১৪ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩০

চালে চালবাজি আরো ৫ মাস!

হাওরে অসময়ের বন্যার পর থেকেই চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে। বিভিন্ন জেলায় ধানের ব্লাস্ট রোগ তা আরো উসকে দিয়েছে। দেশের বাজারে চালের দাম এখন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। তিন বেলা ভাত জোটাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে, শূন্য মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি (জিটুজি) পর্যায়েও আমদানি করা হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরেও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলছে। ভারত ও মিয়ানমার থেকে ব্যবসায়ীদের আমদানি করা চাল পাইকারি বাজারে পৌঁছে গেছে। পাইকারিতে দাম কিছুটা কমেছেও। কিন্তু খুচরায় তা ভোক্তাদের নাগালে আনতে পারছে না সরকার।

সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের মূল্য বাড়িয়েছে। হাওরে বন্যা, সারা দেশে অতিবৃষ্টি ও ব্লাস্ট রোগের কারণে যে পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা বড়জোর ১০-১৫ লাখ মেট্রিক টনের মতো। এতে সার্বিকভাবে চালের সংকট হওয়ার কথা নয়। কারণ সারা দেশে চালের উৎপাদন প্রায় সোয়া তিন কোটি মেট্রিক টন, আর চাহিদা আড়াই কোটি মেট্রিক টনের মতো।
গত ২৮ জুন সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের যতগুলো চালের গুদাম রয়েছে তার থেকে চালের নমুনা এনে দেখেছি। সরকারি গুদামে আমাদের মজুদ এক লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। অনুমোদিত মিলগুলোর মজুদ ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন। অননুমোদিত মিল, কৃষক, আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে মজুদ আরো ৫০ লাখ ৩০ হাজার ৪৫৬ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে এক কোটি ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৮২১ মেট্রিক টন খাদ্যের মজুদ রয়েছে আমাদের। কাজেই খাদ্যের অভাব হবে না। ’

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম চালের দাম বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন অসাধু ব্যবসায়ীদের। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘হাওর অঞ্চলে অকালবন্যার পর থেকেই অসাধু ব্যবসায়ীরা চাল মজুদ করেছিল। যেসব মিল মালিক অসাধুভাবে চাল মজুদ করেছে, তাদের আমরা তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তালিকায় ১৬ হাজার মিল মালিক রয়েছে। ’ মন্ত্রী আরো বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে যেভাবে চাল আমদানি করা হচ্ছে, তাতে চালের দাম সেপ্টেম্বরেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
তবে মিলাররা বলছে, এ বছর হেক্টরপ্রতি চালের উৎপাদন কম হয়েছে গড়ে চার মণ করে। তার ওপর বন্যা ও ব্লাস্ট রোগে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে ২৫ লাখ টনের বেশি ধানের ক্ষতি হয়েছে এবার। মিলাররা চাল মজুদ করেনি। সরকার এ তথ্য বিশ্বাস না করলে মিলগুলোতে অভিযান চালাক। মজুদ ধরা পড়লে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনুক।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সারা দেশের মাঠপর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তা, চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের দাবি, নভেম্বরে বাজারে নতুন ধান আসার আগে চালের দাম স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাদের ভাষ্য মতে, সরকারি মনিটরিংয়ের অভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয় মাঠের বাস্তবতাকে আমলে নেয়নি। তাই আজ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিমধ্যে চাল আমদানি শুরু হলেও শিগগিরই যে তা বাজারে প্রভাব ফেলবে—এমন আশা দেখাতে পারছেন না আমদানিকারক, চালকল মালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও বাজারে তার খুব একটা প্রভাব পড়ছে না। কারণ এমন সময় শুল্ক কমানো হয়েছে যখন ভারত চালের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ যখন বেশি শুল্কে চাল আমদানি করত, তখনো যে খরচ পড়ত এখনো প্রায় সে রকমই খরচ পড়ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছে, শুল্ক কমানোর আগে প্রতি মেট্রিক টন চাল আমদানিতে শুল্ক ছিল ৯ হাজার ১২৫ টাকা। তখন ভারতে চালের দাম ছিল টনপ্রতি ৩৯০ ডলার। এতে প্রতিকেজি চালের আমদানি মূল্য পড়ত ৪২ টাকা। এখন টনপ্রতি শুল্ক কমবে তিন হাজার ২২৫ টাকায়। কিন্তু ভারত রপ্তানি মূল্য ৩৯০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪২০-৪৩০ ডলার করেছে। অর্থাৎ টনপ্রতি ৩০-৪০ ডলার দাম বেড়েছে। এতে প্রতি কেজি চালের আমদানি মূল্য পড়ছে ৪০ টাকার কাছাকাছি। ফলে বাজারে চালের দাম খুব একটা কমার সুযোগ নেই। মিয়ানমারও দাম বাড়িয়েছে। ঈদের আগের দিন মিয়ানমারের টনপ্রতি ৩৪০ ডলারের চাল এখন ৩৪৫-৩৫০ ডলারে কিনতে হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, ট্যাক্স কমানো হলো ঠিকই, কিন্তু ভারতের বাজার থেকে প্রায় ৩০-৪০ ডলার বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। সুতরাং আমদানি করা চালেও বাজারে খুব একটা পড়তা পড়ছে না।
