২২ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১২:০৯

বিমানবন্দর রেলস্টেশন যেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য!

টিকিট কালোবাজারি মাদক ব্যবসায়ী ও হকারদের দৌরাত্ম্য

ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন যেন অপরাধী চক্রের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। স্টেশনের আশকোনা লেভেল ক্রসিং থেকে শুরু করে পুরো স্টেশন এলাকাজুড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, হকার, মাদক ব্যবসায়ী ও টিকিট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য। প্রকাশ্যে এই ভিআইপি রেলস্টেশন এলাকায় তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রের কাছ থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের সাপ্তাহিক ও মাসোয়ারায় পকেট ভারী করছেন স্টেশনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে টিকিট কালোবাজারি। স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েও অনেক সময় মেলে না টিকিট। তবে মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ টাকা দিলেই এসব টিকিট মেলে কালোবাজারে। যে কয়টি টিকিট প্রয়োজন, সব পাওয়া যায় এখানে। কালোবাজারি এই চক্রটি প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টিকিট বাইরে বিক্রি করে। কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে বাধ্য হয়েই কালোবাজারিদের কাছে ধরনা দেন যাত্রীরা। এতে তাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সূত্র আরও জানায়, স্টেশন মাস্টারের ছত্রছায়ায় একশ্রেণির কর্মী বা ওয়েটিংরুম বেয়ারা দীর্ঘদিন ধরে টিকিট কালোবাজারিতে যুক্ত। স্টেশন মাস্টার অফিসের কর্মচারী লিটনের নেতৃত্বে চলে এই টিকিট কালোবাজারি। এ কাজ করে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কামিয়ে নেয় চক্রটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মরণ চন্দ্র দাস সমকালকে বলেন, কর্মচারী লিটন হচ্ছে আমার অফিসের পিয়ন। সার্বক্ষণিক অফিসের কাজে ব্যস্ত সে। লিটনের মাধ্যমে স্টেশনে কালোবাজারি টিকিট বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই।

হাবিবুর রহমান নামে রাজশাহীগামী এক যাত্রী বলেন, কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে বাইরে এক ব্যক্তির কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কেনেছি।

রেলস্টেশন সূত্র আরও জানায়, শুধু কালোবাজারি নয়, স্টেশনের আশকোনা লেভেল ক্রসিং থেকে শুরু করে পুরো স্টেশনজুড়ে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও প্রকাশ্যে। মনির হোসেন নামের এক হকার জানান, স্টেশন মাস্টার ও জিআরপি কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ

করে ব্যবসা করতে হয় তাদের। মাঝে মাঝে রেলের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা পরিদর্শনে এলে সাময়িকভাবে এসব দোকান বন্ধ রাখা হয়। হকাররা জানান, একদিন টাকা দিতে গড়মিল হলেই বুলড্রোজার চালায় কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে সংশ্লিষ্ট রেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, স্টেশনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারাই স্টেশনকে একটা অপরাধী চক্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

বিভিন্ন গন্তব্যে থেকে বুকিং ছাড়াই অবৈধভাবে বহন করা বিভিন্ন কাঁচামালের চালান নামানো হয় বিমানবন্দর স্টেশনে। এসব কাঁচামাল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কুলি ভাড়া বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় বিমানবন্দরের কুলিরা।

এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে মরণ চন্দ্র দাস বলেন, বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন থেকে অবৈধ কাঁচামাল নামানোর টাকা কুলিরা ভাগ-বণ্টন করে নেয়। জানা গেছে, সরদার আমানের নেতৃত্বে বিমানবন্দর স্টেশনে ৫৫ কুলি কাজ করে। এর মধ্যে কিছু অবৈধ বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

 

 

http://bangla.samakal.net/2017/07/22/310104