২২ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১২:০৬

প্রসঙ্গ টাকা এবং ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’

আশিকুল হামিদ

পাঠকরা অবাক হতে পারেন কিন্তু শিরোনামে প্রবাদ বাক্য উল্লেখের বিশেষ কারণ রয়েছে। আজকাল যে কোনো ব্যাংকে পাঁচ হাজার টাকার বেশি জমা দিতে বা ওঠাতে গেলেই জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি কার্ড) দেখাতে হয়। তার ফটোকপি জমা দিতে হয়। সে অ্যাকাউন্ট কারো স্ত্রীর হলেও তার স্বামীকে এই নিয়ম মানতে হবে। কারণ, সরকার তেমন আদেশই দিয়ে রেখেছে। অথচ ব্যাংকের কাগজপত্রে কিন্তু স্বামীর ছবি ও আইডি নম্বরসহ সব তথ্যই দেয়া রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কম্পিউটার খুলে সেটুকু দেখার কষ্ট করতেও রাজি নন। আইডি কার্ড দেখতে চাওয়ার উদ্দেশ্য নাকি জঙ্গিদের অর্থায়ন প্রতিরোধ করা! কোনো স্বামী তার স্ত্রীর সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টে জঙ্গিদের জন্য টাকা জমা দিতে পারেন কিনা- সরকারের ভয়ে এটুকুও বুঝতে রাজি নয় ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে সরকারের এ ধরনের নীতি-কৌশল ও নির্দেশ এবং ব্যাংকগুলোর বাড়াবাড়ির কারণে ব্যাংকিং খাতই শুধু বিপন্ন হয়ে পড়ছে না, দেশের অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অবস্থা সম্পর্কে উদাহরণ দেয়ার জন্য রেমিট্যান্সের কথা উল্লেখ করা যায়। সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেয়ার সুখবর শোনানো হলেও বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের দ্বিতীয় প্রধান এ খাতটিতে আশংকাজনক পতন ঘটেছে। এ বিষয়ে সর্বশেষ কিছু তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সম্প্রতি ব্যবসায়ী নেতাদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের তথা রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে গেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের রিপোর্টেও একই তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে যেখানে এক হাজার ৫৩২ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল সেখানে ২০১৬ সালে এসেছে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। এর সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের পরিসংখ্যান যোগ করে দৈনিকটি জানিয়েছে, এই সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ শতাংশ। এখানে লক্ষণীয় হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং দৈনিকটির হিসাবে পার্থক্য নেই। রেমিট্যান্স আসলেও কমেছে এবং এখনো কেবল কমছেই।
মাত্র এক অর্থবছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রায় ১৭ শতাংশ কমে যাওয়ার তথ্য নিঃসন্দেহে আশংকাজনক। উদ্বেগের আসল কারণ হলো, রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে। যেমন মাসওয়ারি হিসাবে শুধু ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমেছিল ২৩ শতাংশ। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে সেই যে পতন ঘটতে শুরু করেছিল তারই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার হিসেবে চিহ্নিত সৌদি আরবের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। একই ধারার পতন দেখা গেছে আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সে সময় মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং তেলের দাম ও টাকার বিপরীতে বিদেশী বিভিন্ন মুদ্রার মান কমে যাওয়ার মতো কিছু কারণের উল্লেখ করা হয়েছিল। অন্যদিকে দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারের একদেশকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে ইসলামী ও দেশপ্রেমিক দলগুলোর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের কারণে বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। সে কারণে ওই দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হয় বন্ধ করেছে নয়তো অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
‘ডিজিটাল হুন্ডি’র কথাও এসেছে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার একটি বিশেষ কারণ হিসেবে। দেশের ভেতরে ব্যাংকগুলোর কড়াকড়ি ও জটিলতার পাশাপাশি স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে বহুদিন ধরেই প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেন। এতে সুবিধা হলো, বিদেশে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেশে অবস্থানরত স্বজনরা টাকা পেয়ে যাচ্ছে। সবই হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এজন্যই পন্থাটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ডিজিটাল হুন্ডি’। এভাবে প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে পারলেও এবং সে টাকা স্বজনদের হাতে পৌঁছে গেলেও লাফিয়ে কমে যাচ্ছে আইনসম্মত পথে দেশের আয়। রেমিট্যান্সের হিসাবও এভাবেই করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ‘ডিজিটাল