সরকারি পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ অভিযানেও গতি নেই। খাদ্যমন্ত্রীও বলেছেন, ‘আমরা যে ক্রয়মূল্য দিয়েছিলাম, বাজারের মূল্যের সঙ্গে তার ফারাক ছিল। ফলে আমরা চাল সংগ্রহ করতে পারিনি। ’
খাদ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, গত এপ্রিলে সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা। অথচ তখনই বাজারে দর ছিল ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা করে। সেই সময় মাঠপর্যায় থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ৩৬ বা ৩৭ টাকা দামে চাল সংগ্রহের সুপারিশ করা হলেও সরকার তা না করে অযৌক্তিকভাবে বাজারের মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি দুই টাকা কমে দাম নির্ধারণ করে। তাই এ দামে মিল মালিকরা সাড়া দিচ্ছেন না।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২ মে থেকে চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়। কিন্তু মে থেকে জুলাই—এ তিন মাসে সরকারের অভিযানে তেমন সাড়া দেননি মিল মালিকরা। এ অবস্থায় সরকার ১৬ হাজার মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সরকারের তালিকায় কালো তালিকাভুক্ত করা হলেও এরা ঠিকই বাজারে চাল সরবরাহ করছে।
তবে বাংলাদেশ অটো মেজর, রাইস ও হাসকিং মিলের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে ২৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ধানের ক্ষতি হয়েছে। নর্থ বেঙ্গলে যেখানে সবচেয়ে ভালো ধান হয়েছে সেখানেই প্রতি হেক্টর জমিতে ছয়-আট মণ করে ধান কম হয়েছে। এতে আমরা বড় ঘাটতিতে পড়েছি। আমরা মজুদ করি নাই। বিশ্বাস না করলে আমাদের মিলগুলোতে অভিযান চালাক। এ রকম কাউকে পেলে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনুক। ’
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা গত ফেব্রুয়ারিতে চাল নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছি। এপ্রিলে চিঠি দিয়ে আমদানি শুল্ক কমানোর কথা বলেছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা কার্যকর করে দুই মাস পর, জুনের শেষ দিকে। সরকার যদি এপ্রিলেই শুল্ক কমিয়ে দিত তবে দেশের আমদানিকারকরা গত দুই মাসেই যে চাল আমদানি করতে পারত তা দিয়ে বাজার সহনীয় রাখা যেত। এবার মনে হচ্ছে, ১২ থেকে ১৫ লাখ টন চালের ঘাটতি হবে। আমরা অভ্যন্তরীণভাবে আট লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র এক লাখ টন সংগ্রহ করতে পেরেছি। বাকিটা কবে সংগ্রহ হবে তা বলা মুশকিল। ’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি গুদামে সব সময় ৬ থেকে ১০ লাখ টন চাল মজুদ থাকা উচিত। কিন্তু দুই বছর ধরে সরকারি চালের মজুদ ছয় লাখ টনের নিচে ছিল। তিন মাস ধরে তা তিন লাখ টনের নিচে। হাওরে ফসল বিপর্যয় ও বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের কারণে সরকারি হিসাবে ১২ লাখ টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ লাখ টন। বাজারে চালের ঘাটতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেই সরকারের বসে থাকার সুযোগ নেই। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
তবে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আসছে। ভিয়েতনাম থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টনের চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। সাড়ে চার লাখ টন চাল পাইপলাইনে আছে। এর বেশির ভাগ এ মাসের মধ্যে পেয়ে যাব। আগস্টের মধ্যে সাড়ে চার লাখ টন চাল আমাদের ঘরে চলে আসবে। ’ ‘জিটুজি’ পদ্ধতিতে চাল আমদানির জন্য কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চালের শুল্ক তুলে দেওয়ার পর বেসরকারিভাবে ভারত থেকে ৮৪ হাজার টন আমদানি করা হয়েছে। ’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি অনুকূল হওয়াতে অনেকে (মিল মালিক) চুক্তি রিপিটেশন করছে। ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের মাধ্যমে বোরোতে এক লাখ টন চাল আমাদের ঘরে চলে এসেছে। আগস্টের মধ্যে আমরা আট থেকে ১০ লাখ টনের একটি হ্যান্ডসাম মজুদ করতে পারব। তা সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ১২ লাখ টন করতে চাচ্ছি। ’ চুক্তি করেও যারা সরকারি গুদামে চাল দেয়নি তাদের মধ্যে ১৬ হাজার মিলকে কালো তালিক্তাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
খাদ্য অধিদপ্তরে সংগ্রহ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় যেসব মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা বলেছেন, আসলে তেমনটা নয়। প্রকৃত বিষয় হলো যেসব মিল আমাদের সংগ্রহ কাজে চাল দিতে চুক্তি করেনি এমনসব মিলের কাছ থেকে আগামী দিনে চাল কেনা হবে না। এ বিষয়ে আমরা গত ২৬ এপ্রিল একটি চিঠিও দিয়েছি। ২০ হাজারের বেশি চালকল রয়েছে সারা দেশে। এর মধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে মাত্র ছয় হাজারের মতো।
কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর, রাইস ও হাসকিং মিলের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ‘সব কিছুর একটা নিয়ম আছে। আমাদের তো ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চাল দেওয়ার সময় রয়েছে। এর আগে সরকার এ রকম করতে পারে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাল দেওয়ার। আমরা এখনই কিছু বলব না, চাল নিয়ে সরকারি গুদামে দিতে গেলে যদি সরকার না নেয়, তখন আমরা কথা বলব। ’
চালের দাম সর্বকালের বেশি : চালের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এক-এগারোর সময় ২০০৭ সালে চালের দাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছিল। সে সময় মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকায় উঠেছিল। সরু চালের কেজি বেড়ে হয়েছিল ৫৬ টাকা। কিন্তু এখন সেই মোটা চালের দামই উঠেছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দেশে চালের উৎপাদনের ৬০ শতাংশই হয় উত্তরাঞ্চলে। সেখানে গতকালের পাইকারি বাজারে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৮-৩৯ টাকায়। খুচরা বাজারে ছিল ৪২-৪৫ টাকা কেজি।
এখন খুচরা বাজারে ৪৬ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। একটু ভালো সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। সরকারি হিসাব অনুযায়ীই গত এক মাসে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। আর এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বাজারে সরু চালের কেজি ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। এ সপ্তাহে তা দুই টাকা বেড়ে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম ৪৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি। সব ধরনের চালের দাম গত এক মাসে ৪ থেকে ৮ শতাংশ এবং এক বছরে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বিক্রেতারা মোটা পাইজাম চাল বিক্রি করছে ৪১-৪২ টাকা কেজি দরে। খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা দামে। স্বর্ণা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে, খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়; যা আগে ছিল ৪৮ টাকা। এ দুই ধরনের চালই ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান ট্রেডিংয়ের বিক্রেতা মাসুম ও মৌলভীবাজারের চাল বিক্রেতা সুমন জানান, চালের দাম বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি কমবে না। কারণ ইন্ডিয়ান চালের দামও বেশি। দেশের চালের দাম তো আগে থেকেই বাড়তি।
সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, শুক্রাবাদ, শাহজাদপুর, মহাখালীসহ কয়েকটি বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রতি কেজি চাল কেনা দামের চেয়ে চার-পাঁচ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে। বিশেষ করে পাইজাম ও স্বর্ণা। অনেক বিক্রেতার দোকানে এখনো ঈদের আগের কেনা চালই রয়ে গেছে। তারা নতুন চাল এখনো তোলেনি।
চট্টগ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বেসরকারিভাবে বিপুল পরিমাণ চাল আসছে মিয়ানমার থেকে। চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অনেকেই মিয়ানমার থেকে সড়কপথে এবং সরাসরি জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এ চাল আমদানি করছেন। ইতিমধ্যে ৩০ হাজার টন চাল চট্টগ্রামে এসেছে। যে পরিমাণ চাল আসছে তাতে চলতি জুলাই মাসে আমদানি চালের পরিমাণ দাঁড়াবে কমপক্ষে ৭০ হাজার টন।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই এখন মিয়ানমারের চালে সয়লাব। ভারতের চালের চেয়ে এ চালই বেশি বিক্রি হচ্ছে। ফলে পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। যদিও খুচরা বাজারে এখনো তার প্রভাব পড়েনি।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের পাইকারি বাজারে এখন মিয়ানমারের চালের প্রাধান্য। চট্টগ্রামের শীর্ষ অনেক ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে চাল আনার বুকিং দিয়েছেন। চলতি মাসের মধ্যে সব চাল বাজারে ঢুকবে।
আইন আছে প্রয়োগ নেই : ২০১১ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল ফুড কমোডিটি অ্যাক্ট সংশোধন ও হালনাগাদ করে। ওই আইন অনুযায়ী খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে দেশের সব চাল, গম, ভোজ্য তেল ও ডালের মজুদের হিসাব পাক্ষিকভাবে দিতে হবে। ওই আইন প্রণয়নের প্রথম দুই বছর খাদ্য মজুদের হিসাব রাখা হয়। কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে মজুদ রাখার ওই নিয়ম অনিয়মিত হয়ে যায়। তবে সরকারি গুদামগুলোতে চালের মজুদের হিসাব খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে। এই মজুদ প্রতি সপ্তাহে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টন করে কমছে। বর্তমানে সরকারি গুদামে চালের মজুদ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার টন, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মে মাস থেকে মজুদ কমতে থাকায় খাদ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি খাতের মজুদের হিসাব নেওয়ার কাজ শুরু করে। গত সপ্তাহে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে বেসরকারি খাতে মজুদের হালনাগাদ তথ্যের হিসাব দিতে ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মিলছে না।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/07/14/519003