ে সন্ত্রস্ত। এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। সারা দেশের রাস্তাঘাটের হাল হয়ে পড়েছে বেহাল। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশে সার্বিক উন্নয়নের দাবি করা হচ্ছে। এই দাবি এবং দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পাশাপাশি হাঁটতে হবে; অথচ তার কোনো লক্ষণ নেই। সরকারের দাবি ও বাস্তব অবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। সর্বত্র অক্ষমতার চিত্র ফুটে উঠেছে।
সরকারের নানা ঘোষণায় ও বক্তব্যে এসেছে, উন্নয়নের লক্ষ্যে বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। জনগণের করের টাকা দিয়েই এসব বরাদ্দের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যে হাঁড়িতে টাকাগুলো উন্নয়নের জন্য দেয়া হচ্ছে, সে হাঁড়িতে একাধিক ফুটো রয়েছে, যা দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের ফুটো। উন্নয়ন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, এর মূলকথা সামগ্রিক; সবক্ষেত্রে সমন্বিত অগ্রগতি। এ দিকে দুর্নীতি সব গ্রাস করছে; কিন্তু এর কোনো প্রতিবিধান নেই। উন্নয়নের বরাদ্দকৃত টাকা দুর্নীতিবাজরা গিলে খাচ্ছে। প্রশাসন এর কোনো রাশ ধরতে পারছে না, যার কারণ বোধগম্য নয়। দুর্নীতি, অনিয়ম যেমন দেশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম ুণœ হচ্ছে। সম্প্রতি সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীরা বিপুল অর্থ পাচার করেছে, যা দেশে চলমান ব্যাপক দুর্নীতির একটি প্রমাণ। কিন্তু এ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের যে বক্তব্য তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এমনটি বোঝানো হয়েছে যে, এই অর্থ যৎসামান্য এবং এটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল করা হয়েছে। কিন্তু কোনো অপরাধ ছোট করে দেখা উচিত নয়। তাতে যারা অপকর্ম করে তারা প্রশ্রয় পায় এবং অন্যায়কারীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
ঢাকা ‘নগরপিতা’ দুইজন। দুইজনের সক্ষমতা ও বক্তব্য কিন্তু অভিভাবকসুলভ মনে হয় না। কিছু দিন আগে একজন মেয়র বলেছিলেন, তিনি তার দায়িত্ব পালনে শতভাগ সফল। কিন্তু তার বক্তব্যের পর ঢাকার হাল বিশেষ করে রাস্তাঘাটের দুর্দশার পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া মহামারী আকারে যে বিস্তার লাভ করেছে আর স্বাভাবিক বৃষ্টিতেও যে জলাবদ্ধতা তাতে ঢাকা নগরবাসীর দুর্ভোগ সীমাহীন। তাহলে সাফল্য কোথায়? নগরপিতার উন্নয়নের দাবি শুনে ঢাকা ভাঙাচোরা এবড়ো-খেবড়ো মুখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। খোদ সরকার নগর প্রশাসনের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট এবং বিব্রত। চিকুনগুনিয়া মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার কারণ এডিস মশা। এই মশা নিধনে সিটি করপোরেশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এ সম্পর্কে দুই মেয়রের বক্তব্য নিয়ে রসিকতা চলছে। এক মেয়র বলেছেন, তারা ঘরে ঘরে গিয়ে মশা মারতে পারবেন না। তাদের কেউ কি বলেছেÑ আসুন, আমাদের ঘরে এসে মশা মেরে যান। তারা তো মশা প্রজননের ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করবেন। এটাই তো জনসাধারণের দাবি। মেয়রের বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় তিনি এ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু এটা তো ক্ষমা চাওয়ার বিষয় নয়, এটা দায়িত্ববোধের বিষয়। ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল একটি শহর। এই শহরে মেয়রের পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের। এই গুরুত্ব আর সম্মান বজায় রেখেই তাদের চলার কথা। মশক নিধন নিয়ে অপর মেয়রের বক্তব্যে চাতুরী রয়েছে। তিনি বলেছেন, ১০ দিনের মধ্যেই চিকুনগুনিয়া সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে। এই বক্তব্যের ফাঁকিটা হচ্ছে বৃষ্টিবাদলের দিনেই এডিস মশার প্রকোপ বাড়ে; এরা স্বচ্ছ পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে। শিগগিরই বর্ষা শেষ হয়ে যাবে। আর তাতে এই রোগের বিস্তার স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।
