১৩ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:২৫

বিবিধ প্রসঙ্গ

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখোমুখি

মাসুদ মজুমদার

স্মরণে পড়ে, অপারেশন কিন হার্ট শুরুর পর আমরা বলেছিলামÑ এটি পাপ। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা আইন, নীতিশাস্ত্র ও ধর্ম কোনোভাবেই মেনে নেয় না। অনেকে বলতেন ‘ভালো কাজ’। আমরা মন্তব্য করেছিলাম কোনো ভালো কাজ খারাপ পদ্ধতিতে হয় না। তখন অনেকেই একমত হতে পারেননি। বলেছিলাম, এই আপদ যখন নিজেদের ওপর এসে পড়বে, তখন টের পাবেন। আজ অনেকেই টের পাচ্ছেন। সেই পাপ এখন মহাপাপ হিসেবে গজবের মতো আপতিত হচ্ছে। প্রমাণটা এবার অন্যভাবে মিলিয়ে নিন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে অবৈধভাবে আটক করেছে। গোপন স্থানে তাদের আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতাও রয়েছেন। এই বক্তব্য আমাদের নয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের। সংস্থাটি অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ করে এসব অভিযোগের তদন্ত করা, নিখোঁজদের পরিবারের কাছে ব্যাখ্যা তুলে ধরার কথা বলেছে। একই সাথে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে গিয়ে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যদর্শীসহ এক শ’ জনের বেশি মানুষের সাাৎকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। প্রতিবেদনের সাথে পুলিশের কাছে করা অভিযোগ এবং অন্যান্য আইনি কাগজপত্রও রয়েছে। ৮২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ‘তিনি আমাদের কাছে নেই : বাংলাদেশে গোপন আটক আর গুম’, প্রতিবেদনে অন্তত ৯০ জনের তথ্য রয়েছে, যাদের ২০১৬ সালে গুম করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগকে এক সপ্তাহ বা এক মাস গোপন স্থানে আটকে রাখার পর আদালতে হাজির করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে তথ্য রয়েছে, এ রকম আটক ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে। ৯ জনের কোনো তথ্যই আর জানা যায়নি। এই ৯০ জনের তালিকায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া তিন বিরোধী নেতার তিন সন্তান রয়েছেন, যাদের একজন ছয় মাস পরে ফিরে এসেছেন। বাকি দু’জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এ রকম ৪৮ জনের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ পেয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেছেন, ‘নিখোঁজের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকলেও বাংলাদেশের সরকার এ বিষয়ে আইনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না’। ‘মানুষকে আটক করে তারা দোষী না নির্দোষ তা নির্ণয় করা, শাস্তি নির্ধারণ করা, এমনকি তারা বেঁচে থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার মতাও যেন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেয়া হয়েছে।’ এসব গুমের ঘটনায় র্যাব এবং ডিবির বিরুদ্ধে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে মতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
সবার স্মরণে থাকার কথা, ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি আদনান চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যান র্যাবের সদস্যরা। তার বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী মানবাধিকার সংস্থাটিকে বলেছেন, তাদের বলা হয়েছিল, পরদিন র্যাব সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেবেন। ‘তারা বললেন, আমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছি, আমরাই আবার তাকে ফেরত দিয়ে যাবো। কিন্তু তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের পরিবারের কাছে একজন জ্যেষ্ঠ র্যাব কর্মকর্তা গোপনে জানিয়েছেন, সুমনসহ আরো পাঁচজন তার হেফাজতে ছিল। কিন্তু তিনি তাদের হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর অন্য র্যাব কর্মকর্তারা তাদের নিয়ে যান। তার ধারণা, এই ছয়জনের কেউ বেঁচে নেই। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের আটকের ঘটনা সব সময় অস্বীকার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারি কর্মকর্তারাও তাদের এই দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছেন। বরং কখনো কখনো উল্টো বলা হয়, এসব ব্যক্তি নিজেরাই লুকিয়ে রয়েছেন।
