১৫ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ৯:৩৯

মানহীন সংস্কারে ভেঙেচুরে একাকার

শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা ঢাকা শহরের সড়কগুলো খানাখন্দে ভরে গেছে। সংস্কারের অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কগুলো এমন বেহাল হওয়ায় নগরবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। নিন্মমানের কাজের কারণে সড়কগুলো সামান্য বৃষ্টিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধ সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল করায় সড়কের পিচ ঢালাই উঠে গর্তের সৃষ্টি করছে।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সড়ক উন্নয়ন বিধিমালা অনুযায়ী, যে কোনো সড়ক উন্নয়ন কাজের পর সেসব সড়ক অন্তত পাঁচ বছর ঠিক থাকবে। আর এসব সড়কের উন্নয়ন কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জামানত এক বছর পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের কোষাগারে জমা থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সড়কগুলোতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে দেবে। এমন বিধিমালা থাকলেও এসবের চর্চা নেই দুই সিটি কর্পোরেশনেই। ফলে ঠিকাদাররা মানহীন কাজ করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন। আর প্রতিবছর একই সড়ক সংস্কার করাচ্ছেন প্রকৌশলীরা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক বিভাগীয় কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছরই শত শত কোটি টাকা সড়ক উন্নয়ন কাজের পেছনে ব্যয় করে সিটি কর্পোরেশন। সামান্য বৃষ্টিতে ভেঙে তছনছ হয়ে যায় এসব সড়ক। এর কারণ হল মানহীন কাজ। তার মতে, নগরীতে কিছু সড়কে মানসম্পন্ন কাজ হয়েছে। সেগুলো কিন্তু নষ্ট হচ্ছে না। আর এটা হয়েছে গুটিকয়েক এলাকায়। বেশিরভাগ এলাকায় ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা সমন্বয় করেই এসব অনিয়ম করে চলেছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে মেয়র মানসম্পন্ন কাজের ব্যাপারে খুবই অনড় থাকলেও একত্রে বেশি এলাকায় কাজ হওয়ায় সেটা নিশ্চিত করতে পারছেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন প্রকৌশলী বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে গত দু’বছরে রেকর্ড পরিমাণ সড়ক, ড্রেন ও ফুটপাত উন্নয়নের কাজ হয়েছে। কিন্তু এরপরও সড়কগুলো বেহাল। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মানহীন কাজ। তার মতে, মানসম্পন্ন কাজ করানোর বিষয়ে বর্তমান প্রশাসনের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। কেননা, ঠিকাদারদের জনে জনে পারসেন্ট দিয়ে কাজ নিতে হচ্ছে। বিল ওঠানোর ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ই-টেন্ডারিং চালু করলেও কাজ ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের ইচ্ছায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত টয়েনবি সার্কুলার রোডের চৌরাস্তায় সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পুরান ঢাকার সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনেও অসংখ্য গর্ত দেখা গেছে। টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও ফ্লাইওভার পর্যন্ত বিশ্বরোড সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে শত শত খানাখন্দ। পিচ উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব সড়কে চলাচলকারী এবং আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরের ব্যবধানে এসব সড়কে কয়েকবার সংস্কার কাজ করতে দেখেছেন তারা। কিন্তু এরপরও সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী নেই। আরও দেখা গেছে, খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে বাসাবো হয়ে নন্দীপড়া, বাসাবো ঢাকা ওয়াসা রোড, উত্তর গোড়ান, গুলিস্তান থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত সড়কের হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক পিচ ঢালাই, ইট, খোয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই এ সড়কে পানি জমে যাচ্ছে।
আরও জানা গেছে, মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ রোড, মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, বছিলা সড়ক, মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে দুই লেন, হাজীপাড়া সিএনজি পাম্পের সামনে মূল সড়ক, রামপুরা ব্রিজ থেকে ডেমরা সড়কের মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত অংশ, আসাদগেট থেকে গাবতলী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কেরও বেহাল দশা। এ ছাড়া সাত রাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কেরও একই অবস্থা। সড়কটিতে অসংখ্য বড় বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় চরম জনদুর্ভোগ হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ভেঙেচুরে যাওয়া সড়কগুলোয় চলাচলে নগরবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কোথাও বড় বড় গর্ত, আবার কোথাও পানি জমে রয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে স্বাভাবিক চলাচলের উপায় নেই। ভাঙা সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। অথচ সড়ক মেরামতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যাগ দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, মানহীন সড়ক উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে এটা সঠিক নয়। সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কগুলো ঠিক রাখা য়ায় না। এ ছাড়া জলাবদ্ধ সড়কে ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) শরীফ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান সময়ে ঢাকা উত্তরে মানহীন কাজের কোনো সুযোগ নেই। নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে, সড়ক উন্নয়ন কাজগুলো। যে কোনো সময়ের থেকে ঢাকা উত্তর এলাকার সড়কগুলো এখন অনেক ভালো। তবে বর্ষা মৌসুমে সড়কে পানি জমে থাকায় কিছু সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করে দিচ্ছি।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/07/15/139679/