১৩ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৯

চট্টগ্রামে চালের বাজার বেসামাল

পাইকারিতে কিছুটা কমলেও কমেনি খুচরা বাজারে

চট্টগ্রামে চালের বাজার এখনো বেসামাল। বিশেষ করে গরীবের মোটা চালের দাম বেশি বেড়েছে। পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে হলেও খুচরা বাজারে কমেনি। বর্তমানে বাজারে মোটা চালের দাম সর্বনিম্ন ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। আমদানি কারকরা বলছেন, দেশে শুল্ক কমানোর ঘোষণায় মিয়ানমার ও ভারতের ব্যবসায়ীরা চালের টন প্রতি ৩৫ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেড়ে গেছে আমদানি ক্রয়মূল্য। ফলে চালের দাম প্রত্যাশা মত কমবে না। 

তবে ভারতীয় স্বর্ণা সিদ্ধ চালের প্রভাবে খুচরা বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল কেজিপ্রতি কয়েক টাকা কমলেও অন্য ক্যাটাগরির চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে দেশীয় নাজিরশাইল, জিরাশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ, বাসমতি সিদ্ধ, পাইজাম আতপ, কাটারীভোগ আতপ চালের দাম কমেছে বস্তাপ্রতি ১শ’ থেকে ১০শ’ ৫০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ট্রান ভান খাও বলেছেন, চলতি বছর বাংলাদেশ ভিয়েতনাম থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করবে। ইতোমধ্যে দু’দেশের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। খাদ্য মজুদ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভিয়েতনাম থেকে এ চাল আমদানি করছে।
গত ৬ জুলাই চট্টগ্রামে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)’র উদ্যোগে আয়োজিত ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত এ তথ্য প্রকাশ করেন। এদিকে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিয়ে চট্টগ্রামের আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে নিম্নমানের ভারতীয় ও মিয়ানমারের চাল (বেতি আতপ ও ইরি আতপ) আমদানির অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমার থেকে আসা ৫০ কেজি চালের বস্তা ১৭শ’ টাকা। আর কেজিপ্রতি দাম ৩৪ টাকা। তবে এসব চাল নিম্নমান হওয়ায় বাজারে চাহিদা কম। দেশীয় চালের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বাজারে দেশীয় চালের চাহিদা বেশি থাকলেও সংকট রয়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। এক বছর আগে এ চালের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৪ টাকা। বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৯ শতাংশ। মিনিকেট আতপ (পুরাতন) ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। এক বছর আগে দাম ছিল ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯.৫০ শতাংশ। মিনিকেট আতপ (নতুন) ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। এক বছর আগে এর দাম ছিল ৪০ থেকে ৫৫ টাকা। মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.১৩ শতাংশ।
চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, শুল্ককর কমিয়ে দেয়ার কারণে মানুষের মধ্যে ভীতি কেটে গেছে। এখন ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে চাল আমদানি করছে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে বড় বড় গ্রুপ অব কোম্পানীরা বেশি এলসি করেছে। গত এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল এসেছে। আরও ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল আসার পথে রয়েছে। এসব চাল পৌঁছলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া ভারত থেকেও সমপরিমাণ চাল আমদানি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ভারত থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন চাল আসছে। চালের দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। যেখানে দেশে বিপুল পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি রয়েছে সেখানে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কোন অস্তিত্ব নেই। খুচরা বাজারে চাল বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এখনো ডেলিভারি চাল যায়নি। এজন্য পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে কমেনি।
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভিয়েতনাম থেকে চাল আমদানির প্রথম চালানটি দু’একদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/87269/