শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণির বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ট্রাকস্ট্যান্ড। ছবিটি গতকাল বুধবার বিকেলে তোলা l প্রথম আলো
১৩ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৬

সড়ক ট্রাকের দখলে ফুটপাতে দোকান

প্রায় ৫০ ফুট চওড়া সড়কের একাংশে দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান। এতে সড়কটির এক পাশের ফুটপাত পুরোটা ঢাকা পড়েছে। অন্য অংশের ফুটপাতে সারবদ্ধ দোকান, ভাতের হোটেল। আর মাঝে সড়কের মাত্র ১৫ থেকে ২০ ফুট জায়গা অবশিষ্ট আছে চলাচলের জন্য।

এই চিত্র তেজগাঁওয়ের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর সংলগ্ন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণির।
তেজগাঁওয়ের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কার্যালয়-সংলগ্ন এই সড়কটিতে অধিদপ্তর ও বিজি প্রেসের দুটি স্টাফ কোয়ার্টারে দুই শতাধিক পরিবারের বাস। পাশেই কেপিআইভুক্ত সিএসডি গোডাউনের (কেন্দ্রীয় খাদ্য সংরক্ষণাগার) ভেতরে অবস্থিত স্টাফ কোয়ার্টারেও ৪০টি পরিবার বসবাস করে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কোয়ার্টারগুলোতে বসবাসরত ব্যক্তিরা বলছেন, সড়কের ওপরে এভাবে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখার কারণে তাঁদের চলাফেরায় যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি এই জায়গা ঘিরে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁরা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। এ অবস্থায় এ অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সাতরাস্তা থেকে জরিপ অধিদপ্তরে ঢুকতে ডান দিকে মোড়ের ওপরেই অন্তত ৩০টি ট্রাক ও পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা। এর পর থেকে বাঁ দিকে অন্তত আধা কিলোমিটার সড়কের এক পাশের পুরোটা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের দখলে। এর ভেতরে অন্তত তিনটি জায়গায় সড়কের ওপরেই ট্রাক মেরামত ও ধোয়ামোছার কাজ চলছে। তাতে ৫০ ফুট চওড়া সড়কটি কোথাও কোথাও ১৫ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। এতটুকু সড়ক দিয়ে দুটি প্রাইভেট গাড়ি পাশাপাশি চলা সম্ভব না। অন্যদিকে সড়কের বিপরীত পাশে ফুটপাতের ওপরেই গড়ে উঠেছে অনেকগুলো দোকান ও ভাতের হোটেল। এতে পথচারীরা বাধ্য হয়ে ওই সরু সড়ক দিয়েই চলাচল করছেন।
জরিপ অধিদপ্তরের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাসরত একজন কর্মকর্তা বলেন, দিনের বেলায় কোনোভাবে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায়। রাতের বেলায় চলাচলের পরিস্থিতি থাকে না। ট্রাক ঘোরানোর কারণে অনেক সময় ১০ হাত পথ পেরিয়ে গাড়ি নিয়ে কোয়ার্টারে ঢুকতে ১৫-২০ মিনিট লেগে যায়।
কোয়ার্টারের আরেক বাসিন্দা তারিকুল হক বলেন, ‘কোয়ার্টারের ভেতরে আমরা খুব সুন্দর পরিবেশে থাকি। বাইরে বের হলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। এ কোন নরক।’
বিজি প্রেস স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাসরত নাজিম উদ্দিনের উদ্বেগ তাঁরা স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তানকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা এই পথেই স্কুলে যাওয়া-আসা করে। এখানে চুরি-ছিনতাই-মারামারি নিয়মিত ঘটনা। ট্রাকস্ট্যান্ডের কারণে এই এলাকাটা নেশার আখড়ায় পরিণত হয়েছে।’
একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সিএসডি গোডাউনের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, এই সড়ক-সংলগ্ন তিনটি স্টাফ কোয়ার্টারে আড়াই শর বেশি পরিবারের বাস। কিন্তু দিনের পর দিনে এভাবে রাস্তা দখল করে রাখায় এখানে স্বাভাবিক কোনো পরিবেশ নেই। অথচ সিএসডি গোডাউন একটা কেপিআইভুক্ত এলাকা। এর আশপাশে এ ধরনের কোনো কিছু থাকার কথা নয়।
আবদুর রহমান খান বলেন, সড়কে রাখা ট্রাকগুলোর কারণেই তাঁরা বাধ্য হয়েছেন গোডাউনের একটি ফটক বন্ধ করে দিতে। এ সময় তাঁর কক্ষে উপস্থিত সিএসডি গোডাউনের সাবেক একজন কর্মকর্তা বললেন, এটা তো একটা ক্রাইম জোন। ওদের বিরুদ্ধে কে কী বলবে বলেন। ওদের কাছে তো সবাই জিম্মি।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খানের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘জনগণের অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে আমরা তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সড়কটি খালি করে দিয়েছি। এতে করে এই সড়কে চাপটা বেশি পড়েছে। আমাদেরও তো বিকল্প একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। না হলে আমরা কোথায় যাব?’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় আমরা সাতরাস্তা থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়কটি খালি করতে পেরেছি। বিকল্প একটা ব্যবস্থা করে তাজউদ্দীন আহমদ সরণিসহ এখানকার আরও কয়েকটি সড়ক দখলমুক্ত করা হবে। তাতে একটু সময় লাগবে।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1250386/