রাজধানী ঢাকা যানজটের শহর। রাস্তাঘাট কম, অপর দিকে যানবাহনের আধিক্য। বছরের পর বছর যাচ্ছে, কিন্তু নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণের চিন্তা-পরিকল্পনা নেই। যে রাস্তা রয়েছে তাতে শৃঙ্খলা নেই, যানবাহন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে। তবু শৃঙ্খলা বিধান করা হচ্ছে না। ঢাকা নগরীতে যে পরিমাণ রাস্তা রয়েছে তা-ও সংস্কার হয় না যথাসময়ে। এসব রাস্তাঘাটে যান চলাচল ভীষণ কষ্টকর। যানজটে শত শত কোটি টাকার জ্বালানি বিনষ্ট হচ্ছে আর ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচল করে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ১৭ কোটি মানুষের দেশের রাজধানী ঢাকা। এই নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের দিকে কারো কোনো লক্ষ্য নেই। শিথিল থাকা শৃঙ্খলাব্যবস্থা শহরকে করে তুলেছে আরো বেশি বিশৃঙ্খল। পৃথিবীর প্রতিটি শহর গড়ে ওঠে পরিকল্পনার আলোকে। কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সেই পরিকল্পনা। ঢাকার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু সেটা কেবল কিতাবেই রয়েছে; বাস্তবে তার কোনো প্রয়োগ-প্রতিফলন নেই। নতুন সরকার আসে, নতুন মেয়র আসেন, যান, নতুন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়; কিন্তু তা শুধু মুখে মুখেই।
আধুনিক ও সব সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন একটি আদর্শ নগরীর জন্য বাস্তবসম্মত মাস্টারপ্ল্যান থাকা জরুরি। কিন্তু ঢাকা শহরের গলদ এখানেই। শহরটি কিভাবে গড়ে তোলা হবে তার পরিকল্পনাই আধুনিক নয়, এটা বহু পুরনো। এ থেকে ধরে নেয়া যায়, এ নগরীটি কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনার অধীনে নেই; যে যার মতো করে চলছে। অনেকটা কাণ্ডারিহীন তরীর মতো। রাস্তাঘাট নির্মাণে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, বাংলাদেশ চাচ্ছে যতটা দ্রুত সম্ভব উচ্চমধ্যম আয়ের একটি দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে। কিন্তু তেমন দেশ হতে হলে রাজধানী ঢাকা আধুনিকায়ন জরুরি। এ ক্ষেত্রে বহু বাধা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে যানজটের কারণে। আরো বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে যান চলাচলের গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে মাত্র ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। আগামীতে এই হার প্রতি ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটারে নেমে আসবে। অথচ হেঁটে চলার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। যারা নগর পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের বক্তব্য হলোÑ ঢাকাকে আধুনিকায়ন করতে হলে সব সেবা সংস্থার সমন্বয় জরুরি। তদুপরি সিটি করপোরেশনকে সিটি গভর্নমেন্টে পরিণত করতে হবে।
ঢাকার জনসংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। শত শত মানুষ প্রতিদিন সারা দেশ থেকে ছুটে আসছে কাজের জন্য। ঢাকা শহরে যে হারে মানুষ আসছে, এই হার বজায় থাকলে ২০৩৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা তিন কোটি ৫০ লাখের মতো দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই বিপুল মানুষের আগমনে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হবে, তার সমাধান না হলে দেখা দেবে চরম বিশৃঙ্খলা। তাতে এই নগরী আর বাসযোগ্য থাকবে না। নগরীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে বিশাল আয়োজন করতে হবে, উপযুক্ত পরিকল্পনা নিতে হবে। কিন্তু এর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষের বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থান করা এক বিরাট ব্যাপার। ২০৩৫ সাল আসতে আর বেশি দেরি নেই। কিন্তু দুই ঢাকা সিটি করপোরেশনে এ জন্য পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ কিন্তু চোখে পড়ছে না। শুধু সিটি করপোরেশনই নয়, এ জন্য সরকারের যে মাথাব্যথা তাও নেই। বর্তমান সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই তাদের এসব বিষয় দলীয় কাঠামো ও পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকা দরকার। বড় দলগুলো যারা ক্ষমতায় ছিল এবং ভবিষ্যতে আসবে, তাদেরও এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।
