২৩ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ১১:১৮

চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ঠেকানো যাচ্ছে না

মহানগরীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে আন্তঃসংস্থা সমন্বয়হীনতার কারণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠেছে। ফলে পাহাড়ে মৃত্যুর মিছিল যেমনি থামছে না, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্তও পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের অদূরে জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর পর পাহাড়ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। প্রতিবারই কোনো না কোনো পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণহানিতে প্রশাসনে হই চই পড়লেও কিছুদিন পর তা আবার অদৃশ্য কারণে থেমে যায়। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও পাহাড়ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সেসব সিদ্ধান্তের সামান্যও বাস্তবায়িত হয়নি। গত শুক্রবার কয়েকটি পাহাড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধারেকাছেও নেই। অবশ্য এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে আন্তঃসংস্থা সমন্বয়হীনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভোটের হিসাব-নিকাশও কাজ করছে বলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। 

গত ১০ জুলাইয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করা হবে। পাহাড়ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৭তম ওই সভায় এ সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো: রুহুল আমীন। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। আর সেই ছলিমপুরেই পাহাড়ধসে মারা গেলেন একই পরিবারের পাঁচজন। পূর্ব ঘোষণার বাস্তবায়ন হলে হয়তো এই প্রাণহানি ঘটত না। এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, গত ৮ মে ও ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত পাহাড়ব্যবস্থাপনা কমিটির দু’টি সভায় জঙ্গল ছলিমপুরের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। সভায় প্রদত্ত সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, একটি চক্র সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে অবৈধভাবে পাহাড় দখল করে দুই হাজার বসতি স্থাপন করেছে। ওখানে একটি চক্রও কাজ করছে। তারা এত শক্তিশালী, পুলিশের লোকজনও ওদের সিকিউরিটির কাছে এন্ট্রি করে তারপর ঢুকতে পারে সেখানে।
ওই সভার তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৫০ হাজার লোকের বসতি জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড় ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরতদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। নগরীর বেশির ভাগ পাহাড় বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন।
সূত্র মতে, নগরীর ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মধ্যে পাঁচটিতে অর্থাৎ, মতিঝর্ণা পাহাড় ও বাটালি হিল, টাইগারপাস-লালখান বাজার পাহাড়, ফ’য়স লেক আবাসিক এলাকা এবং ইস্পাহানি পাহাড়ে দ্রুত উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত ছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে মালিকানাধীন নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা পাহাড়ের ২৬ একর জায়গায় ২০৪১টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে কাঁচাঘর থেকে শুরু করে পাঁচতলা ভবনও রয়েছে। এসব স্থাপনার অবৈধ দখলদার ৬ হাজারেরও বেশি বলে ওই সভার তথ্য।
বিভিন্ন সময়ে পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রশাসনের তৎপরতা পরিলক্ষিত হলেও পরে প্রশাসনের নিজেদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের অসহযোগিতার কারণে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সেবামূলক সুযোগ-সুবিধা যেমনÑ বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ বন্ধ করে দেয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সুযোগ-সুবিধা না পেলে সেখানে লোকজন থাকতে নিরুৎসাহিত হবে। এরই মধ্যে জঙ্গল ছলিমপুর ও চট্টগ্রাম মহানগরীর মতিঝর্ণা, বাটালি হিল এবং এ কে খান পাহাড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম নগরীর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের অদূরে লেবুবাগান এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যুর পর শক্তিশালী পাহাড়ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম মহানগরীরতে পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রায় ২ শ’জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ কমিটি ওই সময়ে ১৭টি সভায় মিলিত হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/238059