১৩ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৫০

ভিআইপিদের খুশি করতে লালমাটিয়ার ফ্ল্যাট বাড়িয়েই চলেছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ

‘১৩২ ফ্ল্যাট প্রকল্প’ নামেই রাজধানীর লালমাটিয়ার ফ্ল্যাট প্রকল্পের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের আগেই ২১টি ফ্ল্যাট বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৩২ ফ্ল্যাট প্রকল্পের এখন প্লট সংখ্যা ১৫৩টি। ভিআইপিদের খুশি করতে এভাবে লালমাটিয়ার ফ্ল্যাট বাড়িয়ে চলেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এজন্য কোনো ধরনের নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করছে না প্রতিষ্ঠানটি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন করে বাড়ানো ২১টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি নয়টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয় থেকে নয়টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ না দিয়ে ফাইল ফেরত পাঠিয়ে বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এ ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ দিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের এ চিঠি পাওয়ার পর বিজ্ঞপ্তি জারি করে নয়টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তি জারি ছাড়া তদবিরের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া ১২টি ফ্ল্যাট নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ বিজ্ঞপ্তি ছাড়া গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তার পছন্দমতো ব্যক্তিদের বরাবরে এসব ফ্ল্যাটের বরাদ্দ দিয়েছেন। ফ্ল্যাট বরাদ্দের নীতিমালায় বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিতে চাইলে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। গণবিজ্ঞপ্তি ছাড়া কোন ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া যাবে না। তাই নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এসব ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে এমনটা করছেন তিনি। আগামী ২৬শে আগস্ট তার প্রথম দফা চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এজন্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়মকানুন ছাড়া ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়েছেন। ফ্ল্যাটের মূল্য নিয়েও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একনেক কর্তৃক অনুমোদিত প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের মূল্য ধরা হয় পাঁচ হাজার পাঁচ শ’ টাকা। অথচ ফ্ল্যাট বরাদ্দের প্রসপেক্টাসে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের মূল্য চার হাজার পাঁচ শ’ টাকা ঘোষণা করেন তিনি। ডিপিপিতে অনুমোদিত মূল্যকে পাশ কাটিয়ে মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার প্রকল্পের কারও নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে সংশোধিত ডিপিপিতে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের মূল্য পাঁচ হাজার দুই শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, লালমাটিয়া ফ্ল্যাট প্রকল্পের গ্যারেজ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়। কারণ ভবনের মধ্যে গ্যারেজ রয়েছে ৯৩টি। অন্যদিকে ভবনের বাইরে শেডে গ্যারেজের সংখ্যা ৬০টি। এর মধ্যে ভবনে থাকা প্রতিটি গ্যারেজের মূল্য তিন লাখ এবং শেডের প্রতিটি গ্যারেজের মূল্য সাত লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে নানা কানাঘুষা চলছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে। ফ্ল্যাটের মালিকরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী ভবনের মধ্যে যারা গ্যারেজ বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের বেশি মূল্য দেয়ার কথা। কিন্তু মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ঠিক তার উল্টো। গ্যারেজের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে এ বৈষম্য দূর হওয়া জরুরি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভবনে গ্যারেজ বরাদ্দ পেয়েছে ঊর্ধ্বতন সরকারি আমলারা। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান তাদেরকে খুব বেশি ঘাটাতে চাচ্ছেন না। তাই মূল্য কম নির্ধারণ করেছেন তিনি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামানকে বারবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি। প্রতিবারই ফোনের লাইন কেটে দেন। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও জবাব মেলেনি।

 

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=73784&cat=6/