রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ঘরেও বন্যার পানি। তাই তৈরি করা হয়েছে মাচা। তাও পানি ছুঁই ছুঁই । এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে কাটছে বগুড়ার বানভাসি মানুষের জীবন :নয়া দিগন্ত
১৩ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১২:০৩

মানবেতর জীবনযাপন পানিবন্দী মানুষের

প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

দেশের দু-একটি স্থানে নদনদীর পানি কিছুটা কমলেও বেশির ভাগ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, গাইবান্ধা, নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বন্যার পানির তীব্র স্রোতে অনেক স্থানে বেড়েছে নদীভাঙন। কয়েকটি জেলায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত নদীতীরবর্তী এলাকার লোকজন। বন্যাদুর্গত শত শত পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কটে পড়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন পানিবন্দী মানুষ এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে দুর্গতরা অভিযোগ করেছেন।
বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, বগুড়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নতুন করে আরো প্রায় ২০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা। জেলার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বুধবার বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জেলার সারিয়াকান্দির কুতুবপুর, বয়রাকান্দি, চন্দনবাইশা এবং কামালপুর ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ঘরে ঘরে পানি উঠায় বানভাসিরা নিজের জায়গা জমি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া স্থানে গৃহপালিত পশু ও পরিবারের সদস্যরা এক স্থানে দিনাতিপাত করছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণসহযোগিতা দেয়া হলেও বানভাসিরা বলছেন চাহিদা মতো তারা ত্রাণ পাচ্ছেন না। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৫৭টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৪৫১টি বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। তিন হাজার ৭৮০ হেক্টর জমির পাট, শাকসবজি, বীজতলা তলিয়ে গেছে। উপজেলার ৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ৮৭৫টি টিউবওয়েল তলিয়ে গেছে। ৬১টি পুকরের মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিন হাজার ২৭৫টি পরিবার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে এবং ৭৬৫টি পরিবার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতি পরিবারে জি,আর প্রকল্পের চাউল ২০ কেজি করে এবং এক হাজার পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরো নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা।
চিলমারী, উলিপুর, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী, রাজিবপুরসহ জেলার সাত উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের ৪৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৩৭ হাজার পরিবারের প্রায় দুই লাখ মানুষ। অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ১৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
গত ছয় দিন ধরে পানিবন্দী পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও হাতে কাজ না থাকায় পরিবার নিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছে। সরকারিভাবে সামান্য ত্রাণতৎপরতা শুরু হলেও অনেকের ভাগ্যে তা জুটছে না। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, এ পর্যন্ত চার মেট্রিক টন চাল পেয়েছি যা মাত্র ৪০০ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব। অথচ আমার ইউনিয়নে পানিবন্দী প্রায় তিন হাজার মানুষ।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, বন্যার্তদের জন্য ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে তিস্তার পানি। এর ফলে জেলার প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ত্রানের জন্য হাহাকার করতে দেখা গেছে এসব পরিবারকে। তাদের মাঝে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছে পানিবন্দী পরিবারগুলো।
এ দিকে তিস্তার বাম তীরে কুটিরপাড় বালুর বাঁধটির প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার চর বৈরাতি ও হাজিরহাট এলাকার বন্যায় তিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। গোবর্ধন চরের মানিক মিয়া, আনোয়ারুল, আজিজার ও ছকমল হোসেন জানান, তারা গত তিন দিন ধরে পানিবন্দী। খাটের ওপর খাট তুলে কোনোরকম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার সঙ্কটে রয়েছেন বলেও তারা জানান।
তিস্তা ব্যারাজ সেচপ্রকল্প সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ভারত গজলডোবা ব্যারাজের বেশির ভাগ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের বেশির ভাগ গেট খুলে পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তিস্তার পানিতে পাটগ্রাম উপজেলায় বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, দুর্গাপুর, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, কুলাঘাট ও কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ও কাকিনা ইউনিয়নের চর এলাকার প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজ তলাসহ অনেক ফসলী তে ডুবে গেছে। পানির তোড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। স্থানীয়রা বাঁশের পাইলিং ও বালুর বস্তা দিয়ে এসব বাঁধ রার চেষ্টা করছেন।
সিঙ্গিমারী ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, পানিবন্দীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ জানান, ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত দু’দিন ধরে তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ অভ্যন্তরের নি¤œাঞ্চলসহ পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে লাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই জেলার নদী তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। অপর দিকে পানি বৃদ্ধির ফলে চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরের আরকান্দি থেকে শাহজাদপুরের কৈজুরী পর্যন্ত এলাকায় নতুন করে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ডুবে গেছে এ অঞ্চলের শত শত একর ফসলী জমি। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, এখন পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে কোনো ঝুঁকি নেই।