সংস্থাটির মতে, গুমের ঘটনা ছাড়াও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের গোপন বন্দিশালায় আটক ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঘটনাও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বন্দুকযুদ্ধের পর তারা সেখানে লাশ পেয়েছে। একজন বাবা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, পুলিশ মিথ্যা বলছে, ‘‘পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যার পর সেটিকে বৈধতা দেয়ার জন্য ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নাটক সাজিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মন্তব্য করেছে, এ ধরনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও গ্রহণ করে না পুলিশ।’’
সংস্থাটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু এগুলোর সবই অব্যাহত আছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে অন্তত ৩২০ জনকে গুম করার ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে এবং উগ্রবাদে জড়িত ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও রয়েছেন।
গোপনে আটক ও হত্যার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে সংস্থাটি সরকারকে কিছু সুপারিশ বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করেছে : তার মধ্যে ঘটনা ও অভিযোগের তদন্ত, সংস্কার, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য জবাবদিহিতার কথা বলা আছে।
অথচ বাংলাদেশে গুম নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এই প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ করেছে, তা সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছিলাম, তখন এ সংগঠনটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তারা তখন বলেছিল যে, বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। দেশে যা ঘটেনি বিভিন্ন সময়ে সেসব নিয়েও তারা মন্তব্য করেছে। সে জন্য তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে, আমরা তা অ্যাকসেপ্ট করছি না।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অভিযোগ অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘‘তাদের এই প্রতিবেদন আমরা মেনে নিতে পারছি না। মানুষ গুম বিভিন্ন কারণে হয়। ব্যবসায়িক কারণেও অনেক সময় হয়। এমন অনেক গুমের ঘটনা আমাদের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। কখনো বা বড় বড় অপরাধী যখন দেখে, পাপের ভার এমনই হয়ে গেছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার খোঁজ শুরু করেছে, সেই সময় সে আত্মগোপনে যায়। এগুলো যদি গুম বলতে হয় তাহলে ‘গুমের’ সংজ্ঞাই পরিবর্তন করতে হবে। গুমের যে খবর আছে, এর বেশির ভাগই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজে বের করেছে। যারা ব্যবসায়িক কারণে গুম হয়েছেন, আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী তাদের খুঁজে বের করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাদের ধরেছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এর ব্যত্যয় কেউ ঘটিয়েছে বলে আমার নলেজে নেই। মাঝে মধ্যে ‘অতি উৎসাহী হয়ে ‘দু-একটি ঘটনা’ যারা ঘটিয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।’’
তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তথ্য খণ্ডনের চেয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য প্রাধান্য পাওয়ায় আমরা বিব্রত ও বিচলিত। এটি একটি গতানুগতিক নিয়ম। সরকার অস্বীকার করলেও জনগণ অস্বীকার করে না। এ ক্ষেত্রে দেশবাসীর জন্য আরো কষ্টের কারণ হলো, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সংস্থাটি জবাবি বক্তব্য দিয়ে আমাদের দায়িত্বশীলতা ও রাজনৈতিক সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিয়েছে।
গুম ও গোপন আটকের ঘটনার তদন্তের পরিবর্তে বাংলাদেশ কর্তৃপ অর্থাৎ সরকার ঢালাওভাবে এসব ঘটনার রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গুম, গোপন আটক ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ৫ জুলাই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে। এরপর বাংলাদেশ সরকার যে জবাব দিয়েছে, তার পাল্টা জবাবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকেÑ ‘নো, বাংলাদেশ, দ্য ট্রুথ ইজ নট এ স্মিয়ার ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক রিপোর্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দণি এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মীনাী গাঙ্গুলি জবাবি বক্তব্যে লিখেছেন, বাংলাদেশে গোপন আটক ও গুম নিয়ে ৮২ পৃষ্ঠার রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ রিপোর্টকে ‘স্মিয়ার ক্যাম্পেইন’ বা মিথ্যা প্রচারণা বলে দাবি করেছেন। যেসব পরিবার তাদের নিখোঁজ স্বজনের সন্ধান বা সে বিষয়ে উত্তর পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন, তা কঠিনভাবে উপো করে তিনি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেছেন, কাকে আপনি গুম বলবেন? অনেক ব্যবসায়ী তাদের ঋণ ফাঁকি দিতে আত্মগোপন করেছেন। অনেক মানুষ বিচারবহির্ভূত অবস্থায় নিখোঁজ রয়েছেন।