হুন্ডি’ বন্ধ করার জন্য সরকারি অর্থে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ পর্যন্ত এসে পাঠকরা সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন, শিরোনামে কেন ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’ প্রবাদের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা যায়, কথিত জঙ্গিদের অর্থায়ন বন্ধ করার নামে বেশি কড়াকড়ি করতে গিয়ে সরকারই আসলে রেমিট্যান্সের প্রবাহে পতন ঘটিয়েছে। এই পতন অত্যন্ত ভীতিকর। কারণ, রফতানি আয়ের প্রধান খাত গার্মেন্ট কয়েক বছর ধরেই সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এমন অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় প্রধান খাত রেমিট্যান্সেও যখন ধস নামার খবর শুনতে হয় তখন উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। কারণ, বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অর্থের যোগান আসে রফতানি আয় থেকে, এতদিন পর্যন্ত যার দ্বিতীয় প্রধান খাত ছিল রেমিট্যান্স। সে রেমিট্যান্সে পতন শুরু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, দেশের অর্থনীতি আসলেও বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গেই সর্বশেষ প্রাধান্যে এসেছে টাকা পাচারের বিষয়টি। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রথমে চমকের সৃষ্টি করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। প্রতিষ্ঠানটি গত মে মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ছয় লক্ষ ছয় হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ২০১৪ সালেই পাচারের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। আলোচ্য ১০ বছরে পাচার করা অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের দুটি অর্থবছরের বাজেট তৈরি করা সম্ভব হতো বলেও জানানো হয়েছিল।
অর্থ পাচারের খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে দোষারোপের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে প্রতিযোগিতা জমে ওঠার আগেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল আরো একটি চাঞ্চল্যকর খবর। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএনবি’র বার্ষিক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত এই খবরে জানা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকগুলোতে ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বা ৬৬ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ জমা পড়েছে। খবরে আরো বলা হয়েছিল, এত বিপুল পরিমাণ অর্থ নাকি বৈধভাবে জমা পড়েনি। কারা এইসব অ্যাকাউন্টের মালিক সে সম্পর্কেও জানা সম্ভব হয়নি। কারণ, দেশের সংবিধানে এবং ব্যাংকিং আইনে নিষেধ থাকায় সুইজারল্যান্ডের কোনো ব্যাংকই গ্রাহকদের সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করে না বরং গোপন রাখে। আর সে কারণেই বিশ্বের চোরাচালানী ও সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা পর্যন্ত সকলে তাদের অবৈধ অর্থ বিভিন্ন সুইস ব্যাংকে জমিয়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। খবরটি ফাঁস হওয়ার পরপর আবারও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে পরস্পরকে আক্রমণের পালা শুরু হয়েছিল। বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী দল বলেছে, আওয়ামী লীগের নেতারাই গোপনে টাকা জমা করেছেন, যাতে ক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটলে তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে এবং ওই টাকা দিয়ে আয়েশে জীবন কাটাতে পারেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা বলেছেন, টাকা পাচারের রেকর্ড নাকি একমাত্র বিএনপির রয়েছে! অর্থাৎ বিএনপির নেতারাই টাকা জমিয়েছেন সুইস ব্যাংকে! কথাটা অবশ্য সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করানো যায়নি।
ঘটনাপ্রবাহে বরং পরিষ্কার হয়েছিল, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের ভেতরে যেমন কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে তেমনি কোটিপতিরা ছড়িয়ে পড়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। শুধু সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকেই নয় তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা ও জার্মানিসহ আরো কিছু দেশেও বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করেছেন! এই অর্থের বেশিরভাগই যে অবৈধভাবে পাচার করা হয়েছে সে কথাটাও বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এমন এক অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সকলের নজর পড়েছিল সরকারের দিকে। সরকার পাচারকারীদের চিহ্নিত করে কি না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না তা দেখার জন্য সাধারণ মানুষও উন্মুখ হয়ে পড়েছিল। অর্থমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সিলেটের এক অনুষ্ঠানে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, টাকা পাচারের সঙ্গে ‘আমরাও’ অর্থাৎ ক্ষমতাসীনরাও জড়িত!
