২৩ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ১১:১৪

ইজারার শর্ত ভেঙে এক হাজার অবৈধ স্থাপনা

এর মধ্যে তিন শতাধিক দোতলা ও তিনতলা ভবন রয়েছে। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে জেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ থেকে আট বছর আগে রামগঞ্জ পৌরসভার কলাবাগান এলাকার ৪ শতাংশ জমি ইজারা নেন মফিজুর রহমান। ইজারার শর্ত ভেঙে পরে সেখানে তিনি দোতলা ভবন নির্মাণ করে দোকান তৈরি করেন। একই এলাকায় আবদুস ছাত্তার নির্মাণ করেছেন তিনতলা বিপণিবিতান। প্রায় ১০ বছর আগে ৫ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে তিনি সেখানে ভবন নির্মাণ করেন।
এভাবে জেলা পরিষদ থেকে ভূমি ইজারা নিয়ে এ উপজেলায় অবৈধভাবে প্রায় এক হাজার দোকান ও ভবন নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে তিন শতাধিক দোতলা ও তিনতলা ভবন রয়েছে। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে জেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জেলা পরিষদের সরবরাহ করা তথ্য অনুযায়ী, রামগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৭৬৪ জন ইজারাগ্রহীতা আছেন। তাঁদের ৯ দশমিক ৭২ একর ভূমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারের সঙ্গে ২০টি শর্তে চুক্তি হয়। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ভূমি ইজারার শর্তে বলা আছে, ইজারা দেওয়া ওই ভূমিতে অস্থায়ী দোকান (সেমিপাকা) বা বসবাসের জন্য কাঁচা ঘর করা যাবে। ওপরে ছাদ দিয়ে স্থায়ী ইমারত করা যাবে না। স্থায়ী স্থাপনা বা দালান নির্মাণ করা যাবে না। এর ব্যতিক্রম হলে জেলা পরিষদ ইজারা বাতিল বা স্থাপনা অপসারণ করতে পারবে। ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে যাতে স্থায়ী ভবন নির্মাণ করতে না পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সার্ভেয়ার (জরিপকারী) ও অফিস সহকারী তদারকির দায়িত্বে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ উপজেলায় ইজারা নেওয়া অধিকাংশ ভূমিতে ভবন নির্মিত হয়েছে স্থায়ীভাবে। রামগঞ্জ বাজার খালের (বিরেন্দ খাল) দুই পাশে (আলীপুর থেকে সোনাপুর) প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় দোকান তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে খাল সংকুচিত হয়ে গেছে। কলাবাগান এলাকায় দোতলা ভবন নির্মাণ করেছেন উপজেলার ভাদুর গ্রামের মফিজুর রহমান। একই এলাকায় তিনতলা মার্কেট রয়েছে শহরের বাসিন্দা আবদুস ছাত্তারের। সোনাইমুড়ী সড়কে রয়েছে তিনতলা কাজী আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। এ সড়কে খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তি নির্মাণ করেছেন একটি দোতলা ভবন। এ ছাড়া পাট বাজার, পুরান বাসস্ট্যান্ড, দক্ষিণ বাজার ও সোনাপুর বাজারে জেলা পরিষদের জমি ইজারা নিয়ে স্থায়ী ভবন তৈরি করা হয়েছে।
রামগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. দেলোয়ার হোসেনসহ পাঁচজন জনপ্রতিনিধি বলেন, ইজারা নিয়ে অন্তত এক হাজার দোকান ও ভবন স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সোনাপুর বাজারে ইজারা নেওয়া জমির ৮০ শতাংশেই স্থায়ী ভবন রয়েছে।
এ সম্পর্কে মফিজুর রহমান, আবদুস ছাত্তারসহ ছয়জন ভবনমালিক বলেন, ইজারা নেওয়া জমিতে স্থায়ী ভবন তৈরি করা যাবে—এমন শর্তের কথা তাঁরা জানেন। তবে ভবনগুলো নির্মাণের সময় জেলা পরিষদ নিষেধ করেনি। এ জন্য তাঁরা এ কাজ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচজন ইজারাদার বলেন, জেলা পরিষদ থেকে একটি দোকানের ভূমি (১০-১৫ ফুট) ইজারা নিতে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। ১০-১২ বছর ধরে এ কার্যক্রম চললেও গত ছয় বছর স্থায়ী স্থাপনা নির্মিত হয়েছে বেশি। জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মিজানুর রহমানকে খুশি রেখে স্থায়ীভাবে ভবন বা দোকান নির্মাণ ও রক্ষা করা হচ্ছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান বলেন, স্থায়ী স্থাপনাগুলো অনেক আগেই নির্মাণ করা হয়েছে। কার্যালয় থেকে তাঁদের একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করলে ইজারা বাতিলের নিয়ম রয়েছে। অনেক বছর আগে স্থায়ীভাবে ভবনগুলো তৈরি করা হয়েছে। তবে নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1261816/