মীনাী গাঙ্গুলি আরো লিখেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সেই মানুষকে নিখোঁজ ব্যক্তি (ডিজঅ্যাপিয়ার্ড পারসন) বলা হয় যাকে রাষ্ট্রের কোনো এজেন্ট আটকে রাখে অথবা সর্বশেষ তাকে দেখা গেছে যে, স্বাধীনতাবঞ্চিত করে তাকে রাখা হয়, অথবা তিনি কোথায় আছেন তা জানা যায় না। এমন অবস্থায় তাকে এমন স্থানে আটকে রাখা হয় যেখানে তাকে আইন দিয়ে সুরা দেয়া হয় না। মীনাী গাঙ্গুলির মতে, ২০১৩ সাল থেকে কয়েক শত মানুষকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপ। এর মধ্যে রয়েছেন বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী। তাদের অনেককে আটকে রাখা হয়েছে গোপন স্থানে। এ েেত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বেশ কিছু ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছে প্রত্যদর্শী ও তার পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে। তারা সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন এবং দেখেছেন, এসব লোককে তুলে নিয়ে গেছে নিরাপত্তাবিষয়ক বাহিনীর সদস্যরা। তারা তাদের পরিচয় দিয়েছেন র্যাব, ডিবি অথবা প্রশাসনের সদস্য হিসেবে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এসব ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি।
মীনাী গাঙ্গুলি আরো লিখেছেন, এসব ঘটনার তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, তার সরকার এ রিপোর্ট পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করবে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধানের পদে বসে তিনি দাবি করেছেন, গুম নিয়ে কখনো প্রশ্ন তোলেনি জাতিসঙ্ঘ। প্রকৃতপে এসব নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে মন্তব্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সে থেকে বারবার যে ‘কোয়ারি’ পাঠানো হয়েছে, তা অবজ্ঞা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
মীনাী গাঙ্গুলি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন তিনি বারবারই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি হাইলাইট করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি মতায় গেলে এগুলো বন্ধ করবেন। এখন তার সরকারের পর্যায়ক্রমিক দ্বিতীয় মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার পূর্বসূরিদের মতো শুধু প্রতিধ্বনিই তুলছে না, একই সাথে নিরাপত্তা রাকারীরা গোপনে আটক করে যাচ্ছে; রাজনৈতিক বিরোধী প ও সমালোচকদের গুম করে দিচ্ছে। সরকারদলীয় নেতা হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ পপাতদুষ্ট। তবে এর আগে বিরোধী দলের সহিংসতা ও যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানোর বিষয়টি তিনি অবজ্ঞা করেছেন। আসলে বাংলাদেশ এর চেয়ে ভালো কিছু করতে পারে এবং তাদের তা করা উচিত। এরপর মীনাক্ষী গাঙ্গুলিকে কিভাবে জবাব দেয়া হবে, আমাদের জানা নেই। তবে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ দিলেই বোধ করি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভালো করতেন, তাতে লজ্জাও লজ্জা পেত না।
আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, কোনো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাই হাওয়াই বক্তব্য দেয় না। তার কোন কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেনÑ সেটা তাদের ব্যাপার। গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে সংস্থাটি বাড়াবাড়ি করেছে বলে আমাদের মনে হয় না। কারণ দিনের পর দিন আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমর্যাদা রক্ষায় ইতিবাচক পরামর্শ দিয়েছি। সরকার কখনো এ ব্যাপারে সাধুবাদ পাওয়ার মতো ভূমিকা পালন করেনি। এখনো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবজ্ঞা করা যাবে, কিন্তু দেশের জনগণের চোখে ধুলা দেয়া যাবে না। মানুষের ওপর জুলুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়ন এমন এক পাপ, যা বিধাতা ক্ষমা করেন না। করবেন না। জনগণও সরকারের বিরুদ্ধে যেসব কারণে বিগড়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে গুম, অপহরণ ও ক্রসফায়ারের পক্ষে সাফাইও একটি বড় কারণ।
masud2151@gmail.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/235209