অল্প বৃষ্টিতেই খুলনা মহানগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে -সংগ্রাম
২২ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১২:১৯

খুলনায় অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ময়লা আবর্জনায় খাল ভরাট

অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লা-আবর্জনা, বড় বড় খাল ভরাট, অবৈধভাবে দখল ও বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীদের মৎস্য চাষসহ নানা কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নগরীর নিম্নাঞ্চলের আবাসিক এলাকাগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে জনগণের সম্পদ। ভোগান্তিতে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা।
জানা গেছে, অল্প বৃষ্টিতেই খুলনা নগরীর নর্থ খাল ব্যাংক রোড, পিটিআই মোড়, রয়্যাল মোড়, শান্তিধাম মোড়, টুটপাড়া, আহসান আহমেদ রোড, নতুন বাজার, স্যার ইকবাল রোড, কেডিএ এভিনিউ রোড, জোড়াগেট, খালিশপুর বাস্তহারা, বয়রা এলাকা, মুজগুন্নী, নেভি স্কুলের সামনে, হাউজিং বাজার, নতুন কলোনী, দৌলতপুর, খালিশপুর, বাইতিপাড়া, তালতলা, মডার্ণ ফার্ণিচার মোড়, পিকচার প্যালেসের মোড়, শামসুর রহমান রোড, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লাপোতা, শিববাড়ি মোড়, বড় বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, পশ্চিম রূপসা, রূপসা স্ট্রান্ড রোড, বাবুখান রোড, লবণচরা বান্দা বাজার, আড়ংঘাটা এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বড় বাজারসহ অভিজাত অনেক বিপণীবিতান। নগরীর বাসিন্দারা কার্যত গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। অধিকাংশ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা, মাহেন্দ্র ও ইজিবাইক চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে এমনও অভিযোগ পাওয়া যায়।
নগরীর কয়েকজন চা বিক্রেতা বলেন, সকালে দোকান খুলেই তারা দেখেন দোকানের মধ্যে প্রায় হাঁটুপানি জমে। উপায় না দেখে পানির ওপর দাঁড়িয়েই কেনাবেচা করেন তারা।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ভৈরব নদীতে ভাটা আসলেই পানি নেমে যাবে। তিনি জানান, পানি নেমে যাবার স্লুইচ গেটগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীরা তদারকি করেন।
মুজগুন্নী এলাকার বাস্তহারা কলোনির বাসিন্দা ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকরা জানান, একটু বৃষ্টি হলেই কলোনির সব সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। আর ওই পানি নামতে দেরি হওয়ায় বর্ষাকালে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত. অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লা-আবর্জনা, বড় বড় খাল ভরাট, অবৈধভাবে দখল ও বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীদের মৎস্য চাষসহ নানা কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। গল্লামারী নর্থ খালের মুখ, কারিগরপাড়া, বাস্তহারা নবী নগর খাল, নিরালা, হরিণটানা নারকেল বাড়িয়া, ছড়িছড়া, মতিয়াখালি, ক্ষেত্রখালী, রূপসা সাহেদ আলী, ১, ২, ৩নং কাস্টমস ঘাট খাল অর্থাৎ পানি নিষ্কাশনের পয়েন্ট গুলো দীর্ঘদিন খনন করা হয় না। অনেক দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে সং্্শ্িলষ্টদের কোন মাথা ব্যথা নেই। যতসব ভোগান্তির পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
কুয়েটসহ পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ, চরম ভোাগান্তি যোগিপোল ইউনিয়নের কুয়েট এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এ সব প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আর ভারী বর্ষায় কুয়েট এবং পার্শ্ববর্তী শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, এইচএসটিটি আর, গভ. ল্যাবরেটরী হাই স্কুল, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। বৃষ্টি হলেই ফুলবাড়িগেট, যোগীপোল, যাব্দিপুর, খানাবাড়ি এলাকার পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় এ সকল এলাকার পানি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, এইচএসটিটি আর, গভ. ল্যাবরেটরী হাই স্কুল, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ক্যাম্পাসের রাস্তাঘাট এবং অধিকাংশ ভবনের সামনে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় কুয়েট। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের নিচতলায় পানি উঠে যায়। ফুলবাড়িগেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরস্থ সড়কসমূহ, বিভিন্ন বিভাগের সামনের সড়ক, আবাসিক এলাকার সড়ক সবই নিমজ্জিত হয় পানিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মামুনুর রশীদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য পানি বেরিয়ে কোন নদী-নালায় পড়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু বাইরে পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকা, থাকলেও ভরাট ও দখল হওয়া এবং জমিতে ঘের কেটে উঁচু করার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে পানি বাইরে বেরোতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, পানি নিষ্কাশন তথা জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সাধারণ মানুষদের সমন্বিত প্রয়াস এবং কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করলে কুয়েট এবং এ অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। কুয়েটসহ এ এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও খালগুলো অবৈধ দখল হয়ে পড়ায় মূলত. জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে জনগণ ও কর্পোরেশনকে দায়িত্ববান এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কঞ্জারভেন্সি অফিসার মো. আনিসুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার অতি বেশি মাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়। যার ফলে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্পোরেশনের জনবল কাজ করেছে। এছাড়া খাল ও স্কেভেটর দিয়ে ড্রেনের মাটি খনন করা হয়েছে। ড্রেনে আটকে থাকা ময়লা-আবর্জনা সনাক্ত করে পরিষ্কার করা হবে।

 

http://www.dailysangram.com/post/292726-