এবার দেশে কয়েক দফা বন্যা হয়ে গেল এবং এখনো বন্যা বিরাজ করছে। প্রথম দফা বন্যা হয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকায়। হাওর এলাকাগুলো খাদ্যে উদ্বৃত্ত অঞ্চল। বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের বসতি। এবার বিভিন্ন হাওর এলাকায় কয়েক দফা পাহাড়ি ঢলে এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মারাত্মক বন্যা হয়েছে। ফলে উঠতি ফসল নষ্ট হয়ে যায়, মৎস্যসম্পদ ভেসে যায়। কোটি কোটি টাকার সম্পদ হয়ে যায় বিনষ্ট। তাতে হাওর এলাকার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। ক্ষেতে ফসল, হাওরের মাছ এবং বসতবাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে মানুষ। এই লাখ লাখ মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে দিন কাটিয়েছে। তাদের পাশে কিন্তু কেউ গিয়ে দাঁড়ায়নি। ত্রাণের জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে দুর্গত অঞ্চলের অসহায় মানুষের মধ্যে। কিন্তু সরকারিভাবে তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী যায়নি। সরকার মুখে বলেছে, প্রচুর ত্রাণ মজুদ রয়েছে, কিন্তু তা বিলিবণ্টন হয়নি। এমনকি বেসরকারিভাবেও ত্রাণ বণ্টনের কোনো খবর এবার পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, হাওরে যে বন্যা হয়েছে তার প্রায় প্রতিটি হয়েছে বাঁধ ভেঙে। যে বাঁধ তৈরি হয়েছে বন্যা প্রতিরোধের জন্য, এবার সেই বাঁধ ভেঙেই বন্যা হয়েছে। জনগণের বিপুল অঙ্কের টাকায় যে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে তা দেখভাল করা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি বলে বাঁধ ভেঙেছে। তাহলে এবার জনভোগান্তি ও বিপুল অর্থের অপচয়ের জন্য দায়ী কে? যারা এসব বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের গাফিলতির জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করা উচিত।
হাওরের বন্যা ছাড়াও এবার অতিবৃষ্টি ও সীমান্তের ওপার থেকে ছেড়ে দেয়া অপরিমেয় পানি বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ঘটিয়েছে। তাতে কোটি কোটি মানুষের বাড়িঘর নিমজ্জিত হয়েছে এবং লাখ লাখ একর জমির ফসল ডুবে গেছে, মৎস্যখামার ভেসে গেছে। ভারত বলে যে, তারা বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ; বাস্তবে তার নজির দেখা যায় না। শুকনো মওসুমে তারা উজানের বাঁধগুলো বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য পানির কষ্ট সৃষ্টি করে; আবার অতিরিক্ত পানি হলে তা ছেড়ে দিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের মানুষের। এটা কি বন্ধুত্বের নিদর্শন, না এক প্রকার শত্রুতা।
কয়েক দফা বন্যায় এবার দেশের বিপুল পরিমাণ ফসল বিনষ্ট হয়েছে। তার সুযোগ নিয়ে অসৎ ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য ও সবজির দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। সরকার এ জন্য চাল আমদানির ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এরপরও চালের দাম কমাচ্ছে না। চাল আমদানির সুফল জনগণ নয়, অসাধু ব্যবসায়ীরা লুটেপুটে নিচ্ছে। এ থেকে ব্যবসায়ীদের নৈতিক অবক্ষয় লক্ষ করা গেল। সেই সাথে বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকার পালন করেনি। অসততার কাছে সরকার হেরে গেছে। তার কর্মকৌশল সফল হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরকার বাজারে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারেনি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ত্রাণ বণ্টন ও চালের বাজার ঠিক রাখার ক্ষেত্রে সরকার জনগণকে হতাশ করেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যেমন ঢাকার রাস্তা চলাচল উপযোগী রাখতে সমর্থ হননি; তেমনি সরকার সড়ক ও মহাসড়কগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেনি।
পর্যবেক্ষকদের মত হচ্ছে, ক্ষমতাসীনেরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজেদের যতটা ব্যস্ত রাখছেন, জনসেবায় তাদের নজর ততটা নয়। আর তাতে সারা দেশের মানুষের কষ্ট বেড়েই চলেছে। দেড় বছর পর যে নির্বাচন হবে তাতে বিজয়ী হওয়ার জন্য সরকার অতিরিক্ত নজর দেয়ায় ভিন্ন দিকে তাদের নজর কম। কিন্তু রাজনীতিকদের বোঝা দরকার, রাজনীতির অর্থ শুধু ক্ষমতা নয়, জনসেবা। সরকার শুধু দলীয় রাজনীতির দিকে বেশি মনোযোগ দিলে মানুষের মন থেকে তারা হারিয়ে যাবে। অন্য যারা জনসেবাকে রাজনীতির সাথে সমান গুরুত্ব দেবে, জনগণ তাদের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠবেÑ এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। আজকের বিশ্ব প্রতিযোগিতায় এখানে পিছিয়ে গেলে হেরে যেতে হবে। বিএনপির উচিত সরকারের এই দুর্বলতাগুলোর দিকে নজর দিয়ে তার সদ্ব্যবহার করা। বিরোধী দলের কাজ হচ্ছে সরকারের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা জনগণের সম্মুখে তুলে ধরা।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/238292