২২ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১২:১০

হাসপাতালে তিন রোগে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে

চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে বেশি আসছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এসব রোগীকে তারা অতিরিক্ত চাপ হিসেবে দেখছেন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এপর্যন্ত দু’জন মারা গেছেন। এর মধ্যে এ মাসে মিটফোর্ড হাসপাতালে মারা যান একজন। ডেঙ্গু জ্বরে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৭৩৫ জন। এ বছরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দু’লাখ মানুষ। মারা গেছেন ছয়জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকুনগুনিয়া হেলপ ডেস্ক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন ১০০ জন করে রোগী বহির্বিভাগ দিয়ে সেবা নিচ্ছেন। ভর্তি হচ্ছেন ২ থেকে ৩ জন। গত এক সপ্তাহে ৮০০ থেকে ৯০০ চিকুনগুনিয়া রোগী সেবা নিয়েছেন বলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. শায়েখ আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন। এমনিতে ঢাকায় ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়ার রোগী। তার উপরে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সঙ্গে ডায়রিয়াও ছড়িয়ে পড়েছে। এবছর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয় মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ চিকুনগুনিয়া জ্বর। একপর্যায়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আবার বর্ষায় ডায়রিয়ার প্রকোপ একটি নিয়মিত ঘটনা। ডায়রিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি মাস থেকে শুরু করে টানা তিন মাস এই তিন রোগের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। ওই ঝুঁকি মোকাবিলায় তৎপরতাও শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, আগামী তিন মাস পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু আর ডায়রিয়ার বিস্তার থাকতে পারে। তাই আমরা এই তিন রোগের ব্যাপারে সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি চিকিৎসার ক্ষেত্রেও প্রস্তুতি রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে যতই এডিস মশা এবং অনিরাপদ পানির ব্যাপারে সচেতনতা বাড়বে, এই তিন রোগের ঝুঁকি ততই কমবে। ডায়রিয়ার ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে বন্যাপ্রবণ এলাকায় মেডিকেল টিম কাজে নামিয়েছি; পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করেছি।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন হাজার ৯৮২ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ২৪২ জন। এ বছর ১লা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯৮ হাজার ৫৫ জন। এর মধ্যে রাজধানীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ৮৯ হাজার ৯১৯ জন। দেশে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ছয়জন। এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে দুইজন, ঠাকুরগাঁয়ে দুই জন, মাগুরা ও সিলেটে একজন করে মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭৩৫ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুনেই ভর্তি হয়েছেন ২০৭ জন। জুলাই মাসে ১৫৩ জন। জুলাই মাসে ও মে মাসে একজন করে ডেঙ্গু রোগী মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চার জন। ৭১৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন- ঢামেকে একজন, হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে তিনজন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দু’জন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, স্কয়ার হাসপাতালে দু’জন, তিনজন সেন্ট্রাল হাসপাতালে, একজন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও একজন সালাউদ্দিন হাসপাতালে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সূত্র মতে, ২০শে জুলাই পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত মোট সম্ভাব্য রোগীর সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। এর মধ্যে নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে ৭৭৫ জনের। ঢাকার বাইর থেকেও চিকুনগুনিয়া রোগী আসছে। ঢাকার বাইরে ৯৫ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ২৬ জনের চিকুনগুনিয়া নিশ্চিত হয়েছে আইইডিসিআর। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা লাখের ওপরে হতে পারে। আবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে যাওয়া কেউ কেউ একাধারে চিকুনগুনিয়ায়ও আক্রান্ত বলে ওই সব হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, চিকুনগুনিয়ার রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীও আসছে তার কাছে। এবার বর্ষা মৌসুমে একাধারে চিকুনগুনিয়া আর ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি। বরাবরই বর্ষার সময় দেশে ডায়রিয়া লেগে থাকে। তবে এবার ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়ার পরিস্থিতি শেষ হতে আগামী শীত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই এবার মানুষকে অবশ্যই অনেক বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।
ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্বন্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও হতে পারে। বেশি দুর্বল বা শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, নাক ও দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে হাসপাতালে নেয়াই ভালো। ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু দুর্বলতা আরো কিছু দিন থেকে যেতে পারে।


 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=75162&cat=3/