জেলা প্রশাসক কামরুন্নাহার সিদ্দীকা বলেন, জেলায় বন্যা এখনো ভয়াবহ রূপ নেয়নি। বন্যা উপদ্রুত এলাকার সার্বিক খোঁজখবর রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি চৌহালী, বেলকুচি, সদর ও কাজিপুরের বন্যা ও ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ত্রাণ বিতরণও শুরু হয়েছে। সদরের সয়দাবাদ ও কাজীপুরের শুভগাছায় পাঁচ শতাধিক পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল ও ২০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। শাহজাদপুর ভাঙন কবলিত এলাকাতেও ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ আছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বন্যাকবলিত উপজেলাতেও ত্রাণসহায়তা দেয়া হবে। জেলার বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। দিন দিন পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি হিসাবে বানভাসী মানুষের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য, গোখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী না পৌঁছায় দুর্গত মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম এহেসানুল মামুন জানান, বানভাসীদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত আছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেদী হাসান টিটু জানান, ২০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক আহম্মেদ কবীর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নে বানভাসীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরের শতাধিক শিাপ্রতিষ্ঠান এবং ১২টি কমিউনিটি কিনিক বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এ কে এম শহিদুর রহমান জানান, ১৩টি মেডিক্যাল টিম বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে।
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জে বন্যাপরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে। যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বুধবার বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ, চুকাইবাড়ি, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙ্গা, পার রামপুর, চর আমখাওয়া ও ডাংধরা ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার অনেক সরকারি অফিস প্রাঙ্গণে পানি উঠেছে।
গত সোমবার চুকাইবাড়ি ইউনিয়নের গুজীমারিতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো: ইউসুফের উপস্থিতিতে তিন শতাধিক পরিবারের মধ্যে এবং বুধবার চিকাজানী ইউনিয়নে ৩ টন জিআর এর চাল বিতরণ করা হয়েছে।
গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, বৃহত্তর চলনবিলের গুরুদাসপুর-তাড়াশ মৈত্রী সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বুধবার দুুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গুরুদাসপুর-তাড়াশ মৈত্রী সড়কের বিলসা থেকে রুহাই এবং রুহাই থেকে কুন্দইল পর্যন্ত পাকা সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাড়াশের সাথে গুরুদাসপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিতরা নৌকায় যাতায়াত করছেন। অন্যান্য যান্ত্রিক যানবাহনের মাধ্যমে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক দিয়ে তাড়াশ ও চাঁচকৈড় বিলদহর হয়ে সিংড়ার সড়কব্যবস্থা চালু রয়েছে।
অতিবন্যার ফলে গুরুদাসপুর-তাড়াশ মৈত্রী সড়কের ‘মা জননী সেতু’ এখনো বিপদমুক্ত থাকলেও সিংড়ার ডাহিয়া, বেড়াবাড়ি, পাঙ্গাসিয়া, তৃষিখালী, বাড়–হাস ও গুরুদাসপুরের বিলসা, যোগেন্দ্রনগর, জ্ঞানদানগর, দুর্গাপুর, বাবলাতলা, শ্রীপুর, হরদমা, বিলহরিবাড়ি, রুহাই, পিপলা এবং তাড়াশের নাদোসৌদপুর, ধামাইচ, কাটাবাড়ি, চরকুষাবাড়ি, দিঘিসগুনা, কামারসন ও মাকর্সনসহ প্লাবিত বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নৌকা অথবা কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকার চাষিরা পাটকাটা, ধোয়া এবং শুকানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। ঘাট বন্ধ রেখে পন্টুন ওপরে তোলা ও মেরামত কাজ করা হচ্ছে। এতে করে দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে পড়েছে নানা ধরনের ৫ শতাধিক যানবাহন। সংশ্লিষ্টরা জানান, দৌলতদিয়ার চারটি ঘাটের মধ্যে ২ নম্বর ঘাটটি মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রেখে মেরামত করা হচ্ছে। একইভাবে গত রোববার ১৮ ঘণ্টা বন্ধ রেখে ১ নম্বর ফেরিঘাটের কাজ করা হয়। ঘাটগুলোর পন্টুনের র্যাম ভেঙে যাওয়ায় তা সংস্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনটি উঁচু করা জরুরি হয়ে পড়ে। এ কারণে সকাল থেকে এই ঘাটটি বন্ধ রেখে পন্টুনটি ওপরে তোলার কাজ করে কর্তৃপক্ষ। দুপুর নাগাদ ৩ নম্বর ঘাটটি সচল হয়।
সাঘাটা (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, সাঘাটা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২৭ হাজার পরিবার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
উপজেলার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের থৈকড়েরপাড়া, ব্যাঙ্গারপাড়া, পূর্ব আমদিরপাড়া, চান্দপাড়া, কাঠুর, বসন্তেরপাড়া, পূর্ব জুমারবাড়ী, হলদিয়া ইউনিয়নের পাতিলবাড়ী, দিঘলকান্দী, গাড়ামারা, গোবিন্দপুর, নলছিয়া, কুমারপাড়া, কালুরপাড়া, ঘুড়িদহ ইউনিয়নের পূর্ব ঝাড়াবর্ষা, খামার পবনতাইড়, চিনিরপটল, ভরতখালী ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ উল্যার নীলকুঠি, সানকিভাা, চিথুলিয়া, সাঘাটা ইউনিয়নের গোবিন্দী, হাসিলকান্দী, উত্তর ও দক্ষিণ সাথালিয়া, হাটবাড়িসহ ২৪টি মৌজার ৮০ ভাগ ঘরবাড়িতে বন্যার পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট ডুবে উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি ওঠায় ৩২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয় ও মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও গোখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাটক্ষেত, শাকসবজি, বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারিভাবে ২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
এসব এলাকার লোকজন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পানিবন্দীদের দুর্দশা লাঘবে বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে আসবে বলে আশা করছেন বানভাসিরা। গত ২ দিনে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ও ঘুড়িদহ ইউনিয়নে ৫০০ পরিবারের মধ্যে এবং ঘুড়িদহ ইউনিয়নে ১৫০টি পরিবারের মধ্যে জনপ্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। প্যানেল চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন জানান, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় ত্রাণ বিতরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাঘাটা ইউনিয়নে বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয় শুকনো খাবার।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/235243