১৫ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ৯:৪৭

বন্যার অজুহাতে মাছ-সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে

ঢাকার বাজারে আরেক দফা বেড়েছে মাছ ও শাক-সবজির দাম। দাম বৃদ্ধির অজুহাত হিসেবে এবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কথা জানান বিক্রেতারা। একই অজুহাতে দাম বেড়েছে মুরগিরও। তাদের অভিযোগ, নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং হাওর-বাঁওড় ডুবে যাওয়ায় মাছ ধরা যাচ্ছে না। আর ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত শাক-সবজির সরবরাহ বেশ কমে গেছে। এ দিকে ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি শুল্ক কমানোর প্রভাবে খুব ধীরে হলেও সবধরনের চালের দাম কমতে শুরু করেছে।

গতকাল খিলগাঁও ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দাম অস্বাভাবিক বেশি। প্রতিটি সবজির দামই এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টমেটোর দাম। গত সপ্তাহে যে টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল গতকাল একই টমেটো বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। এ ছাড়া করলা কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ১০ টাকা বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, পটোল ৪৫ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মুলা ৪০, কচুর লতি ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি ফালি ২০ থেকে ২৫ টাকা, গাজর ৬০, কাঁকরোল ৬০ টাকা, পুঁইশাক প্রতি আঁটি ২০ টাকা, লালশাক ১০ টাকা ও লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়।
সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মালিবাগ বাজারের দোকানি সোহেল রানা নয়া দিগন্তকে বলেন, সারা রাত কাওরান বাজারে ঘুরেও সবজি কিনতে পারিনি। বন্যার কারণে সরবরাহ কমে গেছে। সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে পাইকাররা। বেশি দামে কিনেছি বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেড়ে গেলে অনেক সময় লাভ ছাড়াই বিক্রি করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত কাস্টমারদের কাছ থেকে অত্যধিক বেশি দাম রাখা অনেক সময় কষ্টকর হয়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরবরাহ ভালো থাকলেও দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতিটি ইলিশ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
বিক্রেতারা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে মুরগির দাম। গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। আর দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া গরুর গোশত ৪৮০ থেকে ৫০০ এবং খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
মুদি বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ২৬ থেকে ২৮ টাকা, দেশী রসুন ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১১০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। ছোলার কেজি ৮২ থেকে ৮৫ টাকা, দেশী মুগ ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০ টাকা, মাসকলাই ১৩৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। ভোজ্যতেলের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ব্র্যান্ডভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায়, প্রতি লিটার ১০০ থেকে ১০৬ টাকায়। এ ছাড়া দারুচিনি ৩৬০ টাকা, জিরা ৪৫০ টাকা, শুকনা মরিচ ২০০ টাকা, লবঙ্গ ১৫০০ টাকা, এলাচ ১৬০০ টাকা, চীনা আদা ১২০ টাকা, ক্যারালার আদা ১৪০ টাকা, হলুদ ১৯০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
এ দিকে কমিয়ে দেয়া শুল্ক পরিশোধ করে আমদানি করা চাল দেশে আসতে শুরু করায় খুচরা পর্যায়েও চালের দাম কমতে শুরু করেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম কমানো হয়েছে। সেজন্য তারাও খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চালে ২ টাকা পর্যন্ত দাম কমিয়েছেন। আগের চালগুলো বিক্রি শেষ হলে নতুন চাল আনার পর খুচরা বাজারে চালের দাম আরো কমবে বলে জানান তারা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দর পর্যালোচনায় বলা হয়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে গতকাল মোটা স্বর্ণা চাল ২ টাকা কমিয়ে প্রতি কেজি ৪৬ টাকা, পারিজা চাল ৪৪ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া ভালো মানের মিনিকেট ২ টাকা কমে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, বিআর২৮ ৫০ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫২ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৫৪ টাকা, পাইজাম চাল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাসমতি ৫৪ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা এবং পোলাও চাল ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/235809