২২ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১২:১৯

বিএসএফের হত্যা-অপহরণ চলছেই ৩ দিনে সাপাহার সীমান্তে অপহৃত ৫

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্পর্ক থাকার পরও সীমান্তে বাংলাদেশীরা সব সময় উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় থাকছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের নিরীহ বেসামরিক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা ও অপহরণের ঘটনা চলছেই। গত তিনদিনে শুধু সাপাহার সীমান্তেই ৫ জন বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। অথচ এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ নেই। 

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজশাহীর নওগাঁর সাপাহার উপজেলার হাপানিয়া সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী (বিএসএফ)-এর হাতে আটক হয়েছেন এক গরু ব্যবসায়ী। আটক শহীদুল ইসলামকে ফেরত পাঠাতে চিঠি দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ বিষয়ে বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবদুর রাজ্জাক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শহীদুল ইসলাম সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে গরু আনতে যায়। গরু নিয়ে ফেরার পথে বিএসএফের টহল দল তাকে আটক করে নিয়ে যায়। শহীদুলকে ফেরত পাঠাতে বিএসএফকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, এই সীমান্তে গত তিন দিনে পাঁচজনকে আটক করে নিয়ে যায় বিএসএফ। এখনো আটকৃতদের ফেরত দেয়নি তারা।
এর আগে গত বুধবার ভোরে সাপাহার উপজেলার কলমুডাঙ্গা সীমান্তে দু’জন ব্যবসায়ীকে আটক করে বিএসএফ। আটকরা হলেন- উপজেলার কাড়িয়াপাড়া গ্রামের মৃত জিল্লুর রহমানের পুত্র মোজাম (৪০) ও কলমুডাঙ্গা গ্রামের শফিকের পুত্র মাহাবুব আলম (২৮)। কলমুডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার সানোয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবারও এ উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে আরো ২ জন বাংলাদেশীকে অপহরণের ঘটনা ঘটে।
গত ২২ এপ্রিল লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী এক গরু পারাপারকারীকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ধরে নিয়ে যায়। সীমান্ত ও বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ওই দিন ভোরে সীমান্তের ৮৪২ নম্বর মেইন পিলারের ৫ নম্বর সাব পিলারের নিকট দিয়ে ভারতীয় গরু পারাপারকারীদের সহায়তায় গরু নিয়ে আসার সময় ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা বিএসএফের টহল দলের সদস্যরা ধাওয়া করে। এসময় বিসিএফ উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের কামারহাট এলাকার আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুর রহিম(২৮) কে ভারতের অভ্যন্তরে ধরে নিয়ে যায়। বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম মোর্শেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
গত ২০ জুন সকালে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোশালপুর সীমান্তে বিএসএফ গুলী করে স্কুল ছাত্রসহ দুই বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। নিহতরা হচ্ছে- সোহেল রানা (১৭) ও হারুন- অর- রশিদ (২০)। মহেশপুরের বাকশপোতা স্কুলের নবম শেণির ছাত্র সোহেল রানা খোসালপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। অন্যদিকে নিহত হারুন মহেশপুরের শ্যামকুড় গ্রামের মসজিদ পাড়ার কাউসার আলীর ছেলে। জবির খোসালপুর ক্যাম্প কমান্ডার আবু তাহের জানান, সিভিল সোর্স মারফত জানতে পেরেছি, ওইদিন বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাংলাদেশের বিপরীতে ভারতের কুমারীপাড়া এলাকার কলা বাগানে দুই বাংলাদেশীকে বিএসএফ গুলী করে হত্যা করেছে।
এছাড়া জলাশয়ে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতীয় নাগরিকদের বিরোধের জের ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার জমিনপুর সীমান্তে গত ২৫ মার্চ দুপুরে তান্ডব চালায় বিএসএফ। বাংলাদেশ ভূখন্ডের প্রায় একশ’ গজ ভেতরে ঢুকে বিএসএফের চালানো সাউন্ড গ্রেনেড হামলায় নারী ও শিশুসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তখন সীমান্তে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
পর্যবেক্ষকমহল বলছেন, বর্তমান সরকারের সময় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় পৌঁছার দাবি করা হলেও সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতন থেমে নেই। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চলমান নৃশংসতা একটুও কমছে না। পৃথিবীর নানান জায়গায় প্রতিবেশী দেশে দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে, ভারতের সাথেই বৈরি দেশ পাকিস্তান, চীন, নেপাল ও ভুটানের সীমানা রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী মানুষ হত্যা করা হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেই!
বিএসএফের অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাচ্ছে না বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরী বাহিনী প্রধানও বিএসএফ’র পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন যেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা সীমান্ত পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এনডিসি-পিএসসি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ নিজেদের আত্মরক্ষার্থেই সীমান্তে গুলী চালায়। সীমান্তে চোরাচালানকারীরা খুব দুর্ধর্ষ মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সীমান্ত হত্যা এখন অনেক কম। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনতে বিজিবি-বিএসএফ যৌথভাবে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুসারে কোনো দেশ অন্য দেশের নাগরিককে হত্যা করতে পারে না। কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে তাকে গ্রেফতার করে সে দেশের আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এসবের কোনোটিই বিএসএফ মানছে না। তাদের গুলীতে যত মানুষ মারা গেছে তার প্রায় সবই বাংলাদেশী। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উল্লেখ থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। সীমানায় স্থাপনা নির্মাণের আইনও মানছে না ভারত। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু ভারতের চাপের মুখে ৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেডা নির্মাণের অনুমতি দিতে হচ্ছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/292711-