মধুবাগ মাঠের বর্তমান চিত্র। দুই বছর থেকে মাঠজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। মাঝমাঠে জমে আছে বৃষ্টির পানি। গতকাল সকালে ছবিটি তুলেছেন আবদুস সালাম
২৩ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ১১:১৪

‘মধুখেকোদের’ দখলে মধুবাগ মাঠ

ঘনবসতিপূর্ণ মধুবাগ এলাকার কিশোর-তরুণদের খেলাধুলার জায়গা ছিল মধুবাগ মাঠ। মাঠটি এখনো আছে, তবে নেই খেলার সুযোগ। কারণ, মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইট-সুরকি। আর ট্রাকের চাকার ভারে মাঠজুড়ে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত।

স্থানীয় লোকজন বলেন, মাঠের পাশে একটি বহুতল কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণকাজের কারণে মাঠের এই হাল হয়েছে। এতে প্রায় দুই বছর ধরে এলাকার কিশোর-তরুণেরা খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
মধুবাগ পুলিশ ফাঁড়ির উত্তর দিকে এই খেলার মাঠ। মাঠের পূর্ব প্রান্তে মধুবাগ কাঁচাবাজার, পশ্চিমে নয়াটোলা কামিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা, দক্ষিণে মাদ্রাসার দিকে যাওয়ার সরু রাস্তা ও উত্তরে নির্মাণাধীন কমিউনিটি সেন্টার।
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের উত্তর-পূর্ব কোণে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি বড় ট্রাক। ট্রাকগুলো মাঠের যে অংশ দিয়ে গেছে, সেই অংশে তৈরি হয়েছে চাকার দাগ। উত্তর দিকে কয়েকটি গাছ কেটে ফেলে রাখা। গাছের ডালপালার ওপর বালু, ইটের খোয়াসহ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা স্তূপ করে রাখা। মাঠের পশ্চিম কোনায় ফুটবল খেলার গোলবার ভাঙা। সেখানে দড়ি দিয়ে দোলনা বানিয়ে দোল খাচ্ছে এক শিশু। দোলনার পাশে মাঠের জায়গায় লম্বালম্বি চারটি আধা পাকা কক্ষ বানানো হয়েছে। সেখান থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে মাঠের উত্তর পাশে নির্মাণাধীন কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট-বালু, রড ও পরিত্যক্ত বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মাঠের সর্বত্র। এমন অবস্থায় এই মাঠে দৌড়ানো দূরে থাক, হাঁটাই দায়। এমন অবস্থার পরও মাঠের দক্ষিণ পাশে ও দক্ষিণ পশ্চিম কোনায় কয়েক ফুট জায়গার মধ্যে খেলছে ১৫-২০ জন কিশোর।
মাঠে খেলতে এসেছে শিশুটি। কিন্তু খেলার জায়গা নেই
কিশোরদের একজন প্রথম আলোকে বলল, এই এলাকায় খেলার মতো আর কোনো মাঠ নেই। এখানে নিয়মিত ক্রিকেট ও ফুটবল খেলত তারা। কিন্তু মাঠে এখন আর খেলা যায় না। বৃষ্টি হলে মাঠে পানি জমে থাকে। পানি না থাকলে তারা নিজেরাই মাঠে পড়ে থাকা ইট-খোয়া সরিয়ে খেলার জন্য জায়গা তৈরি করে নেয়।
মধুবাগ এলাকায় প্রায় ৫০ বছর ধরে থাকেন, এমন একজন ব্যক্তি নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আশপাশের এলাকায় সবচেয়ে সুন্দর ও বড় মাঠ ছিল এটি। আস্তে আস্তে এর আকার কমতে থাকে। মধুবাগ কাঁচাবাজার, উত্তর দিকের ক্লাব এবং তার পাশের কয়েকটি ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে মাঠের জমিতে। একসময় জাতীয় দলের অনেক ফুটবলারও এই মাঠে খেলতেন। কয়েক বছর আগেও নিয়মিত টুর্নামেন্ট হতো এই মাঠে। মাঠের মাটি ঠিক করার জন্য পাঁচ টন ওজনের একটি রোলারও ছিল। কয়েক বছর আগে কে বা কারা সেটি বিক্রি করে দেয়। তিনি বলেন, দখলের পর যতটুকু জায়গা ছিল, তাতে নিয়মিত খেলত স্থানীয় ছেলেরা। কিন্তু কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ শুরু হওয়ার পর সেই সুযোগও আর নেই।
মধুবাগ এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩-এর আওতাধীন ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। মাঠটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ডিএনসিসির।
একটু জায়গায় খেলার চেষ্টা করছে কয়েকজন কিশোর
সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কমিউনিটি সেন্টারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করতে গিয়ে মাঠের পরিবেশ নষ্ট করা ঠিক হয়েছে কি না, জানতে চাইলে অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘ঠিক হয়েছে, এটা কেউ বলবেন না। তবে মাঠটি যাতে দ্রুত খেলার উপযোগী করা হয়, সে জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলা হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় কাউন্সিলর তৈমুর রেজার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
মাঠ দখল করে স্থাপনাও তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
তবে কাউন্সিলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, নির্মাণসামগ্রী রাখার বিকল্প জায়গা না পাওয়ায় সেগুলো মাঠে রাখা হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষ হলে মাঠটি আবার ঠিক করা হবে।
কবে নাগাদ মাঠের নির্মাণকাজ শেষ হবে, জানতে চাইলে নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. তানজিদ বলেন, চারতলাবিশিষ্ট কমিউনিটি সেন্টারটি নির্মাণের মূল কাজ শেষ হয়েছে। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1262151/