অর্থমন্ত্রী অবশ্য তার স্বীকারেক্তিমূলক বক্তব্য থেকে সরে যেতে এবং সম্পূর্ণ ইউ-টার্ন নিতে সময় নষ্ট করেননি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই জাতীয় সংসদে দেয়া এক বিবৃতিতে কথিত ‘অতিশয়োক্তির’ অভিযোগে গণমাধ্যমের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, সাংবাদিকরা যাকে অর্থ পাচার হিসেবে প্রচার করেছেন সেটা নাকি মোটেও পাচার নয়। আসলে বাংলাদেশ এবং সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকের মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একে কোনোভাবেই ‘পাচার’ বলা যায় না। অর্থমন্ত্রী অবশ্য ‘তবে’ যুক্ত করে স্বীকার করেছিলেন, অর্থ যে একেবারে পাচার হয়নি বা হয় না- তা নয়। তবে এই পাচারের পরিমাণ ‘অতি যৎসামান্য’। অন্যদিকে সেটাকেই সাংবাদিকরা ‘অত্যন্ত অন্যায়ভাবে’ বাড়িয়ে বলেছেন!
লক্ষ্যণীয় যে, ঘটনাপ্রবাহে একাধিকবার চমক সৃষ্টির পাশাপাশি সংশয় ও জিজ্ঞাসারও কারণ সৃষ্টির করেছেন অর্থমন্ত্রী। সিলেটের এক অনুষ্ঠানে ‘আমরাও’ অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত বলার পর এমন কি ঘটেছিল যার কারণে ‘রাবিশ’ ধরনের বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে ‘বিখ্যাত’ হয়ে ওঠা অর্থমন্ত্রী রাতারাতি তার বক্তব্য পাল্টে ফেলেছেন এবং ‘যৎসামান্য’র সঙ্গে আবার ‘অতি’ যোগ না করে পারেননিÑ তা নিয়ে শুরু হয়েছিল কৌতূহলোদ্দীপক আলোচনা। কারণ, অর্থমন্ত্রী যা বোঝাতে চেয়েছেন তার জন্য ‘যৎসামান্য’ই যথেষ্ট, ‘অতি’র দরকার পড়ে না। কথাটা বরং ব্যাকরণগতভাবে অশুদ্ধ। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের অন্দরমহলে অর্থমন্ত্রীকে সম্ভবত এতটাই নাজেহাল হতে হয়েছিল যে, তিনি অশুদ্ধ বাক্য দিয়েই নিজের সত্য বলার অপরাধ সংশোধন না করে পারেননি! এমন ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠেছিল, অর্থমন্ত্রীর কোন কথাটিকে মানুষ সত্য বলে গ্রহণ করবেÑ সিলেটে যা বলেছিলেন সেটাকে, নাকি জাতীয় সংসদে যা বলেছেন সেটাকে? বলা হচ্ছে, সত্য যেটাই হোক না কেন, মিস্টার মুহিত কিন্তু নিজেই এবার ‘রাবিশ’ শোনার মতো উপলক্ষ সৃষ্টি করেছেন! কারণ তার দুটি কথার মধ্যে একটি সত্য হলে অন্যটিকে কেউ ‘রাবিশ’ বললে তাকে দোষ দেয়া যাবে না!
বিষয়টিকে কিন্তু হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ, বছর খানেক আগে জিএফআই-এরই অন্য এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, টাকা পাচারের ক্ষেত্রে মাত্র এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৮তম অবস্থান থেকে ২৬তম অবস্থানে উঠে এসেছে! বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার হয়ে যাওয়া টাকার পরিমাণ সম্পর্কেও জানিয়েছে জিএফআই। এ ব্যাপারে সরকারের মৌনতাও সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। আমাদের অবশ্য ‘রাবিশ’ ধরনের গালাগাল শোনার ব্যাপারে আগ্রহ নেই। এখানে বরং উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণটি লক্ষ্য করা দরকার। এত বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার ফলে দেশের ভেতরে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে না চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও। এখানে দেশপ্রেমিক অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। তারা বলেছেন, মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও সংঘাতের কারণেই টাকা পাচারের অনুকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছুর পেছনে রয়েছে সরকারের প্রতিহিংসামূলক নীতি ও কর্মকাণ্ড। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো জনপ্রিয় দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকার প্রচণ্ড দমন-পীড়ন চালিয়ে এসেছে বলেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। তেমন সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। একই কারণে ব্যবসা ও বিনিয়োগে আগ্রহীদের মধ্যেও ভীতি-আতংক কেবল বেড়েই চলেছে। তারা তাই দেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার করছে লক্ষ হাজার কোটি টাকা।
পাচারকারীদের দলে যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীনদের অনেকেও। এজন্যই সব মিলিয়ে শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির প্রতিটি খাতে সংকট ক্রমাগত আরো মারাত্মক হয়ে উঠছে। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এবং এটাই সত্য যে, টাকার পাচার বন্ধ করার পাশাপাশি পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হলে সরকারের উচিত অবিলম্বে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও হত্যাকা- বন্ধ করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। একই কথা রেমিট্যান্সের ব্যাপারেও সত্য। বলা বাহুল্য, সরকারের সদিচ্ছাই এজন্য যথেষ্ট।

 

http://www.dailysangram.com/post/292765-